গ্যাস সিলিন্ডারের আড়ালে লুকিয়ে জীবন বাঁচায় পথশিশু হযরত

আনিসুর রহমান

ছবি : বণিক বার্তা

পথশিশু হযরত আলীর বয়স ১০ বছর। জীবন চলে বোতল কুড়িয়ে; থাকে রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকায়। ১৮ জুলাই মালিবাগ এলাকায় সে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের মিছিলের মধ্যে পড়ে যায়। মিছিল লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালালে সড়কের পাশে গ্যাস সিলিন্ডারের আড়ালে আশ্রয় নেয় সে। তবে সিলিন্ডারের আড়ালে যাওয়ার আগেই পায়ে লাগে ছররা গুলি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বাকি জীবন পায়ে ছররা গুলি নিয়েই চলতে হবে হযরত আলীকে।

হযরত আলীর ভাষ্য, ওইদিন মালিবাগ এলাকায় নাশতা করে সে তালতলার দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু ফেরার পথে সে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে যায়। তার এক পাশে ছিল ইট-পাটকেল ও লাঠি-বাঁশ হাতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা; অন্যদিকে ছিল সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের সামনে তার আশপাশের কেউ কেউ আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে হাত উঁচু করে। সেও জীবন বাঁচাতে হাত উঁচু করে। তবু রক্ষা পায়নি শিশুটি। পুলিশের ছোড়া এলোপাতাড়ি গুলি এসে তার পায়ে লাগে। পরে পা ছেঁচড়িয়ে কোনো রকমে গ্যাস সিলিন্ডারের আড়ায়ে লুকায় হযরত আলী। 

পুলিশ চলে যাওয়ার পর দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে ওই এলাকা দখলে নেয় একদল লোক। হযরত আলী জানায়, সে প্রথমে তাদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছিল, কিন্তু মেলেনি। একপর্যায়ে কোনো রকমে পাশের গলিতে গিয়ে চিৎকার করে সাহায্য চায় সে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। 

হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটিকে গত পড়শু ছাড়পত্র দেন চিকিৎসকরা। পরে তালতলা এলাকায় খোঁজ নিলেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি।  

ঢামেকের কয়েকজন চিকিৎসক ও সেবিকা শিশুটির দেখভাল করেছেন বলে জানান ডা. আহমেদ আব্দুল কাউয়ুম। তার পায়ের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বণিক বার্তাকে এ চিকিৎসক বলেন, ‘ওর পায়ে ছররা গুলি লেগেছে। এক্স-রে প্রতিবেদন দেখে মনে হচ্ছে, ওর পা আর ঠিক হবে না। আসলে ছররা গুলি বের করা যায় না। সারা জীবনই গুলি বয়ে বেড়াতে হবে। পা থাকলেও তা আর স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে না।’ 

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বরিশালে জন্ম নেয়া হযরত আলী অনেক আগেই বাবাকে হারায়। বাবার মৃত্যুর কিছুদিন পর মা আবার বিয়ে করেন। মূলত এর পর থেকে পথশিশু পরিচয়ে জীবন কাটছে হযরত আলীর। পেটের তাগিদে সে বোতল কুড়ায়। বোতল বেচে যা আসে, তা দিয়েই পেট চলে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন