চীনে উইন্ডোজ ও অ্যান্ড্রয়েডের বিকল্প হয়ে উঠছে ওপেনহারমনি

বণিক বার্তা ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের জের ধরে হারমনিওএস তৈরি করে হুয়াওয়ে ছবি: রয়টার্স

চীনের শেনজেনে হারমনি ইকোসিস্টেম ইনোভেশন সেন্টারে সম্প্রতি ড্রোন, রোবটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি পণ্য প্রদর্শন করেছে হুয়াওয়ে। এসব পণ্যে উইন্ডোজ ও অ্যান্ড্রয়েডের পরিবর্তে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম ওপেনহারমনি ব্যবহার করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা হুয়াওয়ের অপারেটিং সিস্টেমের একটি ওপেন সোর্স সংস্করণ। ওপেনহারমনির মাধ্যমে চীনের প্রযুক্তি পণ্যে উইন্ডোজ ও অ্যান্ড্রয়েডের নির্ভরশীলতা কমানোর চেষ্টা করছে হুয়াওয়ে। খবর রয়টার্স। 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধের জের ধরে হারমনিওএসের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ২০১৯ সালে প্রথম মার্কিন প্রযুক্তি ব্যবহারে হুয়াওয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর প্রভাবে গুগল মোবাইল সার্ভিসেস (জিএমএস) ব্যবহারে বাধার মুখে পড়ে চীনের প্রতিষ্ঠান। একই কারণে হুয়াওয়ের ডিভাইস জিমেইল, ম্যাপ, প্লেস্টোরসহ গুগলের পরিষেবা ব্যবহারের সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। এর পরই হুয়াওয়ে নিজস্ব মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম তৈরি শুরু করে। 

বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি খাতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্য নিয়েছে বেইজিং। এ লক্ষ্য অর্জনে এখন কৌশলগত অংশ হয়ে উঠেছে হুয়াওয়ে। প্রতিষ্ঠানটি অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে যানবাহনের সফটওয়্যার তৈরিতেও কাজ করছে। 

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চান চীন নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করুক। অ্যান্ড্রয়েড ও উইন্ডোজের মতো পশ্চিমা প্রযুক্তির ওপর নির্ভরতা কমানোর লক্ষ্যে ওপেনহারমনি এখন চীনের জাতীয় অপারেটিং সিস্টেম হিসেবেও প্রচার হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এ পদক্ষেপ চীনে পশ্চিমা বাজারের আধিপত্য কমাতে সাহায্য করবে।

এদিকে চীনে হুয়াওয়ের তৈরি হারমনিওএসের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে দেশটিতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ব্যবহৃত মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম ছিল হারমনিওএস। তবে ব্যবহারকারীর হিসাবে অ্যাপলের আইওএসের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও অ্যান্ড্রয়েডের তুলনায় এখনো পিছিয়ে হারমনিওএস।

অবশ্য হুয়াওয়ে এখন আর সরাসরি ওপেনহারমনি নিয়ন্ত্রণ করছে না। প্রতিষ্ঠানটি অপারেটিং সিস্টেমটির সোর্স কোড ওপেনঅ্যাটম ফাউন্ডেশন নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানকে দিয়েছে। তবে ওপেনহারমনি এবং হারমনিওএস প্রায় একই ইকোসিস্টেমের অংশ হিসেবে দেখা হয়। 

গত সপ্তাহে এক ডেভেলপার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের কনজিউমার বিজনেস গ্রুপের চেয়ারম্যান রিচার্ড ইউ বলেন, ‘হারমনি চীনের ভবিষ্যৎ ডিভাইসের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তিগত অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করেছে। মার্কিন বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই চীন প্রযুক্তিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের প্রচেষ্টা বাড়িয়ে দিয়েছে।

চলতি বছর হারমনিওএসের নতুন সংস্করণ উন্মোচন করেছে হুয়াওয়ে। এতে আর অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ কাজ করবে না। এটি চীনের নিজস্ব অ্যাপ ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে। 

এদিকে ওপেনহারমনির ব্যবহার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গত বছর চীনের ৭০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান এতে আর্থিক অনুদান দিয়েছে। এখন দেশটির ৪৬০টিরও বেশি পণ্যে ওপেনহারমনি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রযুক্তি বিশারদদের মতে, ওপেনহারমনিকে ওপেন সোর্স করার মাধ্যমে অ্যান্ড্রয়েডের মতো সাফল্য পাওয়ার চেষ্টা করছে হুয়াওয়ে। লাইসেন্সিং ব্যয় অপসারণ ও কোম্পানিগুলোকে তাদের সিস্টেম কাস্টমাইজ করার সুবিধা দিচ্ছে এ টেক জায়ান্ট।

ওপেনহারমনি প্রধানত চীনে ব্যবহৃত হলেও এর ইউরোপীয় ডেভেলপার গ্রুপ রয়েছে, যারা ‘‌অনিরো’ নামের একটি সিস্টেম ডেভেলপমেন্টে কাজ করছে। এটি ফোন ও ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইসগুলোয় ব্যবহার করা যেতে পারে। হুয়াওয়ে জানিয়েছে, বর্তমানে ৯০ কোটির বেশি ডিভাইস হারমনিওএস ব্যবহার করছে। এর মধ্যে রয়েছে স্মার্টফোন, স্মার্ট ওয়াচ ও গাড়ির সফটওয়্যার সিস্টেম। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন