ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের নতুন রাষ্ট্র গড়ে উঠবে

ছবি : বণিক বার্তা

অন্তর্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সমন্বয়ের জন্য গঠন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটি। ছয় সদস্যবিশিষ্ট লিয়াজোঁ কমিটিতে রয়েছেন মামুন আব্দুল্লাহিল ও আরিফুল ইসলাম আদীব। কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী দেশের চলমান পরিস্থিতিতে করণীয় এবং কমিটির কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেন বণিক বার্তায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিদিন ইব্রাহিম ও আনিসুর রহমান

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন কীভাবে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ রূপ নিল?

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাম দেয়ার মাধ্যমে আমরা যেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি, তা হলো এর আগে কোটা সংস্কার দাবিতে ২০১৮ সালে একটি আন্দোলন হয়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজনৈতিক চেতনা হলো, এটা যেন স্রেফ অধিকারভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনে সীমিত না থাকে। এ আন্দোলন যেন ধাপে ধাপে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কাঠামোগত বৈষম্য দূর করতে পারে। যাতে শুধু কোটা সংস্কারের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে, সব বৈষম্য নিয়ে কথা বলার সুযোগ থাকে। সুতরাং শুধু কোটাবৈষম্য নয়, সব বৈষম্য দূর করার লক্ষ্য সামনে রেখেই এ আন্দোলনের নাম দেয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। 

৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গত কয়েক সপ্তাহে লিয়াজোঁ কমিটির কাজ কী ছিল এবং এ সময়ে কতটুকু সফল হতে পেরেছেন?

লিয়াজোঁ কমিটি আনুষ্ঠানিকভাবে গঠন হয়েছে ৬ আগস্ট; কিন্তু এর সদস্যদের প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ জায়গা থেকে ছয়-সাত বছর ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামসহ নানা তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সুতরাং হুট করে ছয়জনকে এখানে যুক্ত করা হয়েছে—বিষয়টি এমন নয়। প্রতেকের একটি দীর্ঘ পথচলা রয়েছে এবং তাদের অবদানের কথা বিবেচনা করে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। 

এবার যদি লিয়াজোঁ কমিটির কাজের কথা বলি। আমাদের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী, আমরা নবগঠিত সরকার এবং ছাত্র-জনতার মাঝে সমন্বয় করব। এই কমিটির কাজ হলো গণ-অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধারণকারী নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও প্রত্যাশাগুলো সরকারের কাছে নিয়ে যাওয়া। আবার জনগণের ইচ্ছা-অভিপ্রায় অনুযায়ী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন কিনা তা দেখা, পর্যালোচনা ও তদারকি করা। অর্থাৎ ওয়াচডগ হিসেবে কাজ করা। এরই অংশ হিসেবে সরকার গঠনের সময় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে লিয়াজোঁ কমিটির আলোচনা হয়। কেবিনেট গঠনের সময় এই কমিটির পরামর্শ নেয়া হয়। বর্তমানে আমরা সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট নাগরিকসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের রাষ্ট্রভাবনা জানতে চাচ্ছি। তারা কেমন রাষ্ট্র চান; তার ভিত্তিতে আমরা ন্যাশনাল কনভেনশনের দিকে যাব। এর আগে প্রত্যেকের পরামর্শ শুনব। অর্থাৎ আমরা এখন রাষ্ট্রের রূপান্তরের কাজ করে যাচ্ছি। 

অনেক রক্ত আর ত্যাগের বিনিময়ে গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নতুন বিজয় এসেছে। মানুষের অসীম প্রত্যাশা পূরণে কীভাবে কাজ করছেন? 

ছাত্র-জনতার এ সংগ্রামে ৮১৯ জন মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ হয়েছে, ৫০ হাজারেরও অধিক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে এক ভাইয়ের একটি হাত কেটে ফেলা হয়েছে, সে আরেকটি হাত দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে চাচ্ছেন। এ রকম অসংখ্য ভাইয়ের দেশপ্রেম দেখে মনে হয়, আমরা মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব। প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব শুধু আমাদের একার নয়; এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, সাংবাদিক, ফেরিওয়ালা, রিকশাওয়ালাসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের। প্রত্যাশাও আমাদের সবার, পূরণের দায়িত্বও আমাদের সবারই। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের প্রত্যাশার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। 

গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেয়া ছাত্র-জনতা একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাচ্ছেন। এ প্রত্যাশা কীভাবে পূরণ করবেন? চরিত্র ও আদর্শ কেমন হবে?

রাষ্ট্রের শাসক শ্রেণী কী চায়—এটা বড় কথা নয়। রাষ্ট্রের মালিক হিসেবে এ দেশের মানুষ কী চায় সেটা বড় কথা। এজন্য আমরা মানুষের দ্বারে দ্বারে চলে যেতে চাচ্ছি। তাদের রাষ্ট্রভাবনা জানতে চাচ্ছি। কারণ জনতাই এ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র। এ মুভমেন্টকে রক্ষা এবং সফল করার দায়িত্বও গণমানুষের। গণমানুষ কেমন চরিত্রের রাষ্ট্র চায় তা জানতে হবে। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জনগণই নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। আমরা লিয়াজোঁ কমিটি আসলে কোনো ভাবাদর্শিক বা মতাদর্শিক রাষ্ট্র চাপিয়ে দেয়ার পক্ষে নই। সুতরাং আমাদের বর্তমান কাজ মানুষের কথা শুনে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, ন্যাশনাল কনভেনশন করব, যেখানে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছবে, সে অনুযায়ী নতুন রাষ্ট্রের দিকে অগ্রসর হতে চাই। 

মানুষ ১৫ বছর ধরে গড়ে ওঠা ব্যবস্থা নিয়ে হতাশ। সেই ব্যবস্থা পরিবর্তনে কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?

প্রথমত, আমাদের সংবিধান নিয়ে কাজ করতে হবে। কেননা এ সংবিধান ফ্যাসিজমকে গড়ে ওঠার সব উপাদান ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ অনুচ্ছেদ ৭০-এর কথা বলা যেতে পারে। একজন জনপ্রতিনিধি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সত্যটা বলতে পারেন না। আবার রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা একদমই কম। সব ক্ষমতা সরকারপ্রধানের। ফলে যারাই ক্ষমতায় আসেন, এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে সবকিছু আবর্তিত হয়। তাই সংবিধানের সংস্কার দরকার। এজন্য প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। গণপরিষদের অধিবেশন ডেকে পুরো সংবিধানকে ঢেলে সাজাতে হবে, নয়তো দ্রুত কিছু সংশোধনী আনতে হবে। এ পুরো বিষয়টি আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে, এখনো চূড়ান্ত হয়নি। 

নতুন ব্যবস্থায় কোন কোন জিনিসে অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি বলে মনে করেন?

আমাদের বিশালাকার তরুণ জনগোষ্ঠীকে সম্পদে পরিণত করতে শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে মনোযোগ দেয়া জরুরি মনে করি। আমাদের জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা জনবান্ধব হয়ে ওঠেনি। স্বাস্থ্য খাতকে ঢেলে সাজানোর সুযোগ রয়েছে। গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মতো পরিষেবা খাত স্রেফ মুনাফামুখী না হয়ে সেবামুখী খাত হতে হবে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে লুটপাটের মাধ্যমে যেভাবে অলিগার্ক তোষণ করা হয়েছে সে বন্দোবস্ত ভেঙে দিতে হবে। লাগামহীন ব্যক্তি খাত ও সিন্ডিকেটের রাশ টেনে ধরতে হবে, একই সঙ্গে যাতে প্রতিযোগিতামূলক ব্যক্তি খাত গড়ে ওঠে সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় পরিবর্তনের পাশাপাশি সামাজিক পরিসরেও পরিবর্তন আনতে হবে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-মত-পথ নির্বিশেষে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সবাই সমান মর্যাদালাভের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। 

শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ নিজেদের দাবি আদায়ে রাস্তায় নেমে আসছেন। এমন পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবেলা করছেন?

বিষয়টি আমরা দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছি। প্রথমত, গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট রেজিম প্রত্যেক খাতের মানুষকে অত্যাচার-নির্যাতন ও নিপীড়ন করেছে। মানুষের অধিকার হরণ করেছে। শুধু গুটিকয়েক দোসরকে সুবিধা দিয়েছে। ফলে রাষ্ট্রে প্রায় প্রতিটি সেক্টরের অধিকাংশ মানুষ অধিকারহারা। তাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার পর বৈষম্যের শিকার হওয়া মানুষ তাদের দাবি তুলে ধরছেন। আমরাও চেষ্টা করি তাদের দাবি-দাওয়ার কথা শুনতে। আগে মানুষ প্রতিবাদ করতে পারত না। তাদের কণ্ঠ রোধ করা হতো। কিন্তু মানুষ এখন কথার সুযোগ পেয়েছে। তারা প্রতিবাদ করতে চায়। গণতান্ত্রিক দেশে তাদের কথা বলার অধিকার থাকবে। এটাই স্বাভাবিক। 

দ্বিতীয়ত, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রধান পদত্যাগ করলেও তার দোসররা এখনো বিভিন্ন খাতে রয়ে গেছে। তারা কোথাও কোথাও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তাই আমরা লক্ষ রাখব জনতার দাবিগুলো কীভাবে পূরণ করা যায় এবং তাদের এ অসন্তোষকে পুঁজি করে কেউ ফ্যাসিবাদকে সুবিধা দিচ্ছে কিনা। আমরা সেভাবেই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি এবং মোকাবেলার চেষ্টা করছি। 

পুরনো প্রশাসনের গুটি কয়েক লোককে সরিয়ে দেয়া হয়েছে; তবে এখনো অনেকে রয়ে গেছে। সারা দেশের স্থানীয় সরকারে এখন শূন্যতা বিরাজ করছে। এ বিষয়ে আপনাদের ভাবনা কী?

একটি রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোর সবাইকে ফেলে দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সম্ভব নয়। তাই একটু সময় লাগছে। আবার প্রশাসনিক কাঠামোর প্রধান ব্যক্তিকে সরালেও তার পরের বেশ কয়েকজন একই মতের অনুসারী। তাই আমাদের সতর্কভাবে কাজ করতে হচ্ছে। 

স্থানীয় সরকারে মেয়র, চেয়ারম্যানদের সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো উপায় ছিল না। তারা মূলত বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে তারা স্থানীয় সরকারের দপ্তরগুলো ব্যবহার করে শোষণ করত। যদিও কিছু কিছু এলাকার জনপ্রতিনিধিরা ব্যতিক্রম ছিলেন। হাসিনার পতনের পর তাদের অধিকাংশ পালিয়েছে। তাই এ সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি ছিল। অচিরেই নির্বাচনের মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে। 

কেমন বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে চান? সেখানে শিক্ষা ও রাজনীতির পরিবেশ কেমন হওয়া চাই?

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতন্ত্রচর্চার পথ ক্রমেই রুদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা গবেষণার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতিতে একটা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে অতীতের সরকারগুলো ভাবত—যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়, তাহলে নতুন নেতৃত্ব সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আসবে এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ করবে। ফলে কোনো সরকারই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে চায়নি। এতে দেশে নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। তাই আমরা এমন বিশ্ববিদ্যালয় চাই যেখানে দলীয় ক্যাডার থাকবে না। গেস্টরুম, গণরুম থাকবে না। শিক্ষার্থীদের অত্যাচার-নির্যাতন করা হবে না। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্থিতিশীলতা ফেরা মাত্র ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেয়ার চেষ্টা করা হবে। একই সঙ্গে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজনীতি নিয়েও আমরা চিন্তাভাবনা করছি। তাদের প্রচলিত রাজনৈতিক সংস্কৃতি উন্নত করার চিন্তা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে তাদের সঙ্গে টেবিল টকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ঘুস ও দুর্নীতি, সরকারি কাজে হয়রানি বন্ধসহ মানুষের বিভিন্ন প্রত্যাশা রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি—এ দুই কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। আবার ডলার সংকটের কারণেও এমনটি হতে পারে। ফলে সবদিকেই আমরা খেয়াল রাখছি। অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীরা বাজার মনিটরিং করছে। আবার ভোক্তা অধিকারের দায়িত্বশীলরাও আগের চেয়ে বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। যদিও অধিদপ্তরটিতে আগের ব্যক্তিরাই কাজ করছেন। তবুও এসবের মাধ্যমে কিছুটা বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে। কিন্তু স্থায়ীভাবে স্থিতিশীলতা আনা ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে একটি স্বাধীন কমিশন গঠনের চিন্তা করা হচ্ছে। 

বিদ্যমান পররাষ্ট্রনীতিতে আমাদের দেশের চেয়ে অন্য দেশের স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে। পররাষ্ট্রনীতি নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করার পরিকল্পনা রয়েছে কি? 

বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামোয় জনগণ একটা শক্তি। সেই শক্তি প্রয়োগের সক্ষমতাকে ভোটাধিকার হরণের মাধ্যমে যখন কবর দেয়া হয়েছে তখন সরকারকে বহিঃশক্তির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। সেই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হয়েছে একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। গণজোয়ার একটি নতুন বাংলাদেশ চায়। কেননা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের শক্তির স্ফুরণ ঘটেছে। এর মাধ্যমে এরই মধ্যে জনগণ বহিঃশক্তির চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে এসেছে। গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী সরকার ভারতের সঙ্গে অসংখ্য অসম চুক্তি বাস্তবায়ন করেছে যেগুলোয় বাংলাদেশের স্বার্থ মোটেও রক্ষিত হয় না। ভারত সম্প্রতি পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই বন্যার পানি ছেড়ে দিয়েছে। পলাতক প্রধানমন্ত্রীকে আশ্রয় দিয়েছে। সামগ্রিক দিক বিবেচনায় নতুন বাংলাদেশে পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন সময়ের দাবি। 

জনতার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চান আপনারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। যদি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, তাহলে সে দলের চরিত্র ও কর্মপন্থা কেমন হবে? 

আমরা এরই মধ্যে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বসেছি। সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে বসার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকেরই প্রত্যাশা, এটি একটি নতুন শক্তি হিসেবে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হোক। জনপ্রতিনিধিত্বমূলক একটি প্লাটফর্ম হিসেবে দাঁড়াক। জনগণের কথা বলুক। একই সঙ্গে ছাত্রদের একটি কাঠামো আছে যাদের নেতৃত্বে এ গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। যেহেতু আমাদের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো দীর্ঘ ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য আন্দোলন করেছে। কিন্তু তাদের কলাকৌশলের কারণে হয়তো সফল হয়নি। একই সঙ্গে আমরা যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, একক কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে এ সরকারকে নামানো সম্ভব ছিল না। আমাদের এ আন্দোলনে দলমত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করেছে। 

প্রত্যেকেরই তো রাজনৈতিক আদর্শ আছে কিন্তু আমরা চাই একটি মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ, যা এ দেশের মানুষ গত ৫৩ বছরেও পায়নি। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ধর্ষিত হলে সারা দেশ যেভাবে বিক্ষোভ করে, একজন গার্মেন্টস কর্মী মারা গেলে ততটা আলোচনা সৃষ্টি হয় না। তার অর্থ, আমরা সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঘটা অন্যায় নিয়ে একইভাবে সোচ্চার নই। সুতরাং আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য নিরাপদ এবং সবার রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। একই সঙ্গে মানুষের সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সব মিলিয়ে মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের নতুন বাংলাদেশের নির্মাণের কাজ করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন