ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দুই-একদিনের মধ্যে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটির বেশির ভাগ শেয়ার এস আলম গ্রুপের হাতে। তাই আপাতত স্বতন্ত্র পরিচালকদের দিয়ে ব্যাংকটি পরিচালিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গভর্নরের সঙ্গে গতকাল দুপুর ১২টায় ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চার পরিচালকের বৈঠক হয়। ওই বৈঠক শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছে। এ অর্থ আদায় না হওয়া পর্যন্ত গ্রুপটির কোনো পরিচালক ব্যাংকটির পর্ষদে থাকতে পারবেন না। ইসলামী ব্যাংকের যেসব শেয়ার এস আলম গ্রুপের হাতে আছে, সেগুলো বেচাকেনা করা যাবে না। ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের অর্থ ফেরত দিলে তারা মালিকানায় ফিরতে পারবে। আপাতত ব্যাংকটিতে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয়া হবে। তারাই ব্যাংকটি পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখবেন।’

গভর্নর বলেন, ‘ইসলামী ব্যাংকের আগের কোনো পরিচালকের হাতেই বর্তমানে ২ শতাংশ শেয়ার নেই। আইন অনুযায়ী যদি তারা ২ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা ধারণ করতে পারেন, তাহলে পর্ষদে ফিরতে পারবেন। নতুন করে অন্য কোনো গ্রুপও শেয়ার কেনার মাধ্যমে ব্যাংকটির মালিকানায় আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের অর্থের উৎস, অভিজ্ঞতা ও অতীত দেখা হবে।’

যারা ব্যাংকের টাকা নিয়ে ফেরত দেননি, তাদের ছাড় দেয়া হবে না–এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে গভর্নর বলেন, ‘টাকা উদ্ধারে আইনগত যত পন্থা আছে সবই অনুসরণ করা হবে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয়া হবে। ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয়া হয়েছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য ব্যাংকগুলো নিয়েও একই সিদ্ধান্ত হবে।’

এস আলম গ্রুপের কাছে কত ঋণ আছে এমন প্রশ্নের জবাবে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘নামে-বেনামে কত ঋণ আছে, তা জানা যায়নি। বেনামি ঋণের তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। তবে এসব তথ্য বের হবে। এজন্য কিছুটা সময় প্রয়োজন।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করেছেন। বিগত সরকারের পতনের পর কর্মকর্তাদের কেউ কেউ ডেপুটি গভর্নরদের বের করে দিতে গিয়ে দরজায় লাথি মেরেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংঘটিত বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেন, ‘এটা আমার আসার আগের ঘটনা। কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হোক, আমি চাই না। কারো যদি কোনো কথা থাকে, তাহলে আমার দরজা খোলা আছে। আমি শুনে যদি যৌক্তিক দাবি মনে হয়, তাহলে তা মানার চেষ্টা করব। কিন্তু অযৌক্তিক কোনো দাবি মানা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দরকার হলে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে। কিন্তু অযৌক্তিক দাবি মেনে কিছুতে স্বাক্ষর করব, সেটা আমার দ্বারা হবে না। ওই সাইনের সঙ্গে আমার পদত্যাগপত্রও একসঙ্গে যাবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যাংকগুলোয় অনিয়ম হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করব না। তবে আমরা চেষ্টা করছি পুনর্গঠন করার জন্য, যাতে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী একই পদে দীর্ঘদিন না থাকে।’

গভর্নর বলেন, ‘আমাদের এখন প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের অর্থনীতিকে রক্ষা করা। বাংলাদেশ যেন খেলাপি না হয়, সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যাতে প্রশ্ন না ওঠে, আমরা যেন অবনমিত না হই, সহযোগী ব্যাংকগুলোর সঙ্গে যেন আমরা সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারি, এসব নিয়ে কাজ করতে হবে।’

এস আলম গ্রুপ ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক পর্ষদের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ব্যাংকটির শেয়ারের ৮২ শতাংশের মালিকানা রয়েছে গ্রুপটির হাতে। এরই মধ্যে এস আলমের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন