পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ

বরিশাল অঞ্চলে লোডশেডিং

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, বরিশাল

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিট থেকে হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। তবে চার-পাঁচদিন ধরে একটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। সরবরাহ ঘাটতি থাকায় বরিশাল অঞ্চলে বেড়েছে লোডশেডিং। ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় বরিশাল বিভাগে ২৬ লাখ ৩৫ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব গ্রাহক।

লোডশেডিংয়ের কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

নগরবাসী বলছেন, ভ্যাপসা গরম লোডশেডিংয়ে জনদুর্ভোগ চরমে। বিদ্যুৎ চলে গেলে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়। লোডশেডিংয়ে বিসিক শিল্পনগরেও উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে দাবি উদ্যোক্তাদের। আগামী এক সপ্তাহেও অবস্থার উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে নিশ্চিত করেছেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) বরিশালের গ্রিড স্টেশনের দায়িত্বশীলরা।

শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিকদের দাবি, দিনে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিসিক শিল্প নগরীর শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের।

ব্যাপারে ফরচুন সুজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ছোট-বড় মিলিয়ে বিসিক শিল্পনগরে অর্ধশত কারখানা রয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে সব প্রতিষ্ঠানেই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে প্লাস্টিক বিস্কুট উৎপাদনকারী কারখানাগুলো বেশি ক্ষতির মুখে। বিদ্যুৎ চলে গেলে আটকে যাওয়া কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফেলে দেয়া ছাড়া আর উপায় থাকছে না।

বরিশাল বিসিকের মহাপরিচালক এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ভালোভাবেই চলছিল। তিন-চারদিন ধরে লোডশেডিংয়ের কবলে পড়তে হয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে। আমরা বিষয় নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের জন্য চেষ্টা করব।

বরিশাল গ্রিড স্টেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তারুজ্জামান পলাশ বলেন, ‘পায়রা তাপবিদুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের একটি বন্ধ। দুটি থেকে হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বরিশাল, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জসহ কিছু জায়গায় সরবরাহ করা হয়। একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় পায়রায় উৎপাদন অর্ধেক কমেছে। এজন্য বরিশালে প্রায় ৫৮০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ৪৫০-৫০০ মেগাওয়াট সরবরাহ করা যাচ্ছে। জুলাইয়ের - তারিখে ইউনিটটি সচল হতে পারে।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় বিতরণ কেন্দ্র--এর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী দীপক মিস্ত্রি বলেন, ‘আমাদের আওতাধীন (বরিশাল, ঝালকাঠি, নলছিটিবিদ্যুতের চাহিদা ৮২ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাচ্ছি ৫৬ মেগাওয়াট। বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বরিশাল বিদ্যুৎ বিক্রয় বিতরণ কেন্দ্র--এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, কয়েক ধরে চাহিদার অর্ধেকের বেশি বিদ্যুৎ তারা পেয়েছেন।

একই অবস্থা বিরাজ করছে বরিশালের উপজেলা শহরগুলোয়ও। দিন-রাতে -১০ বারের বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলাগুলোয় চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। গ্রিডের আওতাধীন বরিশাল ঝালকাঠিতে চাহিদার বিপরীতে অর্ধেকের কিছু বেশি সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। অবস্থায় ২০ ভাগ হারে লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। যদিও বাস্তবে লোডশেডিং অনেক বেশি হচ্ছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগীরা।

শুধু বরিশাল নয়, লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে পটুয়াখালীও। যার প্রভাব পড়ছে পর্যটন ব্যবসায়। কুয়াকাটা সিকদার রিসোর্টের জিএম মো. আনোয়ারুল আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটর চালাতে হয় জ্বালানি তেল দিয়ে। তাতে খরচ বেড়ে যায়। হিমায়িত খাদ্যসামগ্রীও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে কুয়াকাটায় হোটেল মোটেল ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পর্যটকরাও বিরক্ত।

এদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঝালকাঠিতে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ঝালকাঠি এআরএস সল্টের ম্যানেজার জয়ন্ত সাহা বলেন, ‘লোডশেডিংয়ে লবণ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

সার্বিক বিষয়ে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্লান্ট ম্যানেজার শাহ আব্দুল মাওলা বলেন, ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ রয়েছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে। এটি রুটিন ওয়ার্ক মাত্র। তবে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নেই। প্লান্ট রক্ষণাবেক্ষণ শেষে জুলাই এটি উৎপাদনে যাবে।

এর আগে কয়লা সংকটে ২০২৩ সালের জুন দেশের বৃহৎ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০ দিন পর আবারো উৎপাদন শুরু হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোপুরি সচল রাখতে প্রতিদিন ১২ হাজার টনের বেশি কয়লার প্রয়োজন। যার পুরোটাই আমদানি করতে হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন