যেভাবে দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা

বণিক বার্তা ডেস্ক

ছবি : সংগৃহীত

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট—টানা প্রায় ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকার পর পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল দুপুরে সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়েন তিনি। দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাও দেশ ছেড়েছেন।

বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়ার জন্য ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল। এর পরই তিনি পদত্যাগ করেন। আর দেশ ছাড়ার আগে তিনি জাতির উদ্দেশে ভাষণ রেকর্ড করতে চেয়েছিলেন। অবশ্য সে সুযোগ তাকে দেয়া হয়নি। পরে তিনি বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন ছাড়েন।

একটি সূত্র জানায়, দেশ ছাড়ার আগে শেখ হাসিনা নয়াদিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তাকে উদ্ধারের জন্য বাংলাদেশে উড়োজাহাজ পাঠানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয় নরেন্দ্র মোদি সরকার। কারণ হিসেবে বলা হয়, বাংলাদেশের আকাশসীমায় উড়োজাহাজ পাঠালে তাতে আইনের লঙ্ঘন হতে পারে। এরপর সামরিক বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।

সরকার পতনের যে এক দফা দাবির মুখে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ও দেশ ছাড়তে হলো, সেই এক দফার উৎপত্তি কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে। সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার দাবিতে ওই আন্দোলন দানা বাঁধা শুরু করে গত মাসের শুরুর দিকে। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডেকে কোটা সংস্কারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের দাবি জানায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। এর মধ্যে ১৫ জুলাই আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে পুলিশসহ ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। হামলায় আহত হন তিন শতাধিক। পরের দিন (১৬ জুলাই) ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে ছয়জনের মৃত্যু হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বন্ধ ঘোষণা করা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু সহিংসতার তীব্রতা ও ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। ১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। এদিন মৃত্যু হয় ২১ জনের। সর্বোচ্চ প্রাণহানি ঘটে ১৯ জুলাই, এদিন মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। এর মধ্যে রাজধানীতেই প্রাণ হারান ৪৯ জন।

উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ২০ জুলাই অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ২৭ হাজার সেনা। অন্যদিকে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার অভিযোগে সরকারের পক্ষ থেকে দেশজুড়ে শত শত মামলা করা হয়। এসব মামলায় হাজার হাজার মানুষকে বিনা অপরাধে গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে দাবি ওঠে আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের মৃত্যুর বিচার অবিলম্বে করতে হবে। 

কারফিউ জারি ও সেনা মোতায়েনের পর প্রাণহানি অল্প সময়ের মধ্যে শূন্যে নেমে আসে। কারফিউ আংশিক শিথিল করা হয়। আন্দোলনও চলতে থাকে। কিন্তু ২ আগস্ট আবার আন্দোলন ঘিরে প্রাণ ঝরে। এদিন খুলনায় এক পুলিশ সদস্য ও হবিগঞ্জে এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৩ আগস্ট বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন সরকার পতনের এক দফা দাবি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীরা। এ দাবি আদায়ে ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়। একই দিন মাঠে নামে আওয়ামী লীগও। এদিন ভয়ংকর রূপ নেয় দেশের পরিস্থিতি, মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। পরের দিন (৫ আগস্ট) ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এদিন কারফিউ অমান্য করে সরকার পতনের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে লাখো জনতা। এর মধ্যে দুপুরের পর খবর আসে, পদত্যাগ করে সামরিক হেলিকপ্টারে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন