সাক্ষাৎকার

নতুন ড্রাগ মলিকুল আবিষ্কার বড় একটি চ্যালেঞ্জ

ছবি : বণিক বার্তা
অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের স্কুল অব মেডিসিনের ডিন। দেশের অন্যতম পুরনো ফার্মেসি বিভাগ রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি ফার্মেসি বিভাগে পড়াশোনা, ক্যারিয়ার ও এ খাতের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন শফিকুল ইসলাম 

বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য খাত নিয়ে বড় উদ্বেগ রয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। ফার্মেসি বিভাগ বর্তমানে খাতের নানা সংকটে কী কী ভূমিকা রাখতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসক স্বাস্থ্যকর্মীর পর সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ফার্মাসিস্ট। ওষুধ উৎপাদন বিপণনের মূল দায়িত্ব ফার্মাসিস্টের। করোনাকালে দেশজুড়ে লকডাউনের ভেতরেও ফার্মাসিস্টরা বিরতিহীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। কারণ ওষুধ উৎপাদন বিপণন ব্যাহত হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হাসপাতালগুলোয়ও রোগীদের সেবায় ওষুধের ব্যবহারসংক্রান্ত বিষয়ে ফার্মাসিস্টের কাজ করতে হয়। সুতরাং দেশের স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টের গুরুত্ব অপরিসীম।

নতুন নতুন রোগসহ নানা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য খাত। বিশেষ করে রোগ রোগীর ধরন অনুযায়ী ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের খাতে ফার্মাসিস্টরা কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে? আর কী কী চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

নিউ ড্রাগ ডিসকভারি ফার্মেসির অন্যতম একটি গবেষণার ক্ষেত্র। নতুন নতুন রোগ প্রতিরোধ করার জন্য নতুন ড্রাগ মলিকুল আবিষ্কার অবশ্যই বড় একটি চ্যালেঞ্জ, যেখানে বিশ্বের সব ফার্মাসিস্ট সক্রিয় ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টরাও তার ব্যতিক্রম নন। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগও বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। আমাদের নিজস্ব গবেষণাগারে নতুন কম্পাউন্ড আইসোলেশন এবং তার মলিকুলার ডকিংয়ের কাজ নিয়মিতভাবেই আমাদের শিক্ষক ছাত্রছাত্রীরা করেন।

দেশের সেক্টরে ফার্মাসিস্টদের প্রয়োজনীয়তা কেমন?

বাংলাদেশের ফার্মাসিস্টরা তাদের মূল ভূমিকা পালন করেন ওষুধ শিল্পে। ওষুধের উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ, বিপণন সর্বক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টের ভূমিকাই প্রধান। ওষুধ শিল্প বর্তমানে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করছে। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, হাসপাতাল, কমিউনিটি ফার্মেসি, রিটেইল ফার্মেসি, শিক্ষা গবেষণা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ফার্মাসিস্টের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। দেশের স্বাস্থ্য খাতে যত ফার্মাসিস্টের প্রয়োজন তার মাত্র ছোট একটি অংশই জোগান দেয়া যাচ্ছে। কারণেই দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এগিয়ে এসেছে ফার্মেসি শিক্ষার প্রসারে। অনেকে সফলভাবেই সব গুণাগুণ নিশ্চিত করে পাঠদান করছে। ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ ব্যাপারে পাইওনিয়ার।

প্রতি বছর কী পরিমাণ গ্র্যাজুয়েট বের হয়? আর তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কেমন?

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি বছর ১৫০-১৮০ জন যোগ্য ফার্মাসিস্ট বের হন। তাদের শতকরা ৫০ ভাগের বেশি গ্র্যাজুয়েট বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, হাসপাতাল রিটেইল ফার্মেসিতে যোগদান করেন। ফার্মেসি সেক্টরে কর্মসংস্থানে যথেষ্ট প্রতিযোগিতা থাকা সত্ত্বেও এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েটরা তাদের যোগ্যতাবলেই প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন। আমাদের কিছু গ্র্যাজুয়েট উচ্চ শিক্ষা অর্জনে দেশের বাইরে যান।

ইউএপির গ্র্যাজুয়েটরা কোথায় কোথায় চাকরি করছেন? যাবৎ কত গ্র্যাজুয়েট তৈরি করেছে ইউএপি? নতুন ওষুধ তৈরিতে তাদের উল্লেখযোগ্য কোনো অর্জনের কথা যদি বলতেন।

যাবৎ পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এশিয়া প্যাসিফিকের ফার্মেসি বিভাগ থেকে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছেন। যেহেতু ফার্মেসি শিক্ষা নিয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দেশের অন্যান্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিস্টের পাশাপাশি কাজ করছেন, নতুন ওষুধ তৈরিসহ গবেষণামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তারা নিজেদের সাফল্য এরই মধ্যে অর্জন করেছেন। ১৯৯৬ সালে ইউএপিতে ফার্মেসি শিক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা সুনামের সঙ্গে দেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোয় নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। ওষুধ কোম্পানি ছাড়াও সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা, যেমন বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিল, ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে সচিব, সহকারী পরিচালক, ড্রাগ সুপার, ড্রাগ ইন্সপেক্টরসহ বিভিন্ন পদে আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা দায়িত্ব পালন করছেন। দেশের বাইরেও আমাদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অ্যালামনাই রয়েছেন। তারা সেখানে উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছেন, আবার অনেকে উচ্চ শিক্ষা শেষ করে বিভিন্ন গবেষণায় নিয়োজিত আছে। কানাডা অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের বেশকিছু গ্র্যাজুয়েট রেজিস্টার্ড ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। ইউএস এফডিতেও আমাদের একাধিক গ্র্যাজুয়েট কাজ করছেন।

ইউএপিতে দেশের প্রাচীনতম ফার্মেসি বিভাগ। অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইউএপির বিভাগটি কোন দিক থেকে আলাদা?

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউএপি প্রথম দিকে ফার্মেসি শিক্ষা চালু করলেও অন্যরাও পরবর্তী সময়ে এগিয়ে এসেছে। তবে শিক্ষার গুণগত মান এবং ল্যাব ফ্যাসিলিটির দিক দিয়ে অন্যদের সঙ্গে ইউএপির স্পষ্ট তফাত বিদ্যমান। আমাদের ট্রাস্টি বোর্ড এবং অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সহায়তায় আমরা বিশ্ব মানের ল্যাব তৈরি করতে পেরেছি। ফলে আমাদের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা উন্নত গবেষণা করতে পারছেন। বিভিন্ন Scopus, Pubmed ইনডেক্সড বিশ্বের সেরা জার্নালগুলোয় আমাদের গবেষণার ফলাফল নিয়মিতভাবেই প্রকাশিত হয়। প্রতি বছর এসব প্রকাশনার সংখ্যাও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে, যা উন্নত মানের গবেষণায় আমাদের সক্ষমতার প্রমাণ দেয়।

ফার্মেসি বিষয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন?

আমাদের ফর্মেসি বিভাগের কিছু কিছু গ্র্যাজুয়েট প্রতি বছর উচ্চশিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশে যান। তাদের অনেকেই পিএইচডি শেষ করেছেন। বিশ্বের অন্য বিজ্ঞানীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তারা তাদের গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন