সিআরআই ও হোয়াইট বোর্ড

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও তার পরামর্শক পর্ষদ

বদরুল আলম ও শেখ তৌফিকুর রহমান

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ট্রাস্টি, সিআরআই ও প্রধান সম্পাদক, হোয়াইট বোর্ড

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব একজন সামাজিক গণতন্ত্রী ছিলেন, যিনি বাংলাদেশকে সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। তিনি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য ও বাসস্থানের মতো মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে উন্নত করার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তিনি “‍কাউকে পিছিয়ে না রাখো” ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আরো স্পষ্ট করেছিলেন যে বাংলাদেশ অন্য কোথাও থেকে কোনো মতবাদ আমদানি করবে না। অন্য কথায়, আমাদের নিজস্ব মতবাদ অনুসারে সবকিছু পরিচালিত হবে। এ সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বোঝার জন্য আপনাকে আমাদের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।’ 

শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছিল তার দল আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) প্রকাশনা বা ম্যাগাজিন ‘হোয়াইট বোর্ড’। তাতে উঠে আসে চারবার তার রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা, দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকাকালে আওয়ামী লীগের ইন্টেলেকচুয়াল ইনপুট দেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে সিআরআই। দলীয় এ থিংকট্যাংকটিতে শেখ পরিবারের সদস্যদেরই আধিক্য, যাদের হাত ধরে প্রকাশিত হতো নীতিবিষয়ক প্রকাশনা হোয়াইট বোর্ড।

দলীয় বিভিন্ন এজেন্ডা বাস্তবায়ন ও জনমত গঠনে ২০১০ সালে দৃশ্যমান ও সক্রিয় হতে শুরু করে সিআরআই। সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে প্রাসঙ্গিক থাকার চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক নীতিকৌশল ও পরামর্শ প্রদানকারী সংস্থাটি। এজন্য ২০১৪ সালে ‘ইয়াং বাংলা’র মতো অঙ্গপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। সিআরআইয়ের তত্ত্বাবধানে কয়েক বছর ধরে যুব উদ্যোক্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে চালু করা হয় ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’। একইভাবে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে হয়ে আসছিল ‘জয় বাংলা কনসার্ট’। 

তবে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিরোধী দলেরও বিভিন্ন কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে আসছিল সংস্থাটি। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির আগে বিরোধী মত দমনে অপপ্রচার, গুজব ও ভুয়া খবর ছড়ানোরও অভিযোগ রয়েছে সিআরআইয়ের বিরুদ্ধে। সে কারণে প্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট ৫০টি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও ৯৮টি পেজও বন্ধ করে দিয়েছে মেটা। আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মটি তখন জানিয়েছিল, এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা আওয়ামী লীগ ও সিআরআইয়ের সঙ্গে যুক্ত। 

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) জন্য করা এক প্রতিবেদনেও মেটার পক্ষ থেকে বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও সিআরআই-সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পেজ থেকে নিয়মিত বাংলা ও ইংরেজিতে পোস্ট দেয়া হতো। এর মধ্যে থাকত সংবাদ, সাম্প্রতিক ঘটনা, নির্বাচন, বিএনপির সমালোচনা, বিএনপির দুর্নীতির অভিযোগ ও নির্বাচন-পূর্ব সহিংসতায় বিএনপির ভূমিকার পাশাপাশি বর্তমান সরকারের পক্ষে মন্তব্যসহ নানা পোস্ট।

সিআরআইয়ের চেয়ারম্যান শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ভাইস চেয়ারম্যান। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আরো রয়েছেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। পরিবারটির বাইরে ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের মধ্যে আছেন সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। শেখ পরিবার ও দলের হয়ে গবেষণা সংস্থাটির সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছেন তন্ময় আহমেদ। 

শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ৭ মাস সরকারপ্রধান থাকাকালীন ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর যাত্রা করে সিআরআইয়ের ম্যাগাজিন ‍হোয়াইট বোর্ড। দেশের প্রথম পলিসি ম্যাগাজিন দাবি করা এ প্রকাশনাটি নীতিনির্ধারণী বিষয়ক নির্মোহ ও সার্বিক পর্যালোচনা করবে—উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এমন বার্তা উঠে আসে প্রধান সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের বক্তব্যে।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সিআরআইয়ের ট্রাস্টি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক বলেন, ‘‍এ ম্যাগাজিন নীতিনির্ধারক এবং তরুণদের জন্য বস্তুনিষ্ঠ ও স্পষ্ট বার্তা দেবে। দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের জন্য একটি অবস্থান তৈরি করছে হোয়াইট বোর্ড। পাশাপাশি বিদেশ থেকে বাংলাদেশের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষের জন্যও কাজ করে যাবে এটি।’ 

রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক সম্পর্কে হোয়াইট বোর্ডের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, তিনি একজন কৌলশগত পরামর্শক ও তরুণ আইনজীবী। রাজনৈতিক ইতিহাস প্রকল্প—‘গ্রাফিক নভেল মুজিব অ্যান্ড হাসিনা: এ ডটার’স টেল’ শীর্ষক ডকু ফিল্মের পৃষ্ঠপোষকও তিনি। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও সরকারি সংস্থার কৌশল ও যোগাযোগ বিষয়ে পরামর্শদাতা ববি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের স্নাতকোত্তর।

হোয়াইট বোর্ডের সম্পাদকীয় পরিষদে কো-এডিটরের দায়িত্বে রয়েছেন সৈয়দ মফিজ কামাল ও কপি এডিটর রুথ গ্রিফিথস। ম্যাগাজিনটির ওয়েবসাইটে পরামর্শক পর্ষদের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মোট ১০ জনকে। তাদের মধ্যে প্রথমেই আছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার ড. আতিউর গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়েরও নির্বাহী পরিচালক। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের সোয়াসে ডক্টরাল করা এ অর্থনীতিবিদের বিশেষত্ব হিসেবে টেকসই অর্থায়ন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও মুদ্রানীতির মতো বিষয়গুলোকে হোয়াইট বোর্ডে তুলে ধরা হয়েছে।

পর্ষদের আরেক সদস্য সৈয়দ আখতার মাহমুদের বিষয়ে হোয়াইট বোর্ড উল্লেখ করেছে, তিন দশক ধরে বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকে কাজ করেছেন এ অর্থনীতিবিদ। ২০০২ সালে বিশ্বব্যাংকের বেসরকারি খাত উন্নয়ন কৌশলের সহ-লেখকের ভূমিকায় থাকা আখতার মাহমুদ নিয়ন্ত্রণমূলক সংস্কার এবং সরকারি-বেসরকারি সংলাপে বৈশ্বিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার গবেষণার বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য, প্রতিযোগিতা, বিনিয়োগের পরিবেশ, নীতি সংস্কারের মেকানিক্স ও রাজনৈতিক অর্থনীতি। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরাল করা আখতার মাহমুদ ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন।

শেখ হাসিনার আমলে দেশের পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়নে বড় ভূমিকা রাখেন ২০১৩ সালে পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পাওয়া মো. শহীদুল হক। হোয়াইট বোর্ডেরও পরামর্শক পর্ষদের অন্যতম সদস্য তিনি। ২০১৯ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকায় থাকা শহীদুল হকের পরিচয় হিসেবে প্রকাশনাটির ওয়েবসাইটে প্রথমেই উল্লেখ রয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার। পররাষ্ট্র নীতি ও অভিবাসন বিশেষজ্ঞের দাবিদার এ কূটনীতিক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়েরও একজন সিনিয়র ফেলো। ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আইওএম) সাবেক এ পরিচালক অভিবাসন বিষয়ক বই ‘স্প্রিংগার ২০২০’-এর সহ-লেখক। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টিইউএফটিএস বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্লেচার স্কুল অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোম্যাসির একজন স্নাতকোত্তর।

হোয়াইট বোর্ডের পরামর্শক পর্ষদে রয়েছেন বাংলাদেশভিত্তিক বিশ্বখ্যাত বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক-সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি। তাদের একজন সামিয়া হক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব জেনারেল এডুকেশনের ডিন, একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য ও নৃতত্ত্বের অধ্যাপক। সেন্টার ফর পিসের এ রিসার্চ ফেলো জর্জটাউন ইউনিভার্সিটিতে ওয়ার্ল্ড ফেইথস ডেভেলপমেন্ট ডায়ালগের সঙ্গে সহযোগিতামূলক প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রগুলো হলো ধর্মনিরপেক্ষতা, মৌলবাদ, ধর্মীয় পুনরুজ্জীবন, সামাজিক আন্দোলন, লিঙ্গ সমস্যা ও গণতন্ত্র। তিনি ব্র্যান্ডেইস ইউনিভার্সিটি থেকে নৃবিজ্ঞানে পোস্ট ডক্টরাল করেন।

পরামর্শক পর্ষদের আরেক সদস্য সাজিয়া ওমর। ব্র্যাকের যোগাযোগ পরামর্শক হিসেবে কাজ করা সাজিয়া বিশ্বব্যাংকের একজন যোগাযোগ ও স্টেকহোল্ডার এনগেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউএনডিপি, আইওএম, আইএলও, আইএফসিরও যোগাযোগ পরামর্শদাতা ছিলেন। তিনি লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্স থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ হোয়াইট বোর্ডের পরামর্শক পর্ষদের সদস্য। তার পরিচিতি উপস্থাপনায় প্রকাশনা সংস্থাটি তাকে লেখক, প্রযুক্তিবিদ ও একজন সামাজিক উদ্যোক্তা হিসেবে উল্লেখ করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) কর্মসূচির একজন নীতি বিশেষজ্ঞ ছিলেন। গোল্ডম্যান স্যাক্সের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করা আসিফ আইবিএম, গ্ল্যাক্সো ওয়েলকাম ও নরটেলের জন্যও কাজ করেছেন। স্নাতক করেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টার্ন স্কুল অব বিজনেস থেকে। 

পরামর্শক পর্ষদের সদস্য প্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ইমপ্যাক্ট ইনভেস্টর খ্যাত সোনিয়া বশির কবির এসবিকে টেক ভেঞ্চারস এবং এসবিকে ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও সিইও। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য সোনিয়া ইউনেস্কোর মহাত্মা গান্ধী ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন অ্যান্ড পিসেরও বোর্ড সদস্য। তিনি মাইক্রোসফটের বাংলাদেশ, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান ও লাওস অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন সান্তা ক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে। 

বিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহাও হোয়াইট বোর্ডের পরামর্শক পর্ষদের একজন সদস্য। চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) এ পরিচালক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পোলিও ট্রানজিশন ইনডিপেনডেন্ট মনিটরিং বোর্ডেরও সদস্য। তার গবেষণার কেন্দ্রে রয়েছে শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য সংক্রামক রোগ। টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জেনেটিক্সে পোস্ট ডক্টরাল করা সেঁজুতি বাংলাদেশে এএআরএস-কভটু জিনোমের ডিকোডিংয়ের নেতৃত্ব দেন। 

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি কাজী আনিস আহমেদ হোয়াইট বোর্ডের সম্পাদকীয় পরামর্শক পর্ষদের সদস্য। সাহিত্যকেন্দ্রিক সম্মেলন ঢাকা লিটফেস্টের এ সহপরিচালক সাহিত্যিক, ব্লগার ও সাংবাদিকদের অন্যতম প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংগঠন পেন ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশ শাখারও সভাপতি। তিনি সাহিত্যে পোস্ট ডক্টরাল করেছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

পরামর্শক পর্ষদের সর্বশেষ সদস্য শেখ রেহানার ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক। তিনি টনি ব্লেয়ার ইনস্টিটিউট ফর গ্লোবাল চেঞ্জের একজন অ্যাডভোকেসি ও নীতি উপদেষ্টা। হোয়াইট বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেয়া পরিচিতি অনুযায়ী, আজমিনা সিদ্দিক একজন সমাজবিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা নীতি বিশেষজ্ঞ। তার গবেষণার ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে রাজনৈতিক ঝুঁকি ও চরমপন্থা মোকাবেলা। তিনি লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে নিরাপত্তা বিষয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। 

হোয়াইট বোর্ডের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এডিটরস নোট প্রকাশ করা হয়, যেখানে রাদওয়ান মুজিব লেখেন, ‘আমরা এখন কেন এ উদ্যোগ নিলাম? কারণ তরুণদের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ এখন দ্রুত উন্নতি করছে। আবার আছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ শক্তিশালী অর্থনৈতিক দেশের তালিকায় স্থান পেতে চায় বাংলাদেশ। কিন্তু আমাদের দেশে কী হচ্ছে, তার তথ্যনির্ভর কোনো বিশ্লেষণ নেই। সে কারণে হোয়াইট বোর্ডের যাত্রা শুরু। দেশে ও দেশের বাইরে থাকা শিক্ষার্থী ও তরুণ পেশাজীবী, নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীদের উদ্দেশে সার্বিক কার্যক্রম উপস্থাপন করবে হোয়াইট বোর্ড।’

রাদওয়ান মুজিব আরো লেখেন, ‘অর্থনীতি থেকে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা এবং টেকনোলজিক্যাল উদ্ভাবন থেকে তরুণদের কর্মসংস্থান—সবকিছু নিয়ে তথ্যনির্ভর বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা থাকবে হোয়াইট বোর্ডে। এ ম্যাগাজিনের প্রথম সংখ্যায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ার জন্য নেয়া নীতি ও পরিকল্পনা আলোচনা করা হয়েছে। ফলে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার পর তার প্রশাসনকে নিয়ে প্রচারিত ভ্রান্ত ধারণাগুলো দূর এবং সত্য প্রকাশিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ সব অর্জনের পাশে তার প্রশাসনিক কার্যক্রম বেশ ম্লান মনে হলেও সেগুলো সম্পর্কে বর্তমান নীতিনির্ধারক ও তরুণদের জানা প্রয়োজন।’

আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সিআরআইয়ের প্রধান কার্যালয়টি রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ২ নম্বর ভবনে অবস্থিত। এছাড়া ধানমন্ডিতে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয় ও ধানমন্ডি ৬/এ-তে আরো একটি কার্যালয় থেকে সিআরআইয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বঙ্গবন্ধু ভবন ও শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়সংলগ্ন অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়। 

সিআরআইয়ের তিনটি কার্যালয় গতকাল ঘুরে দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু ভবনসংলগ্ন ভস্মীভূত কার্যালয়টি বন্ধ রয়েছে। একই অবস্থা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়সংলগ্ন অফিসটিরও। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিআরআইয়ে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি জানান, এ প্রতিষ্ঠানটির লজিস্টিক সাপোর্ট আগুনে পুড়ে যাওয়ায় খুব শিগগিরই তা চালু করার সম্ভাবনা নেই। কবে নাগাদ এর কার্যক্রম শুরু হতে পারে সে বিষয়েও ধারণা নেই তাদের।


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন