কক্সবাজারে পাহাড়ধসে দুই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু

টানা বৃষ্টিতে ডুবেছে শহরও, পানিবন্দি ২৫ হাজার পর্যটক

বণিক বার্তা ডেস্ক

পাহাড় ধসে গতকাল চকরিয়ার আজিজনগরে রেলপথটি মাটিতে ঢেকে যায় ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে কক্সবাজারে দুই পরিবারের ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মা ও দুই শিশুসন্তানের মৃত্যু হয় সদরের ঝিলংজা এলাকায়। বাকি তিনজনের মৃত্যু হয় উখিয়ার একটি রোহিঙ্গা শিবিরে। 

এদিকে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্নাঞ্চল। পানি উঠেছে কক্সবাজার শহরেও। বিশেষ করে সৈকত এলাকার হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজে প্রায় ২৫ হাজার পর্যটক আটকা পড়েছেন। 

ঝিলংজার ডিককূল এলাকার অবস্থান কক্সবাজারের শহরতলিতে। সেখানে পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে। নিহতরা হলেন দক্ষিণ ডিককূলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি এবং তাদের দুই শিশুসন্তান মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম।

ঝিলংজা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিজানুর রহমান সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ভারি বৃষ্টির মধ্যে মিজানুর রহমানের বাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এতে পরিবারের চারজনই মাটিচাপা পড়ে। তাদের মধ্যে শুধু মিজানুরকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন প্রতিবেশীরা।

উখিয়ায় পাহাড়ধসের ঘটনাটি ঘটে গতকাল ভোরে; ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে। সেখানে মারা যায় তিন সহোদর। তারা হলেন কবির আহমদের ছেলে আব্দুর রহিম, আব্দুল হাফিজ ও আব্দুল ওয়াহিদ। উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসাইন তাদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন জানান, হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়। ক‍্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভারি বৃষ্টি হয়। এর প্রভাবে গতকাল ভোরে ই-২ নম্বর ব্লকের বাসিন্দা কবির আহমেদের একটি ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এদিকে টানা বৃষ্টির কারণে জেলার নিম্নাঞ্চলের পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কক্সবাজার শহরও। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকসহ শহরবাসী।

সরজমিনে দেখা যায়, শহরের কলাতলী ডলফিন মোড় থেকে শুরু করে সুগন্ধা, লাবণী, বাজারঘাটা, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, গোলদীঘির পাড়, বার্মিজ মার্কেট ও টেকপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত পানি উঠেছে। কোথাও হাঁটু পানি, কোথাও আবার কোমর পানি। এছাড়া শহরের পার্শ্ববর্তী নিচু এলাকা সমিতি পাড়া, নাজিরারটেক ও কুতুবদিয়া পাড়ায় বন‍্যা দেখা দিয়েছে। সদরের ঝিলংজা, উপজেলা গেট, বাংলাবাজার, মোক্তারকুল, ডিককূল ও পিএমখালী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে।এছাড়া রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি, খুনিয়া পালং, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন, হ্নীলার রঙ্গিখালী, লেদা, হোয়াব্রাং ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং, জালিয়াপালং, রত্নাপালং, রাজাপালং ও পালংখালী ইউনিয়নের অন্তত ৪০ গ্রাম। এসব এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্যচাষীরাও। 

কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান গণমাধ্যমকে জানান, গতকাল পাঁচ শতাধিক হোটেলে অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক অলস বসে ছিলেন। ভারি বর্ষণের কারণে তারা হোটেল থেকে বেরোতে পারেননি। 

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। তবে ভারি বর্ষণ শুরু হয় দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে। এরপর রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টানা ১২ ঘণ্টা ভারি বর্ষণ হয়। এমন ভারি বর্ষণ গত কয়েক দশকে সেখানে দেখা যায়নি। আবহাওয়া অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান জানান, ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে টানা বৃষ্টিতে ঝুঁকিতে পড়েছে দোহাজারী-কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচল। পাহাড়ধসের কারণে এ রেলপথের অনেক অংশ মাটির নিচে চলে যায়। 

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের লোহাগাড়া-হারবাং স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানের পাহাড় ভেঙে রেলপথে এসে পড়ে। এতে উভয়মুখে চলাচলরত ট্রেনের যাতায়াত বিঘ্নিত হয়। রেললাইন থেকে মাটি সরানোর পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম-চট্টগ্রাম) মো. সাইফুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কক্সবাজার রেলপথের আজিজনগর এলাকায় পাহাড় ভেঙে রেলপথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় শ্রমিক ও প্রকৌশলীরা এসে রেলপথের মাটি সরিয়ে নেয়।’ 

দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সুবক্তগীন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজ এখনো শেষ হয়নি। পাহাড়ধসের খবর পেয়ে আমরা ওই এলাকা পরিদর্শন করেছি।’

প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক (চট্টগ্রাম ব্যুরো) ও কক্সবাজার প্রতিনিধি

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন