আকিজ বশির গ্রুপের বড় বিনিয়োগ

আজ বাজারে আসছে ‘আকিজ বশির গ্লাস’

নিজস্ব প্রতিবেদক

শেখ বশির উদ্দিন

আকিজ বশির গ্রুপের ‘আকিজ গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়েছে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে। এ সময়ের মধ্যে কভিড মোকাবেলা করতে হয়েছে। এরপর দেশে অর্থনৈতিক সংকটে হতে হয় ব্যাংকিং জটিলতার মুখোমুখি। সব সংকট কাটিয়ে আজ বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসছে ‘আকিজ বশির গ্লাস ’। 

জানা গেছে, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলায় ১২৫ একর জমিতে কারখানা স্থাপন করেছে আকিজ গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কারখানাটি গড়তে আকিজ বশির গ্রুপের বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিনিয়োগ এসেছে। কারখানাটিতে সরাসরি কর্মসংস্থান হবে প্রায় এক হাজার মানুষের।  

প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ঘরে ব্যবহারের জন্য নানা ধরনের উন্নত মানের কাচ উৎপাদন শুরু হয়েছে কারখানাটিতে। দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ৬০০ টন। আধুনিক ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্টটিতে পণ্যের মূল্য সংযোজন বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হয়েছে। রয়েছে অত্যাধুনিক স্যান্ড পিউরিফিকেশন পদ্ধতি। এতে কাচের স্বচ্ছতা তুলনামূলক বেশি। পোর্টফোলিওতে ক্লিয়ার কালার রিফ্লেক্টিভ সব ধরনের প্রডাক্ট রয়েছে। আগামী দিনগুলোয় নতুন ভ্যালু অ্যাডিশনের লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। 

এ বিষয়ে আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ বশির উদ্দিন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে এ বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কভিড ও কভিডের পরে ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতাসহ সব মিলিয়ে একটু দেরি হয়ে গেল। এখন আমরা বাংলাদেশের মধ্যে “বেস্ট পসিবল” গ্লাস উৎপাদন করছি। সোমবার আমরা প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে পণ্য বাজারে আনছি। প্রকল্পটিতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। অধিকাংশই ব্যাংকের অর্থায়ন।’ 

শেখ বশির উদ্দিন জানান, প্রকল্পটিতে তারা ৭১ শতাংশ নবায়নযোগ্য ও বর্জ্য জ্বালানি ব্যবহার করেছেন। তাদের একটি পূর্ণ সার্কুলার বর্জ্য শোধনাগার রয়েছে, যেখানে পানির শতভাগ পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। কমানো হয়েছে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার। 

এ অঞ্চলের সেরা স্যান্ড ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি নিজেদের দাবি করে আকিজ বশির গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ মানের গ্লাস উৎপাদন করব বলে আশা করি। গ্লাসের লৌহকণিকার উপস্থিতির ওপর এর গুণগত মান নিশ্চিত হয়। আমাদের আধুনিকতম স্যান্ড প্রসেসিংয়ের জন্য সর্বনিম্ন পরিমাণ (পিপিএম) লৌহকণিকা থাকার ফলে অন্য সব গ্লাসের তুলনায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘দেশের সবচেয়ে দক্ষ জ্বালানি ব্যবস্থাটি আমাদের প্রকল্পের। ফলে এখানে সবচেয়ে কম জ্বালানি ব্যবহার হবে। গ্লাসের আকার বিবেচনায় আমাদের গ্লাস প্যানেল সবচেয়ে নমনীয়। বর্তমান ভ্যালু অ্যাডিশন প্রপজিশনগুলো বিবেচনায় আমরা অনেক পরিবেশবান্ধব। এক-দুই বছরের মধ্যে চমৎকৃত বিভিন্ন গ্লাস পণ্য বাজারে নিয়ে আসব।’ 

রফতানি সম্ভাবনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোয় এ পণ্য রফতানির সম্ভাবনা আছেই। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য হলো নিত্যপ্রয়োজনীয় গ্ণাস নয়, বরং আমরা ভ্যালু অ্যাডেড গ্লাস রফতানি করতে চাই। শাওয়ার এনক্লোজার, মিররস—এ পণ্যগুলো আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে নিয়ে যেতে চাই। আমরা মনে করি এ ধরনের ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রফতানি করতে আমাদের বছর খানেক সময় লেগে যাবে।’  

শিল্পসংশ্লিষ্টদের দাবি, বছরে ৪ হাজার কোটি টাকার মতো কাচ বিক্রি হয়। দেশে প্রতি বছর ব্যবহার হয় সোয়া পাঁচ লাখ টন কাচ। দ্রুত নগরায়ণের কারণে এক দশক ধরে এর পরিমাণ গড়ে ১৫ শতাংশ হারে বাড়ছে। ক্লিয়ার, কালার, রিফ্লেক্টিভ—তিন ধরনের কাচের ব্যবহার দেশে বেশি। দেশে কাচপণ্য উৎপাদনকারী প্রধান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে নাসির গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ ও পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ। এছাড়া রয়েছে এবি গ্লাস ও রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন