আমন খেতের ব্যাপক ক্ষতি

টানা বৃষ্টিতে খুলনায় ভেসে গেছে ৬০ শতাংশ মাছের ঘের

বণিক বার্তা প্রতিনিধি, খুলনা

ছবি: বণিক বার্তা

টানা তিনদিনে খুলনায় বৃষ্টিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে নয় উপজেলার ৬০ শতাংশ মাছের ঘের। এর পাশাপাশি মাঠের আমন ধানসহ অন্য বিভিন্ন সবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি স্থল নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় সোমবার সকাল পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টাতেই খুলনায় মোট বৃষ্টি হয়েছে ১৫৪ মিলিমিটার। আর টানা তিনদিনে বৃষ্টি হয়েছে ৩২৬ মিলিমিটার।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তিনদিনের টানা বৃষ্টিতে জেলায় ৮৫ হাজার ৬০০ হেক্টর আমন ধানের খেত কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাষ করা শীতকালীন সবজিসহ অন্য ফসলের মধ্যে দুই হাজার ৩২৫ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে।

তিনি বলেন, গত এক দশকে খুলনা অঞ্চলে মাছের ঘেরের আইলে সবজি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। সারা বছরব্যাপী এখানে সবজি উৎপাদিত হয়। বিশেষ করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন এখানকার কৃষকেরা। এই বৃষ্টিতে এসব সবজি গাছের শিকড় ডুবে যায়। দমকা বাতাসে অনেক গাছের মাচা ভেঙে গেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন কয়রা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলার কৃষকরা। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন জানান, খুলনার ডুমুরিয়াকে বলা হয় সবজির ভাণ্ডার। বছরে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকার মতো সবজি বিক্রি হয় এখান থেকে। এই বৃষ্টিতে শীতকালীন সবজি এবং খরিপ-২ মৌসুমের ফসলের খুব ক্ষতি হয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তা ইবনে আমিন বলেন, চলতি বছর ডুমুরিয়া উপজেলার মাগুরখালী, আর্টলিয়া, সরাপপুর, ভান্ডারপাড়াসহ ১৪ ইউনিয়নের সবগুলোতে অসময়ের তরমুজ চাষ হয়েছে। প্রায় ৩০৫ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ২০০ কৃষক মাচান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের তরমুজের আবাদ করেছেন। এই বৃষ্টিতে তাদের অনেকেই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

কয়রা উপজেলা মৎস্য অফিসার সৈকত মল্লিক (অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলেন, কয়রায় কয়েক দিনের টানা বর্ষণে প্রায় ৭০০ মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। মৎস্যচাষিদের মাছ টিকিয়ে রাখতে বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল জানান, টানা বৃষ্টিতে খুলনার নয় উপজেলায় ৬০ শতাংশের বেশি মাছের ঘের ভেসে গেছে। তিনি বলেন, বিশেষ করে চিংড়ি ঘেরগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন মাছ তোলার সময়। এ সময়ে ঘের ভেসে যাওয়ায় মৎস্যচাষীরা খুবই লোকসানের মুখে পড়বেন।

প্রসঙ্গত, জেলায় ৪২৭টির মধ্যে ভরাট ও সরু হয়ে নাব্য হারিয়েছে ২৭২টি খাল। ইজারা দেয়া আছে ১১৬টি। নেট-পাটা ও বাঁধ দিয়ে এসব খালে চলছে খণ্ড খণ্ড মাছ চাষ। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানির অবাধ প্রবাহ। সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। পানিবন্দি হচ্ছে আশপাশের শত শত মানুষ।

খুলনা মেট্রোপলিটন থানাসহ ৯ উপজেলায় ৪২৭টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে প্রবহমান রয়েছে ১৫৫টি। ভরাট ও সরু হয়ে ২৭২টি খালের নাব্য নেই। নাব্য হারানো খালের মধ্যে লবণচরায় ২টি, দৌলতপুর ২টি, রূপসায় ৩০টি, তেরখাদায় ৫টি, ফুলতলায় ৩৭টি, দিঘলিয়ায় ১৪টি, ডুমুরিয়ায় ৪৩টি, বটিয়াঘাটায় ৫৭টি, দাকোপে ৪০টি, কয়রায় ২৭টি ও পাইকগাছায় ১৫টি।

এছাড়া ৪২৭টি খালের মধ্যে ৯ উপজেলায় ইজারা দেয়া আছে ১১৬টি। যেগুলো নেট-পাটা ও বাঁধ দিয়ে খণ্ড খণ্ড করে মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে পানির অবাধ প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। খালের আশপাশে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। ফসলের খেত ও মৎস্যঘের ডুবে যাচ্ছে। অনেক বসতবাড়িও পানিতে নিমজ্জিত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন