আমরা যা তাই আমাদের সংস্কৃতি, আর এম ম্যাকাইভারের দেয়া সংস্কৃতির এ সংজ্ঞা থেকেই আমরা বুঝতে পারি সংস্কৃতি চর্চার গুরুত্ব কতখানি। সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি জাতি অন্য একটি জাতি থেকে নিজের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো চিত্রকর্ম। চীনা প্রবাদ আছে একটি চিত্রকর্ম দশ হাজার শব্দতুল্য। বাস্তবিক অর্থে কথাটি বেশ প্রাসঙ্গিক—হাজারো শব্দ অনেক সময় যে অর্থ দিতে পারে না, একটি ছবি তার থেকে বেশি অর্থ আমাদের দেয়।
শিক্ষার্থীদের সংস্কৃতি ধারণ, লালন ও চর্চার মিলনস্থল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ (ববিচাস)। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসরে এসে একজন শিক্ষার্থী তার সংস্কৃতিকে লালন করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ও সংস্কৃতিমনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা ছবি আঁকেন, হাতের কারুকাজ করেন সৃষ্টিশীল কিংবা সৃজনশীল সেসব শিক্ষার্থীকে একত্র করে সুন্দর একটি সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে আজ থেকে চার বছর আগে ২০২০ সালে যাত্রা শুরু করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ। মূলত বাঙালি সংস্কৃতি, শিল্প ও বাঙালিয়ানাকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে তা চর্চার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরিই চারুকলা সংসদের মূল লক্ষ্য। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ চিত্রকর্ম অঙ্কন প্রতিযোগিতা ও চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সংস্কৃতি হলো দেয়ালচিত্র। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অন্যায় ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করেন চিত্রশিল্পীরা। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে আঁকা হয়েছে অনেক দেয়ালচিত্র। ভাষা আন্দোলন নিয়ে করা চিত্রকর্ম ‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইড়া নিতে চায়’, সঞ্জীব চৌধুরীর বিখ্যাত সেই লাইন ‘আমরা স্বপ্নেরই কথা বলতে চাই’ প্রভৃতি শিরোনামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, টিএসসিতে দেখা মিলবে তাদের একাধিক চিত্রকর্মের। ক্যাম্পাসের সামনে কেনান মামার গলিতে দেখা মিলবে তাদের নিপুণ হাতে আঁকা জীবন্ত বব মার্লের চিত্রকর্ম।
চারুকলা সংসদ চিত্রকর্ম অঙ্কনের সঙ্গে সঙ্গে বসন্তকে বরণের জন্য ‘বাসন্তিক’ এবং শরৎকে বরণের জন্য ‘সুরশারদ’ উৎসবের আয়োজন করে। বছরে চারুকলা সংসদের এ দুটি উৎসবকে ঘিরে অন্য রকম একটা আবেগ কাজ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বাসন্তিক আর সুরশারদের দিনব্যাপী উৎসবে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ো এক আনন্দঘন মুহূর্ত বিরাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই এ উৎসবের প্রাণ, তাদের অংশগ্রহণেই উৎসব হয়ে ওঠে আনন্দমুখর। বাসন্তিক ও সুরশারদ উৎসবের এক মাস আগে থেকেই চলতে থাকে প্রস্তুতি। উৎসবকে ঘিরে বিভিন্ন স্টল দেয়া হয়, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি কারুশিল্পের তৈরি বিভিন্ন জিনিস স্টলে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। সদস্যদের নিয়ে মাসিক কর্মশালার আয়োজন করে চারুকলা সংসদ, যার মাধ্যমে সদস্যরা ছবি আঁকার খুঁটিনাটি থেকে সবটুকু শিখতে পারেন। তাদের শেখানো হয় সাংগঠনিক দক্ষতা। সর্বোপরি তাদের সংস্কৃতিকে চর্চা করতে শেখানো হয়।
এর বাইরেও পরিবেশবান্ধব কর্মসূচিও পালন করে চারুকলা সংসদ। পলিথিনের পরিবর্তে পাটজাতদ্রব্য ব্যবহারের জন্য সচেতনতামূলক ‘জগলুল টি স্টোর’ শিরোনামে একটি মঞ্চনাটকের আয়োজন করা হয় সুরশারদ উৎসবে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পকে ধরে রেখে সফল উদ্যোক্তা হতে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করে থাকে ববিচাস। ক্যাম্পাসে শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চায় অনন্য ভূমিকা পালন করছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা সংসদ।
মো. রবিউল ইসলাম
শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়