ব্যালন ডি’অরে ত্রিশের মধ্যে নেই কোপাজয়ী মেসি!

ক্রীড়া ডেস্ক

কোপা জয়ের বছরে ব্যালন ডি’অরে নেই মেসি ছবি: এপি

লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বর্ণিল অধ্যায়ের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। ২০০৩ সালের পর এবারই প্রথম ব্যালন ডি’অর পুরস্কারে দুজনের কেউই নেই!

গত ১৬ বছরের মধ্যে ১৩ বারই ব্যালন ডি’অর ট্রফিটা হাতে নিয়েছেন মেসি ও রোনালদো। এর মধ্যে মেসি আটবার ও রোনালদো পাঁচবার বিশ্বজয়ের হাসি হেসেছেন। তবে এখন দুজন এমন জায়গায় চলে গেলেন, যেখান থেকে আর কামব্যাক করাটা দুরূহ, হয়তো অসম্ভব। তাদের কেউ হয়তো আর ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ ব্যক্তিগত ট্রফিটা হাতে নেবেন না। দুজনের অনুপস্থিতি থেকে অনেকেই একটি সোনালি যুগের সমাপ্তি দেখে ফেলেছেন। 

৩০ জনের তালিকায় দুই মহাতারকার একজনকেও রাখা হয়নি। ২১ বছরের আধিপত্য শেষে এবার মিলেছে তরুণদের জয়জয়কার। আগামী ২৮ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হবে ফুটবলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ বর্ষসেরার পুরস্কার। 

গত বছরের ১ আগস্ট থেকে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে প্রকাশ করা হয় ব্যালন ডি’অরের তালিকা। এ সময়ের মধ্যে মেসি জিতেছেন কোপা আমেরিকা ও ইন্টার মিয়ামির হয়ে লিগ কাপ। অন্যদিকে, রোনালদো জাতীয় দলের হয়ে কোনো কিছু না জিতলেও আল নাসরের হয়ে আরব ক্লাব চ্যাম্পিয়ন্স কাপ জিতেছেন। তবে তালিকায় জায়গা পাওয়া খেলোয়াড়দের বেশির ভাগই ইউরোপীয় লিগ ও টুর্নামেন্টগুলোয় বাজিমাত করেছেন। কেউ কেউ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরো কিংবা লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মতো টুর্নামেন্টগুলোয় দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন।

এরপরও তালিকার ৪০-এ মেসির না থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ৩৭ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড দেখিয়েছেন, গত ১২ মাসে ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, বয়সটা ৩৭ হয়ে গেলেও এখনো তিনি ব্যবধান গড়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। 

দেশ ও ক্লাবের হয়ে সাফল্য পাওয়ার পরও ৩০ জনের তালিকায় মেসির স্থান না পাওয়ার কারণ হিসেবে ইউরোপ ছেড়ে ইন্টার মিয়ামিতে নাম লেখানোকেই দায়ী করছেন গোল ডটকমের জেমস ওয়েস্টউড। তিনি বলেছেন, মেজর লিগ সকারকে ইউরোপে শীর্ষ পাঁচ লিগের তুলনায় অনেক নিচের সারির মনে করা হয়। তাই ব্যালন ডি’অরের জন্য মেসিকে বিবেচনা করেনি পুরস্কারের আয়োজক ফ্রান্স ফুটবল। তবে মেসির ফুটবলীয় ক্ষমতা তো আর চলে যায়নি। তাই বলা যায়, তিনি ইউরোপিয়ান পক্ষপাতের শিকার হয়েছেন। যদিও সুন্দর এ ফুটবলকে আরো সুন্দর করে তোলা মহাতারকাকে এখনই বাতিলের খাতায় ফেলাটা সমীচীন হয়নি। 

রোনালদো এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন ২০২৩ সালে। ম্যানইউর সঙ্গে সংকট তৈরি হলে তিনি সৌদি আরবের আল নাসরে নাম লেখান। সেই ট্রান্সফারের পরই ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েন সিআরসেভেন, যা ১৯ বছরের মধ্যে প্রথমবার ঘটেছে। দুজনের ক্ষেত্রে তফাৎ হলো রোনালদো ওই সময় বড় কিছু জেতেননি, খারাপ করেছেন ২০২২ সালের বিশ্বকাপে। আর মেসি সদ্যই কোপা আমেরিকা শিরোপা জিতেছেন আর্জেন্টিনার হয়ে। 

সর্বশেষ কোপার সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন মেসি। তিনি গোলের সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করেছেন (সাতটি)। আর ১৪টি পাস দিয়ে ছিলেন দুইয়ে। ওই সময়ের মধ্যে ইন্টারের হয়ে ২৯ ম্যাচে ২৫ গোল করেছেন তিনি। চোটে ভুগলেও ডেভিড বেকহ্যামের ক্লাবের প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তিনি। এ পরিসংখ্যানই মেসিকে ব্যালন ডি’অরের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখার জন্য যথেষ্ট।  

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, রদ্রি কিংবা জুড বেলিংহামের মধ্যে কেউ একজন হয়তো এবার ব্যালন ডি’অর জিতে যাবেন। তবে ৩০ জনের তালিকায় থাকা অন্তত সাতজন আছেন যারা মেসির জন্য অনায়াসে জায়গা ছেড়ে দিতে পারেন। 

ব্যালন ডি’অরের জন্য ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা

জুড বেলিংহাম (রিয়াল মাদ্রিদ), রুবেন দিয়াস (ম্যানসিটি), ফিল ফোডেন (ম্যানসিটি), ফেদেরিকো ভালভার্দে (রিয়াল মাদ্রিদ), এমিলিয়ানো মার্তিনেজ (অ্যাস্টন ভিলা), আর্লিং হালান্ড (ম্যানসিটি), নিকো উইলিয়ামস (বিলবাও), গ্রানিত শাকা (লেভারকুসেন), আর্তেম দোভিক (জিরোনা/রোমা), টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ), ভিনিসিয়ুস (রিয়াল মাদ্রিদ), দানি ওলমো (লাইপজিগ/বার্সেলোনা), ফ্লোরিয়ান ভিরৎজ (লেভারকুসেন), মার্টিন ওডেগার্ড (আর্সেনাল), মাটস হুমেলস (ডর্টমুন্ড), রদ্রি (ম্যানসিটি), হ্যারি কেন (বায়ার্ন), ডিকলান রাইস (আর্সেনাল), ভিতিনিয়া (পিএসজি), কোল পালমার (ম্যানসিটি/চেলসি), দানি কারভাহাল (রিয়াল মাদ্রিদ), লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা), বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল), হাকান কালহানোগলু (ইন্টার মিলান), উইলিয়াম সালিবা (আর্সেনাল), কিলিয়ান এমবাপ্পে (পিএসজি/রিয়াল মাদ্রিদ), লাউতারো মার্টিনেজ (ইন্টার মিলান), অ্যাডেমোলা লুকম্যান (আতালান্তা), আন্তোনিও রুডিগার (রিয়াল মাদ্রিদ), আলেক্স গ্রিমালদো (লেভারকুসেন)।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন