গণতদন্ত কমিটির তথ্য

আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিআরইউতে গতকাল মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গণতদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার ডাকে সাড়া দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার পতনের আন্দোলনে শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। অন্যদিকে মজুরি আন্দোলনে চারজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়। 

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের ঘটনা অনুসন্ধানে গণতদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এদিন মজুরি আন্দোলনে শ্রমিক হতাহতের তদন্ত প্রতিবেদন পড়ে শোনান অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ ও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

সরকার পতনের আন্দোলনে কতজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘এ আন্দোলনে নিহত-আহত শ্রমিকের সংখ্যা বের করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। তবে আনুমানিক শতাধিক শ্রমিক নিহত হয়েছেন।’

মজুরি আন্দোলনে চারজন শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য দিয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘নিহত চারজনের মধ্যে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একজন কারখানায় আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। ঘুমন্ত অবস্থায় আগুনে পুড়ে যে শ্রমিক মারা গেছেন তার শরীরে ছররা গুলি পাওয়া গেছে। ১২ হাজার শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে ৮৮ জনকে। কিন্তু শ্রমিক হত্যার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি।’

এদিন মজুরি আন্দোলনে নিহত চার শ্রমিকের পরিচয় প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি। নিহতরা হলেন রাসেল হাওলাদার, আঞ্জুয়ারা খাতুন, জালাল উদ্দিন ও ইমরান আহমেদ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের তদন্ত কমিটি গঠন করা নিয়ে প্রশাসন প্রশ্ন তোলে। সুতরাং প্রশাসনও এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। বিজিএমইএ থেকে কোনো তথ্য আমরা পাইনি। শিল্প পুলিশ শ্রমিকদের দমন-পীড়নে কাজ করেছে। শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিল্প পুলিশ বিলুপ্ত করাসহ তদন্ত কমিটির নয়টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলোর মধ্যে অন্যতম—শ্রমিক হত্যার যথাযথ তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে; আমলানির্ভর বিদ্যমান নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিবর্তন করে পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে; কমিশনে নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট করে নতুনভাবে জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করে দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে; মজুরি নির্ধারণ ও নির্দিষ্ট মেয়াদে তার পুনর্বিন্যাস করার গ্রহণযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে যাতে মজুরি নিয়ে আন্দোলনে শ্রমিকদের রাস্তায় নামতে না হয়; মজুরি বকেয়া রাখা, জালিয়াতি, প্রতারণা বন্ধ করতে হবে।

শিল্প পুলিশ বিলুপ্ত করার দাবি করে তারা বলেন, প্রচলিত আইন ভঙ্গ করে কোনো পুলিশ যদি কাউকে খুন কিংবা জখম করে তাহলে ব্যক্তি পুলিশের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও তার দায়িত্ব নিতে হবে। আমরা বরাবর দেখছি শিল্প পুলিশ তার ঘোষিত অবস্থান অনুযায়ী মালিক পক্ষের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা পালন করে, যা শিল্প পরিবেশ ক্ষুন্ন এবং শিল্পাঙ্গনে অনাস্থা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করে। সেজন্য শিল্পের স্বার্থেই এ বাহিনী বিলুপ্ত করতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন