ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প

নিয়ম ভেঙে সংরক্ষিত কোটায় অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ ৩২টি

আল ফাতাহ মামুন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ শুরু হয় ২০১১ সালে। এ বরাদ্দ প্রক্রিয়া চলমান ছিল গত বছর পর্যন্ত। আবাসিক প্রকল্পটিতে মোট প্লটের সংখ্যা ১ হাজার ৭৬৭। এর মধ্যে ১০ শতাংশ প্লট সংরক্ষিত কোটায় বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। যদিও রাজউক সূত্রে পাওয়া তথ্য বলছে, নীতিমালা ভেঙে সংরক্ষিত কোটায় নির্ধারিতের অতিরিক্ত আরো ৩২টি প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। 

এ বিষয়ে রাজউক কর্মকর্তাদের দাবি, ওপরের চাপেই তারা নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। মূলত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চাপেই নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে।  

সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন সময়ে বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, প্রশাসন, রাজনীতিবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের নানা ব্যক্তির সমর্থনেরও প্রয়োজন পড়েছে। এ সমর্থনের বিনিময়ে এসব মানুষকে সম্পদ বাড়ানোর পথ প্রশস্ত করে দেয়া হয়েছে নানাভাবে। পাশাপাশি উপঢৌকন হিসেবে দেয়া হয়েছে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা। ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের তালিকায়ও এমন ব্যক্তিদের নাম পাওয়া গেছে। 

অসমর্থিত ও অসম্পূর্ণ এমন একটি তালিকা বণিক বার্তার হাতে এসেছে। এতে দেখা গেছে, আবাসন প্রকল্পটিতে সংরক্ষিত কোটায় নিয়মবহির্ভূতভাবে নির্ধারিতের অতিরিক্ত প্লট বরাদ্দ পাওয়াদের মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলে সরকারঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গণমাধ্যমকর্মীদেরও নাম রয়েছে। 

রাজউক সূত্র জানায়, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পে তিন ধরনের প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে—আড়াই, তিন ও পাঁচ কাঠা। এর মধ্যে আড়াই কাঠার প্লট ২৯৭টি, তিন কাঠার প্লট ১ হাজার ৭৩ আর পাঁচ কাঠার প্লট ৩৯৭টি। 

সংরক্ষিত কোটায় বরাদ্দের নিয়ম অনুযায়ী, পাঁচ কাঠার ৩৯৭টি প্লটের ১০ শতাংশ হয় ৪০টি প্লট। কিন্তু রাজউক বরাদ্দ দিয়েছে ৭০টি। অন্যদিকে তিন কাঠার ১ হাজার ৭৩টি প্লটের ১০ শতাংশ হয় ১০১টি প্লট। এখানে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১০৩টি। এ অনুযায়ী নির্ধারিত কোটার অতিরিক্ত আরো ৩২টি প্লট বেশি বরাদ্দ দিয়েছে রাজউক। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজউকের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) মো. ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘‌এ বরাদ্দগুলো আমি আসার আগে দেয়া হয়েছে। এখন নতুন করে কোনো বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। আসলে অনেক সময় ওপরের চাপেও বরাদ্দ দিতে হয়েছে। আমরা অতীতের অনিয়মগুলো খতিয়ে দেখছি। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে রাজউকের কয়েক কর্মকর্তা জানান, গত পাঁচ বছরে ঝিলমিলসহ অন্যান্য আবাসন প্রকল্প এলাকায় নিয়ম ভেঙে অনেক প্লট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংরক্ষিত কোটায় প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে যার নামে সুপারিশ করা হয়েছে বা মন্ত্রণালয় থেকে যে তালিকা পাওয়া গেছে, সে তালিকা অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ দিতে বাধ্য ছিল রাজউক। এগুলো নিয়ে বরাবরই প্রবল চাপে থাকতে হয়েছে রাজউক কর্মকর্তাদের। এ কারণে নিয়ম ভাঙতে বাধ্য হয় সংস্থাটি। 

মন্ত্রণালয় কিংবা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের চাপে প্লট বরাদ্দ দেয়া বা প্রকল্প নেয়ার চর্চা থেকে রাজউককে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মনে করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘‌এই যে নিয়ম ভেঙে প্লট বরাদ্দ দেয়া, এটা হয়েছে রাজউক তার মূল কাজ করছে না বলে। রাজউক পরিচালিত হবে জনগণের পরামর্শ ও চাহিদার আলোকে। কিন্তু সংস্থাটি নগরের বাসযোগ্যতা উন্নতির ক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। রাজউককে অবিলম্বে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নয়তো আগামীতে যেসব সরকার বা আমলা আসবেন, তাদের নির্দেশের তাঁবেদারিই রাজউককে করে যেতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন