ধরলার ভাঙনে উলিপুরে শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামের উলিপুরে বসতবাড়ির কাছে চলে এসেছে ধরলা নদীর ভাঙন ছবি: নিজস্ব আলোকচিত্রী

কুড়িগ্রামের উলিপুরে তীব্র আকার ধারণ করেছে ধরলা নদীর ভাঙন। দুই সপ্তাহে উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবার। এক মাসের বেশি সময় ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

সরজমিনে দেখা গেছে, নদীভাঙনের কবলে পড়ে কেউ সরাচ্ছেন ঘরবাড়ি, আবার কেউ বা গাছপালা। একের পর এক ভাঙছে ফসলি জমিও। এ চিত্র দেখা গেছে বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সরকারপাড়া থেকে মোল্লার হাটের পাশের নুরুন্নাহার স্কুল পর্যন্ত। ধরলার বাম তীরে এক মাস ধরে ভাঙন অব্যাহত থাকায় বসতভিটা, গাছপালা ও ফসলি জমি হারিয়েছে শতাধিক পরিবার। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ ভাঙনকবলিতদের।

উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের সরকারপাড়ার সমশের আলী জানান, এক সপ্তাহে বেগমগঞ্জের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অন্তত ১০০ ঘরবাড়ি ধরলার ভাঙনের কবলে পড়েছে। তার বাড়ির অর্ধেক সরিয়ে নিয়েছেন। বাকি অর্ধেকও সরানোর কাজ করছেন। স্থানীয় চেয়ারম্যান ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। নতুন করে ঘরবাড়ি নির্মাণের মতো জমিও তাদের নেই। অন্যের জমিতে আপাতত ঘরবাড়ি সরিয়ে রেখেছেন।

একই এলাকার আবুল হোসেন জানান, এখানে মসজিদ ছিল, পাকা বাড়ি ছিল। নদীতে সব বিলীন হয়ে গেছে। যদি এখনই ভাঙন রোধে ব্যবস্থা না নেয়া হয় তাহলে, সরকারপাড়া গ্রামসহ পাশের গ্রামগুলোও থাকবে না।

ভাঙন রোধে কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান না থাকায় দুশ্চিতায় দিন কাটছে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোর। এ পরিস্থিতিতে ভাঙন রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি তাদের। এছাড়াও তিন মাসে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও দুধকুমার নদের ভাঙনে বসতভিটা হারিয়েছে সাত শতাধিক পরিবার। নদীপারের মানুষের শেষ সম্বল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেবে সরকার—এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগীদের।

এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে তিন দিক থেকে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। একদিকে ব্রহ্মপুত্র, একদিকে দুধকুমার আর অন্যদিকে ধরলা। বর্তমানে ইউনিয়নের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ধরলার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, উপজেলা প্রশাসনকে বারবার বলার পরও কোনো কাজ হচ্ছে না। সরকার যদি দৃষ্টি না দেয়, তাহলে এ ইউনিয়নের মানচিত্র বদলে যাবে। আমি চাই ইউনিয়নটি রক্ষায় সরকার যেন দ্রুত পদক্ষেপ নেয়।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা রক্ষায় কাজ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকমার নদের ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন