নবনিযুক্ত ৮ ডিসি প্রত্যাহার

প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবিতে হট্টগোল

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বাংলাদেশ-সচিবালয়

নতুন করে দায়িত্ব পাওয়া ৫৯ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে আটজনকে একদিনের মাথায় প্রত্যাহার করে নিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই সঙ্গে চারজনের কর্মস্থল বদলে দেয়া হয়েছে। এতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। সচিবালয়ে ৩০-৪০ জন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়ে গতকালও দিনভর হট্টগোল করেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গতকাল সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে জানান, আট জেলায় মঙ্গলবার যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগের দিন সোমবার ২৫ জনকে দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে সিলেটে একজনকে বাদ দিয়ে আরেকজনকে দেয়া হয়েছে। এ আট জেলা হলো লক্ষ্মীপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, শরীয়তপুর, দিনাজপুর ও রাজবাড়ী।

প্রত্যাহার করে নেয়া আট কর্মকর্তা হলেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের উপসচিব সুফিয়া আক্তার রুমী (লক্ষ্মীপুর), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন হাওলাদার (সিরাজগঞ্জ), আরপিএটিসির উপপরিচালক মনোয়ারা বেগম (রাজবাড়ী), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুবুর রহমান (রাজশাহী), স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপসচিব মো. আব্দুল আজিজ (শরীয়তপুর) ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মোবাশশেরুল ইসলাম (দিনাজপুর)। এরা সবাই মঙ্গলবার ডিসির দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটি-২-এর সহায়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. সাইদুজ্জামান (জয়পুরহাট) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফারহানা ইসলামকে (কুষ্টিয়া) ডিসি হিসেবে বদলির আদেশও বাতিল করা হয়েছে। এ দুজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সোমবার।

যে চার জেলায় ডিসি পদে রদবদল আনা হয়েছে, তার মধ্যে টাঙ্গাইলের ডিসিকে পঞ্চগড়, নীলফামারীর ডিসিকে টাঙ্গাইল, নাটোরের ডিসিকে লক্ষ্মীপুর এবং পঞ্চগড়ের ডিসিকে নীলফামারীতে বদলি করা হয়েছে।

ক্ষমতার পটপরিবর্তানের পর মাঠ প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল আনছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর ধারাবাহিকতায় ৫৯ জেলার মধ্যে ৯ সেপ্টেম্বর ২৫ জেলায় এবং ১০ সেপ্টেম্বর ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয়া হয়। এ দুই দফায় নিয়োগ পাওয়া নতুন ডিসিদের অনেকের বিরুদ্ধে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

এ অসন্তোষ নিয়ে গত মঙ্গলবার দিনভর সচিবালয়ে হট্টগোল করেন আগের সরকারের আমলে ‌বঞ্চিত উপসচিবরা। এদিন তারা সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দুজন যুগ্ম সচিবকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও হট্টগোল হয়। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের দাবিদাওয়া তুলে ধরে ডিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন বাতিলের আশ্বাসে তারা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কার্যালয় ত্যাগ করেন। ওই ঘটনার পরদিনই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নবনিযুক্তদের ১২ জনের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানালেন।

এতেও সন্তুষ্ট নন বঞ্চিত কর্মকর্তারা। গতকাল সকাল থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থান নেন আমলাদের একাংশ। ৩০-৪০ জন উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা জনপ্রশাসন ও মন্ত্রিপরিষদ সচিব বিভাগের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করে প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে চাপ দেন।

এদিন বিকালে বিক্ষুব্ধ আমলাদের জনপ্রশাসন বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের (নিয়োগ পদন্নতি ও প্রেষণ) কক্ষে তালা লাগানোর প্রস্তুতি নিতে দেখা যায়। অবশ্য পরে তালা না দিয়ে যাতে এ কর্মকর্তা কক্ষ থেকে বের হতে না পারেন, সেজন্য কক্ষের সামনে তাদের পাহারা বসাতে দেখা যায়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষুব্ধ উপসচিবরা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেনের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কক্ষের সামনে পুলিশ মোতায়েন করতে দেখা যায়। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষুব্ধ উপসচিবরা অবস্থান করছিলেন। তাদের ভাষ্য ছিল, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে যাবেন না।

এদিকে বিক্ষোভের মধ্যে দুপুরের পর পর জেলা প্রশাসকপ্রত্যাশী উপসচিবদের সমন্বয়ক নূরুল করিম ভূইয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দাবি, প্রশাসনের সর্বস্তরে বিগত দিনে যারা সুবিধাভোগী; যারা এই ছাত্র-জনতা হত্যার সঙ্গে জড়িত; খুন, লুটপাট ও রাষ্ট্র সংস্কারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল; যারা এখন পর্যন্ত ছাত্র-জনতার এই বিপ্লবের মূল আকাঙ্ক্ষা ও চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করছে, সেসব কর্মকর্তাকে বিদায় দিতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি।"৫৯ জনকে যে ডিসি করা হলো, তাদের অনেকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগ রয়েছে, আপত্তি রয়েছে। যেহেতু বিগত সরকারের সময়ে এই কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা নিয়েছেন এবং আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছেন; তারা যে খুন-হত্যা ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, সে তথ্য আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমেই দিয়েছেন।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে কথা হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নূরুল করিম বলেন, ‘যেহেতু এটা একটা জটিল প্রক্রিয়া, সেহেতু যত দ্রুত সম্ভব প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে এ দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের আজ যেসব কর্মকর্তা সেখানে গিয়েছিল তাদের সবাই মেধাবী, যোগ্য ও সৎ। যেহেতু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মেধাবীরা নিয়োগ পাক, সেহেতু আমরাও চাই মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হোক।’

আট জেলায় নতুন ডিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা প্রসঙ্গে নূরুল করিমের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনারা নতুন কোনো সিদ্ধান্ত পাবেন। আমাদের দাবি ছিল, বিকাল ৫টার মধ্যে তারা যেন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন। তিনি আমাদের বলেছেন, যত দ্রুত সম্ভব তিনি এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন, আমাদের ইমোশনের কথা তাকে জানাবেন।’

গতকাল বিকাল ৫টার পর সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় এখন তারা কী করবেন, এমন প্রশ্নে বিক্ষুব্ধ উপসচিবদের মধ্যে একজন বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে প্রজ্ঞাপন বাতিল করা, সেটা করতেই হবে। আগের প্রজ্ঞাপনের কয়েকজনকে রাখতে হলে সেটা নতুন প্রজ্ঞাপনে রাখবেন। আমরা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এখানে আছি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন