গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

আমাদের বন্যা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : সংগৃহীত

ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। বিশেষ করে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। ভারত এ বছরের মতো আগামীতেও একই কাজ করবে। তাই আমাদের এখানে পানি নিষ্কাশন ও বন্যা ব্যবস্থাপনা তৈরি করতে হবে। এমন কিছু করতে হবে যাতে ভারত পানি ছাড়লে আমাদের এখানে বন্যা না হয়। এজন্য পানি নামার পথগুলো সচল রাখতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। 

গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বন্যা-পরবর্তী কৃষি ব্যবস্থাপনা নিয়ে সেন্টার ফর এগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজের (ক্যাপস) আয়োজনে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা তাদের পরামর্শ তুলে ধরেন।

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যে বন্যা হয়েছে তা স্বাভাবিক বন্যা নয়। ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পানি এসেছে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরীভাবের কারণে। পরিকল্পিতভাবেই এ পানি ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষ কখনো এ রকম বন্যা দেখেনি। গোমতী নদী পাহাড়ি নদী। সেখান থেকে ঢলের পানি এসে বন্যা হলেও তা মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায়, খুব বেশি ক্ষতি করতে পারে না। ভারত আবারো এ রকম করবে। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জের মেডিটেশন অ্যান্ড অ্যাডাপটেশনের দিকে নজর দিতে হবে। আবারো ওই এলাকায় বন্যা হতে পারে। এছাড়া বন্যা-পরবর্তী রোগ থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

মূল প্রবন্ধে ক্যাপসের নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় পরামর্শ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি, বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন ও আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নির্ধারণ করে দ্রুত পুনর্বাসনকাজ শুরু করতে হবে। এছাড়া আগাম শীতকালীন শাকসবজি, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ অঞ্চল উপযোগী ফসল চাষের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে। বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উঁচু জমিতে নাবী জাতের আমনের বীজতলা, পলি ব্যাগে অথবা বেডে বিভিন্ন সবজি, চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

ক্যাপসের চেয়ারম্যান কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড. মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বন্যাদুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, আবাসন তৈরি ও মেরামতসংক্রান্ত পুনর্বাসনকাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণপূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশবিষয়ক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণপূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। কৃষকদের শস্যঋণের/কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে ঋণগ্রস্তদের ঋণ মওকুফ অথবা ঋণের কিস্তি মওকুফ করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোশাররফ হোসেন, ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, পিকেএসএফের ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন