তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে হচ্ছে রাশিয়া-চীনের অর্ধেক লেনদেন

বণিক বার্তা ডেস্ক

পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মধ্যে রাশিয়া ও চীনের বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে ছবি: রয়টার্স

ইউক্রেনে হামলার পর থেকে রাশিয়ার ওপর একাধিকবার বাণিজ্য ও আর্থিক খাতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির মিত্ররা। এর মধ্যে সেকেন্ডারি বা পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে রয়েছে ক্রেমলিনের সঙ্গে লেনদেনকারী দেশগুলো। এ ঝুঁকি এড়াতে অনেক দেশ রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনে বেছে নিচ্ছে তৃতীয় কোনো পক্ষ। বিশেষ করে চীনের ব্যাংকগুলো দুই দেশের মধ্যে লেনদেনের অর্ধেকই সারছে মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সম্প্রতি একাধিক বাণিজ্য পরামর্শক ও ব্যাংকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাশিয়াবিরোধী পদক্ষেপের অংশ হিসেবে গত ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। এতে রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আরো কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দেয়া হয়। ওই সময় বিদেশী ব্যাংকগুলোকে রাশিয়াবিরোধী নিষেধাজ্ঞাগুলো মেনে চলার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ বিভাগ। বিষয়টি মস্কোর ঘনিষ্ঠ মিত্র চীনের ওপরও প্রভাব ফেলে।

মার্চে রুশ সংবাদমাধ্যম ইজভেস্তিয়া জানিয়েছিল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চায়নাসহ বেশ কয়েকটি চীনা ব্যাংক পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞার ভয়ে রাশিয়া থেকে ইউয়ানে পেমেন্ট নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এ কারণে চীন থেকে ৮০ শতাংশ পেমেন্ট ফিরে গেছে।

বিষয়টির সঙ্গে ওয়াকিবহাল একটি সূত্র পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মস্কো ও বেইজিংয়ের বাণিজ্যে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনে বেশ কয়েকটি দেশ ব্যবহার হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে হংকং, কিরগিজস্তান, কাজাখস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য দেশে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কিছু কোম্পানি পেমেন্ট পরিষেবায় কার্যক্রম বাড়িয়েছে। রাশিয়া থেকে চীনে লেনদেন দ্রুত করার জন্য তারা অস্থায়ী চেইনও তৈরি করেছে।

মধ্যস্থ করে এমন দুই রুশ পরামর্শক জানান, চীনের সঙ্গে লেনদেন করছে এমন প্রায় অর্ধেক রুশ সংস্থাই মধ্যস্থতাকারীদের সাহায্য নিচ্ছে। ইউক্রেন-সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়া রাশিয়ার প্রধান ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো এক বছর আগেই এসব মধ্যস্বত্বভোগীদের সঙ্গে সমঝোতায় আসে।

অবশ্য আর্থিক লেনদেনের নতুন এ ব্যবস্থা ব্যবসায়ীদের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে। পণ্য গন্তব্যে পৌঁছনোয় দেরি ও অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ায় প্রতিটি লেনদেনে মধ্যস্থতাকারীদের জন্য গুনতে হয় বাড়তি ফি, যা কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত হয়।

এসব ঘটনায় তৃতীয় দেশে চালান আটকের বড় ঝুঁকি থাকে। তা সত্ত্বেও মধ্যস্থতাকারীদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। একটি সূত্র জানিয়েছে, চীন থেকে রাশিয়ায় নেয়ার সময় সম্প্রতি সার্ভারের একটি বড় চালান মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় কাজাখস্তানে বাজেয়াপ্ত হয়।

তবে পুরো প্রক্রিয়ায় লেনদেন ভেস্তে যাওয়ার মতো ঝুঁকি রয়েছে। কারণ চীনা ব্যাংকগুলো লেনদেনে প্রত্যাখ্যান করার আশঙ্কা থাকায় মধ্যস্থতাকারীরা গ্রাহকদের পুরোপুরি গ্যারান্টি দিতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে চুক্তি আনুষ্ঠানিক না হওয়ায় একবার পেমেন্ট ব্যর্থ হলে সে অর্থ ফিরে পেতে রুশ সংস্থাগুলোকে এক প্রকার লড়াই করতে হয়।

বর্তমানে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর মাত্র এক-পঞ্চমাংশ চীনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া মাত্র ৩০ শতাংশ সীমিত আকারে ব্যবহার করতে পারে।

এদিকে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান আশা করছে এ বিষয়ে ক্রেমলিন পদক্ষেপ নেবে। কারণ আগামী মাসে চীন সফরে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে অনেকেই ততটা আশাবাদী নন। তাদের মতে, দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি সত্ত্বেও চীনের ব্যাংকগুলো রাশিয়াকে তাদের অগ্রাধিকারের শীর্ষ রাখতে এখনো ইচ্ছুক নয়।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা হুমকি উপেক্ষা করে ইউক্রেন আক্রমণ করে রাশিয়া। এরপর একাধিকবার ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক বিধিনিষেধের শিকার হয় মস্কো। এ সময় রাশিয়া থেকে কার্যক্রম গুটিয়ে নেয় পশ্চিমা বড় প্রতিষ্ঠানগুলো। তা সত্ত্বেও রুশ অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এর মূল কারণ বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের বাজারে অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে রাশিয়ার উপস্থিতি। যুদ্ধের আগে রাশিয়ার জ্বালানি তেলের মূল ক্রেতা হিসেবে ইউরোপ থাকলেও তখন সামনে চলে আসে চীন। এছাড়া রাশিয়া থেকে পশ্চিমা প্রতিষ্ঠানগুলো সরে আসার পর সে স্থান দখল করে নেয় চীন। সম্প্রতি মস্কোয় চীনের রাষ্ট্রদূত ঝাং হানহুই জানান, দ্বিপক্ষীয় লেনদেন দুই দেশে ২৪ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন