ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার পুঁজিবাজারে

বণিক বার্তা ডেস্ক

চলমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে জাপানের নিক্কেই সূচকে ১ শতাংশ পতন দেখা যায় ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেন-রাশিয়ার পর গাজা-ইসরায়েল সংঘাত বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে নানামুখী সংকট তৈরি করেছে। এর সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইসরায়েলের ওপর ইরানের সাম্প্রতিক আক্রমণ, যা একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কা জাগিয়ে তুলেছে। নতুন ঝুঁকির প্রভাব দেখা গেছে এশিয়ার শেয়ারবাজারে। এ অঞ্চলের বাজার সূচকগুলোয় পতনের পাশাপাশি গতকাল দাম বেড়েছে স্বর্ণের। খবর রয়টার্স।

এমএসসিআই সূচক অনুসারে, জাপানের বাইরে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অন্যান্য দেশে শেয়ারের বিস্তৃত সূচক দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে। অন্যদিকে মূল্যস্ফীতির চাপ আরো বেশিদিন স্থিতিশীলভাবে ধরে রাখবে যুক্তরাষ্ট্র, ক্রমবর্ধমান এমন প্রত্যাশার মাঝে ইয়েনের বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার ৩৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতায় রয়েছে।

১ এপ্রিল সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলার ঘটনায় ইসরায়েলকে দায়ী করে তেহরান। এর প্রতিশোধ হিসেবে ১৩ এপ্রিল গভীর রাতে ইসরায়েলে বিস্ফোরক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। মধ্যপ্রাচ্যের চিরশত্রু দুই দেশের মধ্যে প্রকাশ্য যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে অঞ্চলটিতে আরো বেশি করে টেনে আনবে কিনা এ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে পাল্টা আক্রমণে অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

ক্রমবর্ধমান এ ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গতকাল এশিয়ার বাজারে অস্বস্তি ছড়িয়ে পড়ে। জাপানের নিক্কেই সূচকে ১ শতাংশ পতন দেখা যায়। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি/এএসএক্স ২০০-এ প্রায় দশমিক ৫ শতাংশ পতন ঘটে। এছাড়া হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক দশমিক ৬৩ শতাংশ কমেছে।

বাজারের এমন নিরাপত্তাহীনতার মাঝে স্বর্ণের দাম দশমিক ৫ শতাংশ বেড়ে আউন্সপ্রতি ২ হাজার ৩৫৬ ডলার ৩৯ সেন্টে পৌঁছেছে। একই সঙ্গে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে ডলারের বিনিময় হারও।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম নিয়েও এখন বড় ধরনের শংকা দেখা দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের গ্রুপ প্রধান অর্থনীতিবিদ নীল শিয়ারিং বলেন, ‘ইরান-ইসরায়েলের এ সংঘাত বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হচ্ছে কিনা এবং জ্বালানির বাজারে এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এটিই মূল ঝুঁকি।’

সঙ্গে যোগ করেন, ‘জ্বালানি তেলের দামের বৃদ্ধি উন্নত অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতিকে লক্ষ্যে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। জ্বালানির উচ্চ মূল্য মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর বস্তুগত প্রভাব পড়বে।’

ভূরাজনৈতিক উত্তেজনার মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান ব্যাংকগুলোর প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ওয়াল স্ট্রিট প্রভাবিত হয়েছে। গত শুক্রবার তিনটি প্রধান সূচকই ১ শতাংশের বেশি কমেছে ও সাপ্তাহিক লেনদেনে লোকসান দেখা দেয়। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক জানুয়ারির পর থেকে সবচেয়ে বড় সাপ্তাহিক শতাংশীয় হারে ক্ষতি দেখেছে। একই সময়ে ডাউ জোনস ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজের সাপ্তাহিক ক্ষতি ছিল গত মার্চের পর থেকে সবচেয়ে বেশি।

চীন অবশ্য এ প্রবণতার বাইরে রয়েছে। কোম্পানির লিস্টিং, ডিলিস্টিং ও কম্পিউটার-চালিত প্রোগ্রামের মাধ্যমে ট্রেডিং শক্তিশালী করতে ১২ এপ্রিল দেশটির সিকিউরিটিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থা খসড়া নিয়ম জারি করে। এর প্রভাবে দেশটির পুঁজিবাজার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। বাজারের অংশগ্রহণকারীরা চীনের পদক্ষেপকে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখছেন। এদিন ব্লু-চিপ সিএসআই৩০০ সূচক প্রায় ২ শতাংশ বেড়েছে, একই সময়ে সাংহাই কম্পোজিট সূচক ১ দশমিক ২ শতাংশ বাড়ে।

বৈশ্বিক এ ঝুঁকির প্রভাব বিটকয়েনের বাজারকেও প্রভাবিত করেছে। বিটকয়েনের বিনিময় হার ৩ শতাংশের বেশি কমে ৬৫ হাজার ১০ ডলারে নেমে এসেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন