পাঁচ বছরের এসএমই নীতিমালা

পরিকল্পনা ও সুপারিশেই শেষ মেয়াদ, মেলেনি কোনো অর্থ

ফারিন জাহান সিগমা

ছবি : বণিক বার্তা

বৈশ্বিক ব্যবসা-বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) দখলে। সম্ভাবনাময় এ খাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশে প্রণয়ন করা হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯’, যার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুনে শেষে হয়েছে। তবে কৌশল তৈরি ও পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম। এমনকি এ নীতিমালার অধীনে যেসব প্রকল্প নেয়া হয়, তাতে বরাদ্দ হয়নি কোনো অর্থই। বিভিন্ন সময় পরিশোধন ও পরিমার্জন করে বাজেট নির্ধারণের সুপারিশ করেও সাড়া মেলেনি সরকারের কাছ থেকে। ফলে কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করা যায়নি। 

জানা যায়, ‘এসএমই নীতিমালা ২০১৯’-এ মোট ১১টি কৌশলগত লক্ষ্য ও ৬০টি কৌশলগত হাতিয়ারের আলোকে তুলে ধরা হয় ১৩৬টি কার্যক্রম। সেগুলো পরিচালনার লক্ষ্যে বাজেট ধরা হয় ১০ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। পরবর্তী সময়ে তা পরিশোধন ও পরিমার্জন করে ২ হাজার ১৮৩ কোটি ৪ লাখ টাকার বাজেট নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। এতে নিজস্ব বাজেটের কর্মসূচির জন্য ১৫৫ কোটি ১৬ লাখ, পলিসি বাজেটের কর্মসূচির জন্য ১ হাজার ৫৮৭ কোটি ৩৮ লাখ ও প্রকল্প বাজেটের কর্মসূচির সুপারিশ করা হয় ৪৪০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। 

এসএমই খাত উন্নয়নে যে ১১টি কৌশল নেয়া হয় তার মধ্যে ছিল ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর উন্নতিসাধন, প্রাতিষ্ঠানিক অর্থায়ন সুবিধা প্রাপ্তিতে এসএমই খাতের সুযোগ বৃদ্ধি, প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং এসএমই পণ্যের বাজারে প্রবেশে সহায়তা, এসএমই ব্যবসা সহায়ক সেবা, স্বল্প ব্যয় ও স্বল্প সময়ে স্টার্টআপ সহায়তা প্রদান, এসএমই ক্লাস্টারভিত্তিক উদ্যোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, তথ্য যোগাযোগ ও অন্যান্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, এসএমই উদ্যোক্তাদের দক্ষতা উন্নয়নমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচির প্রসার, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নভিত্তিক কর্মসূচির প্রসার ও বিশেষায়িত সেবা দেয়া, এসএমই খাতকে বৃহৎ শিল্পের সংযোগ শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা ও এসএমই পণ্যের সুরক্ষা প্রদান, পরিবেশবান্ধব শিল্প প্রতিষ্ঠা ও শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এসএমইদের সক্ষমতা উন্নয়ন, এসএমই পরিসংখ্যানকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা। এ নীতিমালা উন্নয়নের লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল দুটি নীতিনির্ধারণী ও কার্যকরী কমিটি। সেগুলো হলো জাতীয় এসএমই উন্নয়ন পরিষদ (এনসিডিসি) ও জাতীয় এসএমই টাস্কফোর্স। 

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) ফাউন্ডেশনে কর্মরত একজন জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ খাতের উন্নয়নে গঠিত দুই কমিটির মধ্যে সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী হচ্ছে জাতীয় এসএমই উন্নয়ন পরিষদ বা এনসিডিসি। এ কমিটি কয়েকবার সভার নোটিস জারি করে। অবশ্য ২০২২ সালের পর এনসিডিসির আর কোনো সভা হয়নি। অন্যদিকে টাস্কফোর্সও সর্বশেষ সভা করে ২০২৩ সালের ১৫ মে। সরকারের বাজেটে যদিও এসএমই ফাউন্ডেশনের জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দ রাখা হয়নি। এর পরও এসএমই উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, স্বল্প সুদে অর্থায়ন, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি ইত্যাদি কর্মকাণ্ডগুলো নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালনা করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, নতুন করে এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সেটি অবশ্য এখনো আলোচনা পর্যায়েই রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শিল্পনীতিও ২০১৬ পরিবর্তিত হয়ে ২০২২ হয়েছে। এসএমই নীতিমালাও শিল্পনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়। এসএমই নীতিমালা ২০২৪ প্রণয়ন করতে যাচ্ছি। এর জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করছি, মতামত নিচ্ছি। সবার মতামত নিয়ে সেটা শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। মন্ত্রণালয় তখন অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে বিভিন্ন অন্তঃমন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাধিক সভা করবে। এরপর তা চূড়ান্ত করবে।’

বাজেট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একেবারে যে বরাদ্দ হয়নি সেটা বলা যাবে না। তবে আমাদের যে বাজেট ছিল তা দিয়ে কিছু পূরণ হয়েছে। কিন্তু বাজেট বাড়ানো হলে আমারা উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী আরো কিছু কাজ করতে পারতাম। প্রত্যাশা অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ হয়নি।’

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অনানুষ্ঠানিক খাতের প্রাধান্য বেশি। পরিসংখ্যানে অনুযায়ী, গত চার দশকে দেশের এসএমই খাতের উৎপাদন ক্রমে বাড়ছে। আর গত দুই দশক দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এ খাতের অবদান বাড়ছে ধারাবাহিকভাবে। বর্তমানে জিডিপিতে এমএসএমই খাতের অবদান ২৫ শতাংশ। এডিবির ২০১৫ সালের পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে কুটির শিল্পে প্রায় ৭৮ লাখ অতি ক্ষুদ্র (মাইক্রো), ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন