ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে ডিজিটাল হবে আয়কর ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা ( ফাইল ছবি)

আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরই মধ্যে চারটি বিশেষায়িত কর ইউনিট চালু করছে সংস্থাটি। যার মধ্যে তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ করবে। এজন্য জনবল নিয়োগ চলমান রয়েছে। অফিস ভাড়া নেয়া হয়েছে। চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।

এনবিআর বলছে, কর আহরণ ব্যবস্থা ডিজিটাল করাসহ এনবিআরের বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মপদ্ধতিতে সংস্কার আনার দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। করদাতারা হয়রানি ও ঝামেলাবিহীন কর ব্যবস্থার দাবি করছেন দীর্ঘদিন। যেসব করদাতা আয়কর অফিসে না গিয়েই আয়কর দিতে চান, তাদের কথা বিবেচনায় আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল করতে চালু করা হচ্ছে ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট। 

ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের জন্য অফিস ভাড়া করা হয়েছে রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভবনে। এ ইউনিটের জনবল ১৬২ জন। আগামী মাস থেকে নতুন অফিসে যাওয়ার কথা রয়েছে। বর্তমানে কর অঞ্চল-১৫-এর অফিসে অস্থায়ী কার্যালয়ে এ ইউনিটটির কাজ চলমান। এ ইউনিটের প্রধান হবেন একজন কর কমিশনার। এছাড়া একজন অতিরিক্ত কর কমিশনার ও একজন সিস্টেম অ্যানালিস্টও থাকবেন।

ইউনিটের কাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, ‘করদাতাদের যেন আয়কর অফিসে আসতে না হয়। বাসায় বসে রিটার্ন দাখিল করতে পারেন। প্রাপ্তি স্বীকারপত্রও বাসায় বসে প্রিন্ট করে নিতে পারেন। যেকোনো তথ্য জানতে পারেন। আমরা সেই ব্যবস্থাই নিচ্ছি।’

কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের মাধ্যমে আয়কর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ডিজিটাল হবে। অটোমেশনের আওতায় চলে আসবে কর ব্যবস্থা। করদাতারা আরামে কর দিতে পারবেন। একটি সিস্টেমে আয়করের সব সেবা দেয়া যাবে। এতে ভোগান্তি-হয়রানি থাকবে না।’ 

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ই-ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট ইউনিট ছাড়াও উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট (আইটিআই) এবং আন্তর্জাতিক কর ইউনিটও চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক কর ইউনিটের কাজ শুরু হতে আরো সময় লাগবে। বাকি তিনটি ইউনিট আগামী সেপ্টেম্বর থেকে পুরোদমে কাজ করবে।

উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিটের অফিস নেয়া হয়েছে রাজধানী ঢাকার কাকরাইলের আঞ্জুমান টাওয়ারে। এ ইউনিটে জনবল থাকবে ৫৫-৬০ জন। বর্তমানে বিভিন্ন কর অঞ্চল উৎসে কর আদায় করে। পর্যায়ক্রমে উৎসে কর আদায় করবে এ ইউনিট। আয়কর বিভাগের বৃহৎ একটি অংশ আদায় হয় উৎসে কর থেকে। 

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কর অফিসে যাওয়াটাই পরিহার করা উচিত। যেকোনো ই-ট্রানজেকশনকেই আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু অনলাইনে ভ্যাট জমা দেয়ার পর দুদিন পরপর ফোন করে। আবার অফিসে যেতে হয়। উৎসে করের আলাদা ইউনিট কেন খুলতে চায় আমরা তো জানি না। আমাদের সঙ্গে তো বসেনি। আমরা অংশীদার অথচ আমাদের সঙ্গে আলোচনাই করেনি। আলোচনা করলে তো আমরা পরামর্শ দিতে পারতাম।’ 

কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে জনবল থাকবে ৭২ জন। তবে এ ইউনিটের অফিস ঠিকানা এখনো প্রকাশ করেনি এনবিআর। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘করদাতার কর ফাঁকি ও আয়কর কর্মকর্তার কারণে হওয়া করদাতার কর ফাঁকি সবই উদঘাটন করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট। সামগ্রিক বিষয় নিয়ে কাজ করবে এ ইউনিট।’ এ প্রসঙ্গে কর বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কর পরিদর্শন পরিদপ্তর কর বিভাগের শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করে। কর বিভাগের দাপ্তরিক নিরীক্ষা করে। তার মাঝে কর ফাঁকি পেলে সেটাও উদঘাটন করে। আর কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট সরাসরি করফাঁকি উদঘাটন করবে। তাদের কাজ হবে গোয়েন্দাভিত্তিক।’

এনবিআরের উর্ধ্বতন একটি সূত্র জানিয়েছে, দামি গাড়ি, ফ্ল্যাট ও বাড়ি মালিকদের করের আওতায় আনতে ডাটা ব্যাংক তৈরি করছে আয়কর বিভাগ। কর ফাঁকি দেয়া ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তাদের তথ্য ডাটাবেজের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব তথ্য নিয়ে কাজ করবে কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট।  

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন