সাভারের হেমায়েতপুরের জোড়পুলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গতকাল তেলবাহী লরি উল্টে আগুনে পাঁচটি গাড়ি পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ আরো আটজন ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গতকাল ভোর সাড়ে ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সাভার ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়।
সাভার ফায়ার সার্ভিস ও হাইওয়ে পুলিশ জানায়, ভোরে তেলবাহী লরি ঢাকা থেকে সাভারের দিকে যাচ্ছিল। লরিটি ভোর সাড়ে ৫টার দিকে জোড়পুল এলাকায় পৌঁছলে মহাসড়কে ইউটার্ন বানানোর লক্ষ্যে সড়কের ওপর রাখা বোল্ডারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে উল্টে যায় লরি। উল্টে যাওয়ার পরপর সড়কের সঙ্গে ঘর্ষণের ফলে তেলবাহী লরিতে আগুন লাগে। লরির আগুন একটি কাভার্ড ভ্যান, দুটি ট্রাক ও একটি প্রাইভেট কারে ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে ঘটনাস্থলে একজন দগ্ধ হয়ে মারা যান।
ফায়ার সার্ভিস ঢাকা-৪ জোনের উপসহকারী পরিচালক মো. আলাউদ্দিন খোকন জানান, ঢাকা থেকে নবীনগরগামী একটি তেলবাহী লরি ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোড়পুল এলাকায় আইল্যান্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে উল্টে যায়। এ সময় একইমুখী পেছনে থাকা চলন্ত তরমুজ ও সিমেন্টবাহী দুটি ট্রাক দুর্ঘটনাকবলিত তেলবাহী লরিকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। পেছনে থাকা আরো একটি পিকআপ ভ্যান ও প্রাইভেট কার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সংঘর্ষ হলে দুর্ঘটনাকবলিত পাঁচটি গাড়িতেই আগুন ধরে যায়। এতে ঘটনাস্থলে একজনের মৃত্যু হয়।
সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সাময়িক দায়িত্ব) মো. বাবুল আক্তার বলেন, ‘স্থানীয়রা আগুন লাগার পরপর আহতদের উদ্ধার করে সড়কের পাশে নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে আগুনে দগ্ধ মৃতদেহটি সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকের পাশে পড়ে ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।’
সাভার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলের আশপাশে পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তার পরও ছয়টি ইউনিটের মাধ্যমে প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নেভানো হয়।’
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, আগুনে দগ্ধ নয়জনকে আনা হয়েছে। এর মধ্যে নজরুল ইসলামকে (৪৫) মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। তার শরীরের শতভাগ পুড়ে গেছে। এছাড়া আগুনে দগ্ধ মিলন মোল্লার (২২) শরীরের ৪৫ শতাংশ, মিমের (১০) ২০ শতাংশ, আল-আমিনের (৩৫) ১০ শতাংশ, নিরঞ্জনের (৪৫) ৮ শতাংশ, হেলালের (৩০) শতভাগ, আব্দুস সালামের (৩৫) ৫ শতাংশ, সাকিবের (২৪) শতভাগ ও আল আমিনের (২২) শরীরের ১৫ শতাংশ পুড়ে গেছে।
এদিকে আহতদের কেউই শঙ্কামুক্ত নন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি গতকাল শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহতদের পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দগ্ধদের কেউ শঙ্কামুক্ত নয়। এসব ক্ষেত্রে আমরা একটা কথা সবসময় বলি, বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত এসব রোগীকে শঙ্কামুক্ত বলা যাবে না।’