বিজয় সেতুপতি: তামিল সিনেমার নায়ক থেকে বলিউড হার্টথ্রব

মাহমুদুর রহমান

উপেন্না সিনেমায় সেতুপতি ছবি: আইএমডিবি

বলিউড বরাবরই নায়কের চরিত্রে সনাতনী ধ্যানধারণার গ্ল্যামারাস পুরুষকে বিবেচনা করে। পৃথ্বীরাজ কাপুর থেকে শুরু করে আজকের বরুণ ধাওয়ান—সবাইকেই গায়ের রঙ ও শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়েছে। দক্ষিণে তা নেই। এ কারণেই দক্ষিণ থেকে কখনো অভিনেতারা বলিউডের সিনেমায় নায়ক হতে পারেননি। অবশ্য এক্ষেত্রে কমল হাসানের নাম আসতে পারে। ধানুষের নামও আসতে পারে। তবে তাদের হিসেব কিছুটা আলাদা। বলতে গেলে বলিউডে দক্ষিণ থেকে নিজের সত্যিকার জায়গাটা প্রথম পেয়েছেন বিজয় সেতুপতি। শাহরুখ খানের ‘‌জওয়ান’-এ খল চরিত্রে অভিনয়ের পর তিনি শ্রীরাম রাঘবনের ‘মেরি ক্রিসমাস’-এ অভিনয় করলেন ক্যাটরিনা কাইফের বিপরীতে। একটা সিরিজ ও দুটো সিনেমার পর মূলত তিনি এখন বলিউডেরও হার্টথ্রব।

তামিল, তেলেগু ও মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রির অনেক অভিনেতাই বলিউডে এসেছেন। অভিনয় করেছেন একাধিক বলিউড সিনেমায়। এর কোনো কোনোটি আবার বহুভাষায় নির্মিত বা ডাব করা। এর মধ্যে সবচেয়ে সফল নায়ক ধানুষ। ‘‌রানঝানা’র মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন বলিউডে। আনন্দ এল রাইয়ের সিনেমাটি তাকে বলিউডে স্থায়ী আসন দিয়েছিল। এরপর আর বালকির ‘‌শামিতাভ’-এ তিনি স্ক্রিন শেয়ার করেছিলেন অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে। কিন্তু ধানুষও ফিরেছিলেন নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে। এদিকে দুলকার সালমান তার দক্ষিণের সিনেমা দিয়েই বলিউডের দর্শকের কাছে জনপ্রিয়। কিন্তু বিজয় সেতুপতির ব্যাপারটা একটু অন্য রকম।

বিজয় সেতুপতি দক্ষিণের ইন্ডাস্ট্রিতেই করেছেন নানা রকম চরিত্র। সব সিনেমায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেননি। তাকে দুই বছর আগেও লোকে চিনত পুস্কর-গায়েত্রি পরিচালিত বিক্রম ভেদা দিয়ে। এরপর লোকেশ কনগরাজের ‘‌মাস্টার’-এ তিনি হলেন ভিলেন। লোকেশেরই ‘‌বিক্রম’-এ হলেন ছোট ভিলেন। এর বাইরে তিনি পরিচিতি পেয়েছেন প্রেম কুমারের ‘নাইন্টি সিক্স’ দিয়ে। কিন্তু এর পেছনে পড়ে থাকে বিজয়ের করা আরো অনেক চরিত্র। বিজয় অভিনীত আশির বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে এরই মধ্যে। মুক্তির অপেক্ষায় আছে আরো। এ সিনেমাগুলো দিয়ে দক্ষিণের দর্শকরা তাকে চেনেন, কিন্তু বলিউডে এখনো অপরিচিত।

বলিউডে নায়ককে তথাকথিত গ্ল্যামারের অধিকারী হতে হয়। তাছাড়া দক্ষিণ থেকে এসে নায়ক হওয়া কঠিন। রজনীকান্ত সেটা করেছিলেন, কিন্তু তাকেও অনেক সময় দিতে হয়েছে। অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চনের ছোট ভাই বা অন্য কোনো পার্শ্ব চরিত্রে। কমল হাসানের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। তিনি পরিচালনায় অভিষেক করেছিলেন হিন্দিতে। দক্ষিণের অন্য কোনো অভিনেতার এ সৌভাগ্য হয়নি। এমনকি ‘‌বাহুবলী’, ‘‌সালার’-এর প্রভাসকেও সমাদরে গ্রহণ করেনি বলিউড। কিন্তু বিজয় সেতুপতি ঠিকই হার্টথ্রব হয়েছেন বলিউডে।

বিজয়ের এ সাফল্য বা জনপ্রিয়তার কারণ তার অভিনয়। পাশাপাশি শাহরুখ খানের সিনেমায় খল চরিত্রে অভিনয় করাও একটি কারণ। তবে তার আগে অ্যামাজনে আসা ‘ফারজি’ বিজয়ের পথটা সুগম করেছে। ‘রাজ অ্যান্ড ডিকে’র শিকড় দক্ষিণে হলেও ‘‌দ্য ফ্যামিলি ম্যান’ দিয়ে তারা বলিউডের বৃহত্তর দর্শকের মন পেয়েছেন। ফারজির প্রধান অভিনেতাও ছিলেন বলিউডের শহীদ কাপুর। কিন্তু এ সিরিজে বিজয় সেতুপতির অভিনয় ও হিউমার দর্শককে টেনেছে খুব। এরপর তারা বিজয়ের সিনেমা খুঁজে খুঁজে দেখেছেন। তাছাড়া নাইন্টি সিক্স কেবল ভারতে নয়, জনপ্রিয় হয়েছে বাংলাদেশেও। বিজয় সেতুপতিকে তাই বলিউডের দর্শক নেহায়েত দক্ষিণের একজন নায়ক হিসেবে নয়, একজন অভিনেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন