রংপুরে বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান

পূরণ হয়নি ধানের লক্ষ্যমাত্রা নতুন করে বাড়ছে না সময়

এসএম পিয়াল, রংপুর

রংপুর খাদ্য ভবন ছবি: ফাইল/নিজস্ব আলোকচিত্রী

চলতি বছর রংপুর জেলায় আমন ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শেষ হয়েছে ৩১ আগস্ট। নির্ধারিত সময়ে চাল সংগ্রহের মূল লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও ঘাটতি রয়েছে অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রায়। হাজার ৮৬২ টন ধান সংগ্রহ করার কথা থাকলেও গুদামজাত হয়েছে হাজার ৭৭৫ দশমিক ৫৬০ টন। অন্যান্য বছর অভিযানের সময় কিছুটা বাড়ানো হলেও এবার সে সুযোগ পাচ্ছেন না কৃষক মিল মালিকরা। বর্ধিত সময়ের জন্য মিল মালিকরা আবেদন করলেও কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদনে তেমন চেষ্টা চালায়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

রংপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাজার ৮৬২ টন। সংগ্রহ হয়েছে হাজার ৭৭৫ দশমিক ৫৬০ টন। চালের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১ হাজার ২৯৮ টন। এছাড়া অতিরিক্ত আরো হাজার ১২৭ টন সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল। তবে সংগ্রহ হয়েছে ৩২ হাজার ১৮৭ দশমিক ২২০ টন।

উপজেলাভিত্তিক ধান-চাল সংগ্রহের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রংপুর সদর উপজেলা ধান সংগ্রহ হয়েছে ৩৮৩ দশমিক ৪০ টন। আর চাল সংগ্রহ হয়েছে হাজার ২৮০ দশমিক ৩৬০ টন। বদরগঞ্জে ধান-চাল সংগ্রহ হয়েছে যথাক্রমে হাজার ১৮৮ দশমিক ৪০০ এবং হাজার ৩৪ দশমিক ৯৬০ টন। মিঠাপুকুর উপজেলায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ৭৯২ টন এবং  চাল সংগ্রহ হয়েছে হাজার ৩২১ টন। পীরগঞ্জ উপজেলায় ধান চাল সংগ্রহ হয়েছে যথাক্রমে হাজার ১০১ টন হাজার ৩২৪ দশমিক ৬৪০ টন। তারাগঞ্জে ধান সংগ্রহ হয়েছে ১২৬ এবং চাল সংগ্রহ হয়েছে হাজার ৮৬৯ দশমিক ৬৮০ টন। গঙ্গাচড়ায় ধান চাল সংগ্রহ হয়েছে যথাক্রমে ৪৬১ দশমিক ১২০ হাজার ৭৮৫ দশমিক ৭১০ টন। কাউনিয়ায় ধান সংগ্রহ হয়েছে ৬১২ টন চাল সংগ্রহ হয়েছে হাজার ৩৮৮ দশমিক ৩৪০ টন। পীরগাছায় ধান চাল সংগ্রহ হয়েছে যথাক্রমে হাজার ১১২ হাজার ১৮২ দশমিক ৮০ টন।

গত বছর নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ১১ হাজার ৬২ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে গুদামজাত হয়েছিল হাজার ২৬২ দশমিক ৪৪০ টন। এছাড়া ৪০ হাজার ২০৮ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছিল ৩৮ হাজার ৫৯৮ টন। বছর চালের দাম প্রতি কেজি ৩২ টাকা নির্ধারণ করায় গত বছরের চেয়ে চাল সংগ্রহ বেড়েছে। তবে শেষের দিকে পূর্বাঞ্চলে বন্যার কারণে ধানের দাম কিছুটা বেড়েছে। কারণে চাল সংগ্রহ অভিযানে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয় বলে মিল মালিকরা জানিয়েছেন।

ব্যাপারে রংপুর মহানগর মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল আলম বাবু বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ধান-চাল সংগ্রহ অভিযানে এবার আমি হাজার ৭০০ টন চাল দিয়েছি। এর মধ্যে হাসকিং মিলের বরাদ্দ ৫০০ টন বাদ দিয়ে বাকি সব অটোরাইস মিলের। ৬০০ টন করে দুদফায় অতিরিক্ত বরাদ্দ পেলেও বর্ধিত সময় পাইনি। এজন্য প্রথম বরাদ্দ দিতে পারলেও পরের ৬০০ টন চাল দিতে পারেনি। শুরুতে কিছুটা লাভ হলেও শেষ দিকে আগস্টে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা লোকসান হয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে হাজার ২৫০ টাকা, যা আগে কিনেছি প্রতি মণ হাজার ৫০ টাকায়। প্রতি কেজি চাল তৈরিতে ৪৫ টাকারও বেশি লাগছে। এছাড়াও পরিবহনসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই।

রংপুর জেলায় গত বোরো মৌসুমে (২০২৩) ধানের আবাদ হয়েছে লাখ ৩১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। জেলায় বোরো সংগ্রহ অভিযানে ৪৫৩ জন মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে অটোরাইস মিল ২৪টি হাসকিং মিল রয়েছে ৪২৯টি। বোরো সংগ্রহ অভিযানে সরকারিভাবে ধান প্রতি কেজি ৩২ চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা। গত বছর ধানের দাম ধরা হয় ৩০ টাকা এবং চাল ৪৪ টাকা।

রংপুর সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিখিল চন্দ্র বর্মণ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘জেলায় মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি চাল সংগ্রহ হয়েছে। তবে অতিরিক্ত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হয়নি। মূলত শেষের দিকে ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে। এছাড়া কৃষক সময়মতো ধান শুকাতে না পারায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এবার ধান চাল সংগ্রহে বর্ধিত সময় পাচ্ছেন না কৃষক মিল মালিকরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন