ট্যুরিজম ক্লাব

পর্যটনে দেশের যে সম্ভাবনা সেটা আমরা ছুঁতে পেরেছি

ছবি : বণিক বার্তা

অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। সম্প্রতি পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ও এ খাতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম 

অনেক পর্যটন বিশেষজ্ঞ বলছেন ট্যুরিজম খাতে বিগত ৫০ বছরে ভাগ্য বদলায়নি। কেন এমন বলছে? 

বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেই এগিয়ে যাওয়া দেখেই হয়তো অনেকে এ কথা বলছেন। তবে বাংলাদেশের পর্যটন যে এগিয়ে গেছে তার কিছু চিত্র আমি তুলে ধরছি। আগে পর্যটন শুধু কক্সবাজারভিত্তিক ছিল। এখন পুরো বাংলাদেশ পর্যটনে আবৃত। হাওর পর্যটন, সিলেট প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান নৃতাত্ত্বিক মানুষ নিয়ে পর্যটন, পুরো দক্ষিণাঞ্চল পর্যটনে সয়লাব। এখন সারা বাংলাদেশই পর্যটনে আবৃত। আগে পর্যটন বলতে মানুষ কক্সবাজার যেত। এখন পুরো বাংলাদেশ ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাজীপুরের আশপাশে প্রচুর হোটেল মোটেল রিসোর্ট হয়েছে। আমাদের প্রত্যাশার জায়গা অনেক। কিন্তু আমাদের প্রত্যাশার যে জায়গা সেটাতে হয়তো পৌঁছতে পারিনি কিন্তু পর্যটন বাড়ছে দিন দিন। তিনদিনের বন্ধ পড়লে সারা দেশে পর্যটনের আনাগোনা বেড়ে যায়। শুধু কক্সবাজারেই পাঁচ লাখ পর্যটক ভিড় করে তিনদিনের ছুটিতে। সারা দেশে সংখ্যাটা প্রায় ৩০ লাখ। পর্যটনে বাংলাদেশের যে সম্ভাবনা সেটা আমরা ছুঁতে পেরেছি।

দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটকের কথা বললেন, কিন্তু পর্যটন খাতের বিকাশে আন্তর্জাতিক পর্যটকের কাছে দেশের পর্যটন খাত সেভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি কেন? 

আন্তর্জাতিক পর্যটন শুরুই হয় দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যটন দিয়ে। মালয়েশিয়ার পর্যটন খাতে বিপ্লব শুরু হয়েছিল অভ্যন্তরীণ পর্যটক দিয়ে। পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক পর্যটক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যটক আকৃষ্ট করতে আমাদের যে ধরনের ব্যবস্থাপনা দরকার, আমরা সেটি এখনো তৈরি করতে পারিনি। যেমন তাদের যে লাইফস্টাইল সেটা বাংলাদেশের কালচারের সঙ্গে সমন্বয় করতে পারিনি। তবে সরকার এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট স্পট করছে সাবরাংয়ে। সেখানে যদি এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন হয়ে যায় তাহলে বিদেশী পর্যটক বাড়বে। তাদের যা যা প্রয়োজন সব ব্যবস্থা থাকবে। স্বভাবতই পর্যটন আনাগোনা বাড়বে। আমি মনে করি ব্যবস্থাপনা জরুরি। সেই ব্যবস্থাপনার জায়গাটি আধুনিকায়ন করতে হবে। 

পর্যটন খাত নিয়ে অধ্যয়ন এবং এ খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ কেমন?

পর্যটন এখন সম্ভাবনার সেক্টর। পর্যটন এমন একটি সম্ভাবনার জায়গা দেশে একজন পর্যটক এলে ১০টি চাকরির বাজার সৃষ্টি হয়। এতেই বোঝা যায় কী পরিমাণ সম্ভাবনা এখানে।  উদ্যোক্তা, হোটেল-মোটেল, বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর থেকে শুরু করে নানা কর্মসংস্থানের সুযোগ আছে। দেশে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন বিষয়ে পড়ানো হয়। ভালো ব্যবস্থাপনার জন্য আমরা বিদেশ থেকে লোক নিয়ে আসি। পাঁচ তারকা হোটেলগুলো বিদেশীরা দখল করে আছে। তারা হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে প্রতি বছর। আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার, সেভেন স্টার হোটেলগুলোয়। এ সেক্টরই একমাত্র সেক্টর কেউ বেকার থাকে না। ছাত্র অবস্থায়ই চাকরি নিশ্চিত। শেরাটন, ওয়েস্টিন, ইন্টারকন্টিনেন্টাল, সোনারগাঁও, রয়েল টিউলিপ হোটেলে ট্যুরিজম বিভাগের শিক্ষার্থীরা চাকরি করছে। 

ট্যুরিজম বিভাগের শিক্ষার্থীদের কতটুকু মূল্যায়ন করা হচ্ছে?

শিক্ষার্থীরা মূল্যায়িত হচ্ছে। বরং আমাদের শিক্ষার্থীদের চিন্তা হলো তারা ব্যাংক, বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরিতে যাবে। এ সেক্টরে রাতারাতি যে অনেক বড় অবস্থানে যাওয়া যায় সেটা আমাদের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটের কারণে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারছে না। আমি সবসময়ই দেখেছি যারা এ সেক্টরে শুরু থেকেই ছিল এবং ১০ বছর পার করেছে তাদের বেতন এখন ছয় ডিজিট। যারা ব্যাংক বা অন্য সেক্টরে তাদের কিন্তু পাঁচ ডিজিটই আছে। বিষয়টি বুঝতে হবে। এ সেক্টর নতুন হওয়ায় অনেকে রিস্ক নিতে চায় না। পৃথিবীর পাঁচটি ইন্ডাস্ট্রির একটি হলো পর্যটন। 

দেশের পর্যটন খাতের কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা উচিত? 

পর্যটন নিয়ে যারা গবেষণা করে তাদের এ সেক্টরে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। বিভিন্ন দেশে কী কারণে বিদেশী পর্যটক বাড়ছে সে কারণগুলো গবেষণার মাধ্যমে বের করে আনতে হবে। সেই অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করতে হবে। বিদেশী পর্যটকদের জীবনমানের আলোকে আমাদের সব ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে। টিকিট, ভিসার ব্যাপারে সরকারকে উদারনীতি নিতে হবে। জটিলতা কমাতে হবে। কোন কোন জায়গা থেকে বিদেশী পর্যটকরা আসতে পারে সেগুলো তুলে ধরতে হবে বিভিন্ন দূতাবাস, ওয়েবসাইট, সেমিনারের মাধ্যমে অথবা সেই দেশে গিয়ে বাংলাদেশের পর্যটনের বিষয় তুলে ধরতে হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। পর্যটন পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। পর্যটনে সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। কিন্তু এখানে মাঝে মাঝে এলোমেলো দেখি। যেকোনো সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে লেজুড়বৃত্তি দেখতে পাই। শুধু পর্যটন আলাদা মন্ত্রণালয় হয়ে নিজেই যেন নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারে আমাদের সেই ব্যবস্থা করতে হবে। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন