নতুন শ্রেণী বিরোধ তৈরি করছে মিলেনিয়ালদের সম্পদ ব্যবধান?

সিএনবিসি

ধনী মিলেনিয়ালের বড় একটি অংশ সম্পদের মালিক হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে ছবি: রয়টার্স

সম্পদের ব্যবধান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিচারের বড় একটি সূচক। প্রজন্ম, দেশ বা অর্থনীতি ভেদে এ ব্যবধান ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব তৈরি করি। এ পার্থক্যের মাঝে সাম্প্রতিক দশকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ধনী মিলেনিয়াল প্রজন্ম। এ প্রজন্মের আর্থিক সংগতিতে বড় ধরনের মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। কাছাকাছি প্রজন্মে এমন বৈষম্য এতটা প্রকটভাবে দেখা যায়নি বলে সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে। যাকে ‘নতুন শ্রেণী বিরোধ’ বলে অভিহিত করেছেন গবেষকরা।

১৯৮১-৯৬ সালের মধ্যে জন্ম হয়েছে— এমন ব্যক্তিদের মিলেনিয়াল বেবি বলা হয়। জরিপে দেখা গেছে, এ প্রজন্মের মধ্যে সম্পদের ব্যবধান অনেক বেশি। শিক্ষা ঋণ, স্বল্প বেতনের চাকরি, অতিরিক্ত আবাসন খরচ ও স্বল্প সঞ্চয় নিয়ে টিকে থাকতে লড়াই করছে মিলেনিয়ালের বড় একটি অংশ। এ পরিস্থিতি শুধু মিলেনিয়ালই নয়, পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায়ও অনেক বেশি নাজুক অবস্থাকে চিত্রায়িত করে। এ নিয়েই তৈরি হচ্ছে নতুন শ্রেণী বিরোধের রূপরেখা।

এ জরিপে তুলনামূলক হিসাবের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বেবি বুমারদের। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬-৬৪ সালের মধ্যে যাদের জন্ম তাদের এ প্রজন্ম ধরা হয়। জরিপে দেখা যায়, ৩৫ বছর বয়সে বেবি বুমার প্রজন্ম যে পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ছিল তার তুলনায় বর্তমানের মিলেনিয়ালদের সম্পদের পরিমাণ ৩০ শতাংশ কম। কিন্তু ওই সময়ের তুলনায় সর্বশেষ প্রজন্মে বৈষম্যের পরিমাণ বেশি। যেমন একই বয়সের বেবি বুমারদের তুলনায় শীর্ষ ১০ শতাংশ মিলেনিয়ালের সম্পদ ২০ শতাংশ বেশি।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস জার্নালে প্রকাশিত জরিপভিত্তিক গবেষণাপত্রটি লেখেন রব জে গ্রুইজটারস, জ্যাচারি ভ্যান উইংকল ও অ্যানেট ইভা ফাসাং। তারা বলেন, ‘মিলেনিয়াল প্রজন্মের মধ্যে অনেক বেশি বৈচিত্র্য রয়েছে। এর কারণে গড়ে তাদের আর্থিক অবস্থার সঠিক চিত্র তুলে ধরা যায় না।’

সঙ্গে যোগ করেন, ওই প্রজন্মের মার্ক জাকারবার্গ ও স্যাম অল্টম্যানের মতো অনেকেই সম্পদ অর্জনে খুবই ভালো অবস্থানে আছেন, যখন বেশির ভাগই টিকে থাকার চেষ্টা করছে।

সংজ্ঞা অনুসারে, এখন মিলেনিয়ালদের বয়স ২৮-৪৩ বছরের মধ্যে। তারা আর্থিক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আর্থিক সংকটের কারণে তাদের খুব কম সংখ্যকের বাড়ির মালিকানা রয়েছে। সম্পদের তুলনায় বড় ঋণ, কম মজুরি ও অস্থায়ী চাকরি তাদের জন্য বড় সমস্যা। আবার দ্বৈত আয়ের পরিবার গঠনের হার কমে আসছে। একই সময়ে শীর্ষ ১০ শতাংশ মিলেনিয়াল সম্পদের পরিমাণ বাড়িয়ে চলেছেন। তাদের হাত রয়েছে বড় পদের চাকরি ও আয়েশি জীবনের সব ধরনের ব্যবস্থা।

এছাড়া মিলেনিয়ালদের মধ্যে যারা স্নাতক শেষ করেছেন ও তুলনামূলকভাবে দেরিতে পারিবারিক জীবন শুরু করেছেন বেবি বুমারদের তুলনায় তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত ও সম্পদ বেশি।

মিলেনিয়ালদের মধ্যে সম্পদ অর্জনের উল্লেখযোগ্য কারণ উত্তরাধিকার, যাকে গ্রেট ওয়েলথ ট্রান্সফার বা সম্পদের বৃহত্তর হাতবদল বলা হয়। এর প্রভাবে ২০ বছরের মধ্যে বেবি বুমার প্রজন্মের সম্পদের ৭০-৯০ ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হবে পরের প্রজন্ম। এর বড় একটি অংশ পাবে মিলেনিয়াল প্রজন্ম, সে হস্তান্তর প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়েছে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউবিএসের প্রাইভেট ওয়েলথ ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান জন ম্যাথিউস বলেন, ‘‌১০ বছর ধরে আমরা সবাই সম্পদের বৃহত্তম হাতবদলের কথা বলে আসছি, তা চলছে। বিশ্বের বিলিয়নেয়ারদের গড় বয়স এখন প্রায় ৬৯। এ পুরো রূপান্তর বা সম্পদ হস্তান্তর দ্রুতগতিতে হবে।’

জরিপে বলা হয়, সামনের বছরগুলোয় সম্পদের হাতবদলের কারণে মিলেনিয়ালদের মধ্যে শ্রেণী উত্তেজনা বাড়তে পারে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কেন্দ্রিক সম্পদ প্রদর্শন আন্তঃপ্রজন্ম শ্রেণী যুদ্ধ তৈরি করতে পারে। এ প্রদর্শনবাদিতায় মিলেনিয়ালদের মধ্যে কম সামর্থ্যবানরাও বিলাসী ও অতিরিক্ত খরুচে জীবনের দিকে ঝুঁকবেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান ওয়েলস ফার্গোর এক জরিপে দেখা গেছে, আড়াই লাখ থেকে ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগযোগ্য সম্পদ আছে এমন ২৯ শতাংশ সচ্ছল মিলেনিয়াল জানিয়েছেন, তারা কখনো কখনো এমন পণ্য কেনেন, যা তাদের সাধ্যের বাইরে। অন্যদিকে ৪১ শতাংশ মিলেনিয়াল স্বীকার করেছেন যে জীবনযাপনে তারা ক্রেডিট কার্ড বা ঋণের ওপর নির্ভর করেছেন। অথচ জেন এক্স (১৯৬৫-৮০-এর মধ্যে জন্ম) ও বেবি বুমারদের ক্ষেত্রে এ হার যথাক্রমে ২৮ ও ৬ শতাংশ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন