অসহায়ের পাশে স্টেপ আপ ফর টুমরো

ফিচার প্রতিবেদক

ছবি : স্টেপ আপ ফর টুমরো

প্রতিদিন বিকেল হলেই ইফতারি নিয়ে ছুটছেন একঝাঁক তরুণ-তরুণী। শুরুটা সেই পহেলা রমজান। এখনো চলছে তাদের ছুটে চলা। যেন ক্লান্তি নেই। কখনো তাদের দেখা মেলে রংপুর স্টেশন, শাপলা চত্বর, চারতলা মোড়, রেলগেট, রংপুর কেডিসি, সুলতান মোড়, খামার মোড়, ঘোড়াপীর, শাপলা চত্বর আবার কখনো পীরপুর, পায়রা চত্বর, কামার পাড়া, লালবাগ, দর্শনা, সাতমাথা শপিং কমপ্লেক্সের নিচে, ঘোড়াপীর মাজার। এভাবেই ৪০ জন তরুণ-তরুণী চষে বেরিয়েছেন রংপুর শহরের এক মাথা থেকে আরেক মাথা। তারা সবাই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্টেপ আপ ফর টুমরো"এর ভলান্টিয়ার। 


স্বেচ্ছাসেবীরা প্রতিদিন ইফতারি তুলে দিয়েছেন দুঃস্থ মানুষের হাতে, যারা রাস্তার পাশের বস্তি কিংবা স্টেশনে থাকে কিন্তু নেই মাথা গোজার ঠাঁই। শুধু ইফতার বিতরণই নয়, মাঝ রাতে সেহরির জন্য নিজেদের হাতে রান্না করা খাবার নিয়েও ছুটেছেন রংপুর রেল স্টেশনে দুঃস্থ মানুষের কাছে। এভাবে নিজেদের অর্থায়নে রমজানজুড়ে দেড় হাজার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে"স্টেপ আপ ফর টুমরো।

তবে কাজের শুরুটা ছিল অনেক চ্যালেঞ্জের। আর্থিক সহায়তার বেশিরভাগ অংশই এসেছে ভলান্টিয়ারদের থেকে। তারা স্বেচ্ছায় অর্থ দিয়েছেন। তাদের পরিবার কিংবা আত্মীয় স্বজনদের সহযোগিতায় একেকটি দিনের অর্থের যোগান হয়েছে । কারো টিউশনির টাকা, কারো জমানো সঞ্চয় আবার কারো হাত খরচের টাকা দিয়েছেন ভলান্টিয়াররা।   

‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’র ভলান্টিয়ার রংপুর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রুহান বলেন, এসব কাজের পেছনে জ্বালানি দেয় আত্মিক প্রশান্তি। জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চাই।"

২০২৩ সালের শেষের দিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায্যতা, মানসিক স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষা এবং ইয়ুথ ডেভেলপমেন্ট এ চারটি লক্ষ্য নিয়ে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ইউআইইউ) বিবিএর শিক্ষার্থী মুবাশ্বিরা তাসনীমের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’। বর্তমানে রংপুরসহ কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা  ও ঢাকা জেলায় কাজ করছে দেড় শতাধিক ভলান্টিয়ার। ইউনিসেফ ও রংপুর সিটি করপোরেশনের যৌথ কোলাবরেশনেও নানা স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি ।

‘স্টেপ আপ ফর টুমরো’ এর প্রতিষ্ঠাতা মুবাশ্বিরা তাসনীম তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে কাজ করে যাচ্ছি। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে দায়ী, কিন্তু তার ভুক্তভোগী হচ্ছে আমাদের মতো দেশগুলো। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভুক্তভোগী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝুঁকিতে থাকা মানুষের অধিকার আদায় এবং যুবদের সঙ্গে নিয়ে নারী ও শিশু অধিকার সুরক্ষার মধ্য দিয়ে শোষণ ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়েই প্রতিদিন ঘুমাতে যাই। মাসব্যাপী ইফতার কার্যক্রম সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোরই এক প্রচেষ্টা।’


এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন