প্রথম প্রান্তিকে পূর্বাভাসকে ছাড়িয়ে গেল চীনের প্রবৃদ্ধি

বণিক বার্তা ডেস্ক

শিল্পোৎপাদনসহ বেশ কয়েকটি খাত চীনের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে ছবি: রয়টার্স

কভিড-১৯-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে চীনের মন্থরতা প্রভাব ছিল বৈশ্বিক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জিডিপির গতি কাঙ্ক্ষিত পথে রাখতে একাধিক উদ্যোগও নিয়েছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এ অর্থনীতি। সে প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকসের সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) দেশটির অর্থনীতি প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত হারে বেড়েছে। খবর নিক্কেই এশিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় এ প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি বেড়েছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ, যা আগের প্রান্তিকের ৫ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি।

এর আগে অর্থনীতিবিদরা জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে জিডিপির পূর্বাভাস ৫ শতাংশের নিচে রেখেছিলেন। তারা ৪ দশমিক ৫ শতাংশ গড় পূর্বাভাস দিয়েছিলেন।

চীন আনুষ্ঠানিকভাবে চলতি বছর ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। প্রথম প্রান্তিকের এ প্রবৃদ্ধি সে লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। সাম্প্রতিক জিডিপি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি চীনের বার্ষিক উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শক্তিশালী অবদান রাখবে।

২০২৩ সালের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপি আগের প্রান্তিকের তুলনায় ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, যা পূর্বাভাসে দেয়া ১ দশমিক ৪ শতাংশের বেশি।

দেশটির বেশ কয়েকটি খাত এ অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে সহায়তা করেছে। বিদ্যুৎ, তাপবিদ্যুৎ, গ্যাসের মতো ম্যানুফ্যাকচারিং ও ইউটিলিটি পরিষেবাগুলোয় উৎপাদন ৬ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। কৃষি উৎপাদন, ভ্যালু অ্যাডেড ইনফরমেশন সার্ভিস ও পরিবহনভিত্তিক পরিষেবাও এ টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে অবদান রেখেছে।

অন্যদিকে গৃহস্থালি ব্যয়ের একটি পরিমাপক ভোগ্যপণ্যের খুচরা বিক্রি ৪ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। এতে ভূমিকা রেখেছে খাদ্য ও ক্যাটারিং শিল্প। তবে ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে ৫ দশমিক ৫ শতাংশের তুলনায় মার্চে ভোক্তা পণ্যের চাহিদা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ, যা ভোক্তাদের আস্থার অবনমনের প্রমাণ রেখেছে।

চীনের শিল্পোৎপাদনে প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ফলাফলের পেছনে কিছু কারণ দেখছেন অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ লুইস লু। সাম্প্রতিক এ প্রতিবেদন সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উৎসবের মৌসুমে গৃহস্থালি ব্যয় বৃদ্ধি ও সরকারি নীতিমালায় শিথিলতাজনিত বিনিয়োগ বৃদ্ধি চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে।’

গত মাসে চীন সরকার ব্যবসায়িক আস্থা বজায় রাখতে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। মূলত চলতি বছরের জন্য দেয়া ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাকে কার্যকর করতেই এ পদক্ষেপ। চীনের সরকারি কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে জানান, শিল্প সরঞ্জাম পরিমার্জন ও ভোগ্যপণ্য বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার জন্য বড় আকারের আর্থিক সহায়তা দেবে সরকার। এর পরিমাণ প্রায় ৫ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ৬৯ হাজার কোটি ডলার হতে পারে।

তবে প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও চীনের অর্থনীতির জন্য এখনো বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। নতুন বাড়ি বিক্রি ১৯ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। পাশাপাশি স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ ৪ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। যার মধ্যে সম্পত্তি বাদ দিয়ে শুধু অবকাঠামো ও শিল্পোৎপাদনের ব্যয়ের জন্য স্থায়ী সম্পদে বিনিয়োগ ৯ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া দেশটির সার্বিক রফতানি কমে যাওয়া, প্রধান রফতানি পণ্যের চাহিদা কমে আসা ও মূল্য সংকোচনের মতো প্রতিবন্ধকতা থাকলেও চীন গত প্রান্তিকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি তৈরিতে সক্ষম হয়েছে।

জিডিপির পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর নিউইয়র্কভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ও আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকস বলেছে, ‘‌আমাদের ধারণা এখনো নীতি শিথিলকরণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বিশেষ করে ভোক্তা চাহিদা বিবেচনা করলে চীনের আবাসন খাতে মন্দা ও কাঠামোগত প্রতিকূলতা একটি টেকসই অর্থনৈতিক সম্প্রসারণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন