বিশ্ববাণিজ্যে বাল্টিমোরে ব্রিজ ধসের প্রভাব বড় হবে না

বণিক বার্তা ডেস্ক

আন্তর্জাতিক আমদানি-রফতানির জন্য বাল্টিমোর যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম বন্দর ছবি: রয়টার্স

চিনি, কয়লা বা গাড়ি আমদানি-রফতানি থেকে ক্রুজ চলাচল—যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর বন্দর বিভিন্নমুখী সরবরাহ চেইন ও যোগাযোগের জন্য ব্যবহার হয়। তাই ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ ধসের সম্ভাব্য প্রভাব পড়তে পারে নানা খাতে। শুধু মার্কিন অর্থনীতিই নয়, বৈশ্বিক বাণিজ্যকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, পর্যাপ্ত বিকল্প থাকায় দুর্ঘটনাটির বৈশ্বিক প্রভাব তত বড় হবে না। খবর সিএনএন ও দ্য ন্যাশনাল।

২৬ মার্চ মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের প্যাটাপসকো নদীতে ডালি নামের কনটেইনার জাহাজের সঙ্গে সংঘর্ষের পর ব্রিজটি ভেঙে পড়ে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সিনার্জি গ্রুপের মাধ্যমে পরিচালিত জাহাজটি ডেনিশ শিপিং জায়ান্ট মায়েরস্কের কার্গো বহন করছিল।

আন্তর্জাতিক আমদানি-রফতানির জন্য বাল্টিমোর যুক্তরাষ্ট্রের নবম বৃহত্তম বন্দর। এ বন্দরে ২০২৩ সালে রেকর্ড ৫ কোটি ২৩ লাখ কার্গো হ্যান্ডেল হয়েছে, যার মূল্য ৮ হাজার ৮০ কোটি ডলার। বাল্টিমোর কৃষি ও নির্মাণ যন্ত্রপাতির পাশাপাশি চিনি ও জিপসাম আমদানিতে এবং কয়লা রফতানির জন্য দেশের দ্বিতীয় বন্দর।

মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর ধসের অর্থনৈতিক প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘‌বন্দরটির ওপর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মিলিয়ে দেড় লাখের বেশি কর্মী নির্ভরশীল।’ দেশটির পরিবহনমন্ত্রী পিট বুটিগিগ বলেন, ‘‌প্রতিদিন বন্দর দিয়ে ১০-২০ কোটি ডলারের পণ্য আসে। এর মাধ্যমে ২ কোটি ডলারের দৈনিক মজুরি ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শহর ও অঙ্গরাজ্যের অর্থনীতিতে এ ঘটনার নিশ্চিত প্রভাব পড়বে। তবে বিস্তৃত মার্কিন অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম। পরামর্শক সংস্থা অক্সফোর্ড ইকোনমিকস এক বিবৃতিতে বলেছে, আশঙ্কা করি না যে বাণিজ্য বা পরিবহনের বাধাগুলো মার্কিন জিডিপিতে দৃশ্যমান প্রভাবক হয়ে উঠবে। মূল্যস্ফীতিতে এর প্রভাবও ন্যূনতম হবে। সম্ভবত গাড়ি নির্মাণসহ নির্দিষ্ট কিছু শিল্পে অস্থায়ী ব্যাঘাত তৈরি করবে।

ব্রিজ ধসের পর বাল্টিমোর বন্দর কর্তৃপক্ষ পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জাহাজ চলাচল স্থগিত করে। শিপিং সংস্থা মায়েরস্ক জানিয়েছে, এ বন্দর হয়ে সব চলাচল বন্ধ থাকবে আপাতত।

অটো ও হালকা ট্রাকের জন্য মার্কিন বন্দরগুলোর মধ্যে বাল্টিমোর শীর্ষে রয়েছে। ব্রিজ ধসের প্রভাব এ শিল্পের ওপর কয়েক মাস ধরে চলতে পারে। গত বছর রেকর্ড ৮ লাখ ৫০ হাজার যানবাহন এ বন্দর দিয়ে সরবরাহ হয়। বিবৃতি দিয়ে ফক্সওয়াগন ও জেনারেল মোটরস আপাতত বিকল্প পথে সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে।

ফ্রান্সিস স্কট কি সেতু ধসের প্রভাবও সরাসরি পড়বে মার্কিন অর্থনীতিতে। অর্থনীতিবিদ ওরেন ক্ল্যাচকিন জানান, সেতু ধসের কারণে মার্কিন পূর্ব উপকূলে লজিস্টিক কার্যকলাপ ব্যাহত হবে। আন্তঃরাজ্য সংযোগকারী এ সেতু প্রতিদিন ৩০-৩৫ হাজার গাড়ি ও ট্রাক ব্যবহার করত। এখন রুট বদলের কারণে পণ্য সরবরাহ বিলম্বিত হতে পারে। বাড়তে পারে খরচ। বিকল্প বন্দরে জটের কারণে এশিয়া ও ট্রান্সআটলান্টিক সরবরাহে চাপ তৈরি হতে পারে।

লোহিত সাগরের পরিস্থিতির কারণে এশিয়া থেকে মার্কিন পূর্ব উপকূলমুখী পরিবহন খরচ ২০১৯ সালের মার্চের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ সময় বাল্টিমোরের ঘটনায় নতুন জটিলতা তৈরি করল। ক্রেডিট রেটিং সংস্থা মুডি’স অ্যানালিটিকসের প্রধান অর্থনীতিবিদ মার্ক জান্ডি জানান, পণ্য পরিবহন বিকল্প বন্দরে অপ্রত্যাশিত ব্যাঘাত তৈরি করতে পারে। যার প্রভাব পণ্যের দাম ও মুনাফায় পড়বে। তবে কিছু বর্ধিত ব্যয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে না।

সঙ্গে যোগ করেন, এ ঘটনাকে জাতীয় অর্থনৈতিক দিক থেকে দেখা উচিত নয়। কারণ আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইনে এরই মধ্যে অনেক বাধা তৈরি হয়েছে।

ফ্রান্সিস স্কট কি ব্রিজ ভেঙে পড়ায় বীমা কোম্পানিগুলোর খরচ হতে পারে রেকর্ড কয়েক বিলিয়ন ডলার। মর্নিংস্টার ডিবিআরএসের গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স রেটিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মার্কোস আলভারেজ বলেছেন, ‘বন্দর কতদিন বন্ধ থাকবে এবং বীমা কভারেজের ধরনের ওপরে অনেক কিছু নির্ভর করে। ক্ষতি বাবদ বীমা কোম্পানিকে ২০০-৪০০ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হতে পারে।’

এদিকে বন্দরটি কবে নাগাদ চালু হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। প্যাটাপসকো নদীর অপেক্ষাকৃত সরু একটি চ্যানেল পরিষ্কার করে জাহাজ চলাচলের উপযোগী করতে কাজ শুরু হয়েছে। এ চ্যানেল কনটেইনার জাহাজ, ক্রুজ জাহাজ ও গাড়িবাহী জাহাজের জন্য যথেষ্ট গভীর। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দুর্ঘটনার দিন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ফেডারেল সরকার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বন্দরটি পুনরায় চালু করতে সহায়তা করবে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন