মানসিক ট্রমা না কাটতেই গুজবে অস্বস্তি পুলিশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

সহকর্মীর মৃত্যু, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনার পর মানসিকভাবে যে ট্রমার মধ্যে পড়েছিল পুলিশ বাহিনী তা এখনো পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সেনাবাহিনীর সহযোগিতা, শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন বার্তাসহ নানা প্রক্রিয়ায় চলে তাদের মনোবল বৃদ্ধির কার্যক্রম। কিন্তু এরই মধ্যে এসেছে নতুন এক সংকট। অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ, কাজে ফিরলে মামলায় যুক্ত করা ও পদোন্নতি, বৈষম্যসহ অভ্যন্তরীণ গুজব ছড়ানোয় পুলিশের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের সংকট পুলিশের মনোবল ফেরার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। 

অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ, ভিভিআইপি সুরক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারির কাজটি করে থাকে বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। গত ৫ আগস্ট জনবিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ এ শাখায় একটি উড়ো তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন দমনে কর্মকর্তাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্য গত ৪ আগস্ট গণভবন থেকে ২৫ কোটি টাকা নিজ অফিসে এনে রাখেন তৎকালীন এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম। কিন্তু পরদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত চলে যাওয়ার পর মনিরুল আর অফিসে যেতে পারেননি। সেই সুযোগে তার বিশ্বস্ত কয়েকজন কর্মকর্তা এ টাকা সরিয়ে ফেলেন। মুহূর্তের মধ্যে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে এসবি সদস্যদের মধ্যে। কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা যখন নতুন করে কাজে যোগ দিতে শুরু করেন ঠিক তখনই এ ধরনের গুজবে অস্বস্তি তৈরি হয় পুলিশে। কিন্তু এসবির অর্থ ব্যবস্থাপনা শাখার হিসাব অনুযায়ী, মনিরুল ২৯ জুনের পর থেকে তার অফিসে বরাদ্দের কোনো টাকা নিয়ে যাননি। 

রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় এলাকাগুলোয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। জনরোষের শিকার হয়ে কর্মস্থল ছেড়ে যাওয়া মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যদের মধ্যে একটি উড়ো তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয় গত ৭ আগস্ট। বলা হয়, কাজে যোগ দিলে তাদের শিক্ষার্থী হত্যার মামলায় যুক্ত করা হবে। এমনকি তাদের গ্রেফতারও করা হতে পারে। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে মেট্রোপলিটনে কর্মরত পুলিশ সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়। অনেকেই কাজে যোগদানে নিরুৎসাহিত হন। কিন্তু পরে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করে জানা যায়, কাজে ফিরলে শিক্ষার্থী হত্যার মামলায় যুক্ত করার কোনো সিদ্ধান্ত কখনই নেয়া হয়নি। 

পুলিশকে কাজে ফেরা থেকে বিরত রাখতেই একটি চক্র এমন তথ্য ছড়িয়েছে। মেট্রোপলিটন পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশেও ছড়ানো হয় উড়ো তথ্য। সেখানে বলা হয়, পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগ দেয়ার ঘটনাগুলো সিনিয়র কর্মকর্তাদের সফলতা হিসেবে তুলে ধরে তাদের অধিকতর পদোন্নতি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ সদস্যদের কোনো কিছুই দেয়া হচ্ছে না। এমন তথ্য ছড়িয়ে পড়লে জেলা পুলিশেও এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি হয়।

গুজবের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের গুজব বা উড়ো তথ্যের বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকে। কেউ গুজব রটিয়ে বাহিনীর মধ্যে অস্বস্তি বা অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন