সারা দেশে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পেল সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে ২০ জুলাই থেকে মোতায়েন রয়েছে সেনাবাহিনী ছবি: প্রতীকী/ফাইল

সারা দেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। ফৌজদারি কার্যবিধির আলোকে তাদের এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যা গতকাল থেকেই কার্যকর হয়েছে এবং বলবৎ থাকবে আগামী দুই মাস (৬০ দিন)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রেষণ-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রু স্বাক্ষরিত এ প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ (দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর ১৮৯৮)-এর ১২ (১) ও ১৭ ধারা অনুযায়ী সেনা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে অধিক্ষেত্র হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশ উল্লেখ করা হয়েছে। তারা কার্যবিধির ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫ (২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারায় বর্ণিত আইন ও অপরাধগুলোর ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হবেন।

ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে তারা অপরাধীকে গ্রেফতার করতে বা গ্রেফতারের নির্দেশ দিতে পারবেন। এসব ধারা অনুযায়ী সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থাও নিতে পারবেন। যেমন তল্লাশি পরোয়ানা জারি, অসদাচরণ ও ছোটখাটো অপরাধের জন্য মুচলেকা আদায়, মুচলেকা থেকে অব্যাহতি, বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ, স্থাবর সম্পত্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বাধা অপসারণ এবং জনগণের ক্ষতির আশঙ্কা করলে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণসহ বিভিন্ন ক্ষমতা পাবেন ম্যাজিস্ট্রেসির দায়িত্ব পাওয়া সেনা কর্মকর্তারা।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই থেকে কারফিউ জারি করা হয়। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ২৭ হাজার সেনা। প্রথম দুইদিন বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল থাকে। এরপর শিথিলের সময়সীমা একেক জেলায় একেক পরিমাণে বাড়ানো হয়। এর মধ্যেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পরে সে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে, বিক্ষোভ ও সহিংসতা বাড়তে থাকে। মাসব্যাপী এ আন্দোলন একপর্যায়ে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয়। পরে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান। 

সরকার পতনের পর দেশজুড়ে থানায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। আক্রমণের শিকার হন পুলিশ সদস্যরা। আগুন দেয়া হয় থানা ও পুলিশের স্থাপনায়। লুট করা হয় অস্ত্র ও গোলাবারুদ। এরপর থেকে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ রেখে কর্মবিরতিতে যায় পুলিশ। তাদের অনুপস্থিতিতে দেশজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটে। তখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে এতদিন তাদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের তিনদিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। নতুন সরকারের সময় কারফিউ না থাকলেও দেশজুড়ে সেনা মোতায়েন থাকে। ‍পুলিশের অনুপস্থিতিতে শুরুর দিকে থানায় থানায়ও দায়িত্ব পালন করেন সেনা সদস্যরা। পরে আন্দোলন শেষে পুলিশ কাজে ফিরলেও হারানো সেই মনোবল ফেরেনি। অনেক পুলিশ সদস্য এখনো কাজে যোগ দেননি। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। দেশে বর্তমানে কিছু কিছু এলাকায়, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলগুলোয় নাশকতা ও দেশে অস্থিতিশীলতার মতো কর্মকাণ্ড ঘটছে। এমন প্রেক্ষাপটেই সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারদের বিশেষ নির্বাহী ম্যাজেস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন