ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকার প্রত্যাহার হচ্ছে কবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

শেয়ারদরকে একটি নির্দিষ্ট সীমায় আটকে রাখতে বছর চারেক আগে কভিডের সময় ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি চালু করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর পর থেকে বিভিন্ন সময় শেয়ারদর ধরে রাখতে এ পদ্ধতির প্রয়োগ করেছে বিএসইসি। এখনো ছয় কোম্পানির শেয়ারের ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস বহাল হয়েছে। পাশাপাশি সব শেয়ারের ক্ষেত্রে দর কমার সর্বোচ্চ সীমা ৩ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার কার্যকর রয়েছে। তবে পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা অবিলম্বে বৈষম্যমূলক এসব নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

দেশের পুঁজিবাজারে ফ্লোর প্রাইস যুগ শুরু হয় ২০২০ সালের মার্চে। কভিড সংক্রমণের প্রভাবে পুঁজিবাজারে দরপতন তীব্র হয়ে উঠলে তা ঠেকাতে সে বছরের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এক বছরেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ১৭ জুন ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা শুরু হলে ২০২২ সালের ২৮ জুলাই দ্বিতীয় দফায় ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি। এর পাঁচ মাসের মাথায় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ১৬৯টি কোম্পানির ক্ষেত্রে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। যদিও এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমতে শুরু করলে দুই মাস পরই ২০২৩ সালের ১ মার্চ আবারো ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়, যা গত ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত বহাল ছিল। এদিন ৩৫টি কোম্পানির ওপর বহাল রেখে বাকি সব কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছিল। চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ২৩টির ওপর থেকে প্রত্যাহার করে ১২টি কোম্পানির ওপর ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখা হয়। এরপর ৬ ফেব্রুয়ারি আরো ছয় কোম্পানির ওপর থেকে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা হয়। অধিকাংশ শেয়ারের ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার পর ফেব্রুয়ারিতে পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। এ অবস্থায় দরপতনের তীব্রতা কমাতে শেয়ারদর কমার ক্ষেত্রে ৩ শতাংশ সার্কিট ব্রেকার আরোপ করে বিএসইসি। এতে একদিনে ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারবে না শেয়ারদর। যদিও শেয়ারদর বাড়ার স্ল্যাবভিত্তিক সার্কিট ব্রেকার কার্যকর রয়েছে, যেখানে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত শেয়ারদর বাড়তে পারবে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় বেক্সিমকো লিমিটেড, খুলনা পাওয়ার, শাহজিবাজার পাওয়ার, বিএসআরএম লিমিটেড, ইসলামী ব্যাংক ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের শেয়ারে বলবৎ থাকা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেন। এক্ষেত্রে কমিশন সভা ছাড়াই তার একক সিদ্ধান্তে নেয়া এ পদক্ষেপের বিষয়ে সমালোচনা শুরু হয়। সালমান এফ রহমানকে সুবিধা দিতেই তিনি তড়িঘড়ি করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের পক্ষ থেকে কমিশন সভা ছাড়া ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের মতো বাজার নিয়ন্ত্রণকারী আদেশ জারি করা থেকে বিরত থাকতে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারসংক্রান্ত আদেশটি বাতিল করে বিএসইসি। ১৮ আগস্ট বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে রাশেদ মাকসুদকে নিয়োগ দেয় সরকার। তিনি বিএসইসিতে যোগ দেয়ার পর পুঁজিবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের সংস্কারের পাশাপাশি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ও শেয়ারদর কমার সার্কিট ব্রেকার ১০ শতাংশে ফিরিয়ে আনা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, কমিশন নিজেদের মধ্যে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার ও সার্কিট ব্রেকারের ইস্যুটি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছে। বর্তমানে বিএসইসিতে দুজন কমিশনার ও একজন চেয়ারম্যান রয়েছেন। আইনানুসারে তিনজন কমিশনারের সমন্বয়ে কমিশন সভার কোরাম পূরণ হয়। ফলে বর্তমানে কোরাম পূরণ করে কমিশন সভার ক্ষেত্রে একজন কমিশনারের ঘাটতি রয়েছে। তবে বিএসইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে একটি বিশেষ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এক্ষেত্রে বিদ্যমান কমিশন সর্বসম্মতভাবে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সরকার নতুন কমিশনার নিয়োগ দেয়ার পর কোরাম পূরণ করে কমিশন সভার মাধ্যমে ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকারের সিদ্ধান্তটি ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া সম্ভব। চলতি সপ্তাহের মধ্যেই ফ্লোর প্রাইস ও সার্কিট ব্রেকারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে জানিয়েছেন বিএসইসির এক কর্মকর্তা।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবু আহমেদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে শেয়ারদর নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়টি সমর্থন করা যায় না। এভাবে শেয়ারদর ধরে রেখে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব নয়। বিশ্বের কোথাও ফ্লোর প্রাইস নেই। বিএসইসিকে অবিলম্বে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। পাশাপাশি শেয়ারদর কমার ক্ষেত্রে সার্কিট ব্রেকার আগের মতো ১০ শতাংশে ফিরিয়ে আনতে হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন