বগুড়ায় ১২ কোটি টাকার সবজি চারা বিক্রির লক্ষ্য কৃষকের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বগুড়া

ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

শীতকালীন সবজির চারা উৎপাদনে খ্যাতি রয়েছে বগুড়ার। মূলত ১৯৮৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চারা উৎপাদন শুরু হয় এ অঞ্চলে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ কোটি টাকার সবজির চারা বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মাঠে নেমেছেন কৃষক। এসব চারার মধ্যে রয়েছে মরিচ, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন ও পেঁপে। শাজাহানপুর উপজেলার শতাধিক উদ্যোক্তা লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কাজ করে যাচ্ছেন।

কৃষক বলছেন, শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রামের কৃষক সবজি চারা উৎপাদন করে নিজেদের স্বাবলম্বী করেছেন। শাহনগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতি গড়ে তুলেছেন। এ সমিতির মাধ্যমে সবজি চারা সরবরাহ করছেন উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিটি চারা সরবরাহ করেন ১-২ টাকা দরে। শাহনগরের কিছু যুবক সবজি চারা, ফুল, ফলের চারা তৈরি করে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করতেন। ধীরে ধীরে ওই যুবকরা বীজ কোম্পানির পরামর্শে সবজি বীজ উৎপাদন শুরু করেন। উৎপাদিত সবজি চারা সরবরাহ করেন বগুড়া, নাটোর, নওগাঁ, রাজশাহী, গাইবান্ধা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়। পরে গ্রামের যুবকরা শাহনগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতি গড়ে তোলেন। সমিতি ২০১৫ সালে গড়ে উঠলেও ১৯৮৫ সাল থেকে চারা উৎপাদন শুরু হয়।

সবজি চারা উৎপাদনকারারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাইব্রিড জাতের চারার বেশি চাহিদা রয়েছে। হাইব্রিড জাতের মরিচ চারা সবচেয়ে বেশি সরবরাহ করা হয়। চাষীরা প্রয়োজন মতো সবজির চারা নিতে বুকিং দেন। সে হিসাবে প্যাকেট তৈরি করে চারা সরবরাহ করা হয়। এক কেজি মরিচ বীজ থেকে দেড় লাখ চারা জন্মায়। এছাড়া টমাটো ২ লাখ, ফুলকপি ১ লাখ, বাঁধাকপি ১ লাখ ৩০-৪০ হাজার ও বেগুনের চারা উৎপাদন হয় ২ লাখ। এক বিঘা জমিতে মরিচ চাষের জন্য চারা উৎপাদন করতে পৃথক চারটি বেডে বীজ ছিটানো হয়। সার ও পানি সেচ আর যত্ন নিয়ে খরচ হয় ১৮-২০ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত চারা বিক্রি করা হয় ৪০-৪৫ হাজার টাকা।

সবজির চারা উৎপাদনকারী নাঈম নার্সারির মালিক লাল মিয়া জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভালোমানের চারা নিতে আসেন কৃষক। প্রতিটি চারা ১ থেকে দেড় টাকা পিস হিসেবে বিক্রি করেন। প্রতিদিন প্রায় ২০-৪০ হাজার টাকার চারা বিক্রি হয়। বছর শেষে এ অঞ্চলে ১১-১২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হয়।

মরিচের চারা কিনতে আসা আব্দুর রহমান জানান, তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে মরিচের চারা নিতে এসেছেন। প্রতি বছর শাহনগর থেকে মরিচ, টমেটো, ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা নিয়ে যান। ২ হাজার মরিচের চারা কিনেছেন ২ হাজার টাকা দিয়ে। তাদের এলাকার চারার চেয়ে এখানকার চারার গুণগতমান ভালো।

এদিকে, জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সাদুল্লাপুর, এনায়েতপুর, উত্তর শ্যামপুর, মাঝপাড়া, বাকসন, জামালপুর, বারুগারী, মেদিনীপাড়া, উথলী, নারায়ণপুর, রায়নগর, হরিপুর, কাজীপুর, মহাস্থান এলাকার কৃষক শীতকালীল সবজি চারা রোপণ শুরু করেছেন। তারা আগাম শীতকালীন সবজি সরবরাহ করেন বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

শাহনগর নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি আমজাদ হোসেন জানান, প্রতি বছর জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এসব চারা বিক্রি হয়। প্রতিটি নার্সারিতে এক মৌসুমেই দুই থেকে তিন দফা চারা উৎপাদন করা হয়। বীজ বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যেই চারা বিক্রি শেষ করে আবারো নতুন চারার জন্য প্রস্তুত করতে হয়। এ বছর নার্সারিগুলোয় প্রায় ১০ কোটি চারা উৎপাদনের কাজ চলছে। আবহাওয়া ঠিক থাকলে এ পরিমাণ চারা বিক্রি হবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি চারা বিক্রি হয় বগুড়া, নাটোর, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও রংপুরে। এসব জেলায় সরবরাহ সুবিধা বেশি। লাভ বেশি বলে স্থানীয় অনেক যুবকই এখন চারা উৎপাদন শুরু করেছেন।

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলার চুপিনগর ও খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের শাহনগর নার্সারি মালিক সমিতির আওতায় দুই শতাধিক নার্সারিতে রোগবালাইমুক্ত ও উচ্চ ফলনশীল জাতের সবজি চারা উৎপাদন হয়। প্রতি মৌসুমে এ এলাকার সবজির চারা উত্তরাঞ্চলের প্রায় ১৬ জেলায় সরবরাহ করা। এছাড়া জেলার শিবগঞ্জের সবজি চাষীরা চারা উৎপাদন করে আগাম সবজি চাষ শুরু করে দিয়েছেন। শীতকাল আসার আগেই এ উপজেলাগুলোয় প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন