সিরাজগঞ্জে স্কুল মিল্ক কর্মসূচি

সাত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বেড়েছে

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল মিল্ক কর্মসূচি চালু করেছে সরকার। কর্মসূচির আওতায় সিরাজগঞ্জের সাতটি বিদ্যালয় রয়েছে। আগের বছরগুলোয় এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার তুলনামূলক কম ছিল। তবে মিল্ক কর্মসূচি চালু হওয়ায় শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগে পৌঁছেছে।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, সাতটি বিদ্যালয়ে ১ হাজার ৪৪১ শিক্ষার্থী টিফিনে ২০০ এমএল প্যাকেটজাত দুধ পাচ্ছে, যা তাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হারও বেড়েছে। ২০২৫ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পটি শেষ হওয়া কথা রয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও উপস্থিতির বিষয়টি আমলে নিয়ে কর্মসূচি চালু রাখা ও সম্প্রসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, দেশের ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বছরব্যাপী বিনামূল্যে দুধ পান করানোর জন্য এ পাইলট কর্মসূচি নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতাভুক্ত ৬১ জেলায় নির্বাচিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর সব শিক্ষার্থীকে টিফিনের সময় দুধ পান করানো হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৭ মার্চ থেকে সিরাজগঞ্জের সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিল্ক কর্মসূচি চালু রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সদর উপজেলার কয়েলগাঁতী শিবনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকুচির আমবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিপুরের কাচিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়গঞ্জের কুঠারগাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শাহজাদপুর উপজেলার কান্দাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের ১ হাজার ৪৪১ শিক্ষার্থী এ সুবিধা পাচ্ছে।

কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী দুলাল শেখ, পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইমা আকতার প্রজন্ম ও তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান জানায়, টিফিনে যে দুধ দেয়া হয়, সেটুকু খেলে পেট প্রায় ভরে যায়।এজন্য নিয়মিত স্কুলে আসছে তারা।

কামারখন্দ উপজেলার কুটিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক  শাহানাজ পারভিন বলেন, ‘বিদ্যালয়ে ১৮০ শিক্ষার্থী রয়েছে। স্কুল মিল্ক কর্মসূচি চালু হওয়ায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় এখন শিক্ষার্থী উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ।’

সদর উপজেলার কয়েলগাঁতী গ্রামের আবু নাসের নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘স্কুলে টিফিনে দুধ দেয়ার কারণে ছেলেমেয়েরা স্কুলে নিয়মিত যাচ্ছে। তবে শুনেছি এ কার্যক্রম নাকি বন্ধ হয়ে যাবে। কর্মসূচি বন্ধ হলে স্কুলে উপস্থিতির হার কমে যেতে পারে। এজন্য স্কুল মিল্ক কর্মসূচি চালু রাখা দরকার।’

মেধাবী প্রজন্ম গড়ে তুলতে স্কুল মিল্ক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পুষ্টির জোগান পাবে এবং সুস্থ সবলভাবে বেড়ে উঠবে বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী। তিনি বলেন, ‘আমার সংসদীয় এলাকায় দুটি স্কুলে এ কর্মসূচির মাধ্যমে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী টিফিনের সময় দুধ পাচ্ছে। এ কর্মসূচি মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে। যেহেতু এটি নির্দিষ্ট সময়ের প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে, তাই কর্মসূচি বন্ধ না করে আরো বেশি স্কুলে সম্প্রসারণ করলে শিক্ষার্থী উপস্থিতি বাড়বে।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ  কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির মাধ্যমে নিরাপদ ও পুষ্টিকর দুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট উপজেলার কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ কার্যক্রম শিশুদের সুস্থ, সবল ও সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। পাশাপাশি শিশুদের বিদ্যালয়ে আসতে উৎসাহিত করবে। বিশেষ করে দরিদ্র অঞ্চলে ঝরে পড়া রোধ করতে এ কর্মসূচি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।’

প্রকল্পটি চালু রাখার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন করেছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ। তিনি বলেন, ‘কর্মসুচির আওতায় জেলার সাতটি বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীকে টিফিনে দুধ পান করানো হচ্ছে, যা তাদের মেধা বিকাশে সহায়তার পাশাপাশি স্কুলমুখী হতে অনুপ্রাণিত করছে। কর্মসূচির চালু হওয়ার পর এসব স্কুলে তুলনামূলক উপস্থিতির হার অনেক বেশি।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন