বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি

প্রচলিত কাঠামোয় প্রায় সব শিক্ষাই সাধারণ হয়ে গেছে

ছবি : বণিক বার্তা

অধ্যাপক . এস এম মাহফুজুর রহমান দায়িত্ব পালন করছেন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির উপাচার্য হিসেবে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে

উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে কারা ভালো করছে? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নাকি প্রাইভেট?

কঠিন প্রশ্ন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রকারভেদ রয়েছে। যেমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় অনেক আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; বয়স, আকার, শিক্ষার বিষয় সব বিবেচনায়ই তারা পরস্পর থেকে ভিন্ন। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে নতুন, কিন্তু তারা কার্যক্রমের দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী। সম্প্রতি সরকার অনেকগুলো বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় কিন্তু সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনেক বিষয়ই পড়ানো হয় না। এসব কারণে প্রাইভেট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে হলে দেখতে হবে যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কী কী বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা দিতে আগ্রহীপাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দর্শনগত ফোকাস তা কীভাবে ভিন্ন। অধিকাংশ বেসরকারি  বিশ্ববিদ্যালয় সীমিতসংখ্যক বিষয়কে গুরুত্ব দেয়। এর মধ্যে এমন অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বিবিএ-এমবিএ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, আইন, ইংরেজি ইত্যাদি কয়েকটি বিষয় পড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয়। আমরা যেমন টেক্সটাইল রেডিমেড গার্মেন্টসকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। কোনো কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্স আছে। প্রকৌশল বা প্রযুক্তিকেন্দ্রিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও আছে। রকম একেকটি বিশ্ববিদ্যালয় একেক রকম। অনেকগুলো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বিশেষায়িত বৈশিষ্ট্যের কারণে প্রচলিত ধারার পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এগিয়ে। আরেকটি বিষয় হলো দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি করাতে পারছে না। জায়গায় প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বড় ভূমিকা পালন করছে। তারা বেসরকারি পর্যায়ে উচ্চ শিক্ষার চাহিদা পূরণ করছে।

বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি কোন কোন দিক থেকে বিশেষ?

অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষ। আমাদের মূল শিক্ষাটাই হচ্ছে, এখানে যারা পড়াশোনা করবে তারা যেন এখান থেকে বের হয়ে আরএমজিতে তাদের কর্মসংস্থান গড়তে পারে। দিক থেকেই আলাদা ব্যতিক্রম। এখানকার শিক্ষার্থীরা ফাউন্ডেশন কোর্স হিসেবে পদার্থ, রসায়ন, গণিত যোগাযোগ দক্ষতার জন্য ইংরেজি পড়ে। এখনো আমাদের দেশে যেসব শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার কথা ভাবে তারা ভাবে না যে টেক্সটাইল বা গার্মেন্ট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ রয়েছে। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি যে এখানে যদি পড়াশোনা করে একজন শিক্ষার্থী বিশেষজ্ঞ হয় তাহলে এক্সিকিউটিভ হতে অথবা উদ্যোক্তা হয়ে নিজের স্বাধীন ব্যবসা পরিচালনা করতে বেশি সময় লাগবে না।

এক বছর আগে বণিক বার্তার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেনগুণগত শিক্ষার ওপর জোর দিতে চাই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতে কী কী পদক্ষেপ নিলেন?

অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি। সেগুলো বাইরে প্রকাশ্যে তেমনভাবে অনুভূত হচ্ছে না। তার কারণ, এগুলো মূলত শিক্ষাক্রম পাঠদান পদ্ধতির সংস্কার আধুনিকায়ন সংক্রান্ত। এরই মধ্যে সরকার কর্মমুখী শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য নতুন বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। আমরা এরই মধ্যে এগুলোর অনেকটাই চালু করেছি। আমরা নতুন দুটি বিভাগ চালু করতে পেরেছি। এছাড়া ইউজিসি আমাদের প্রস্তাব বিবেচনা করে গবেষণার জন্য একটি বিশেষ ইনস্টিটিউটের অনুমোদন দিয়েছে। খুব দ্রুতই সেটির কার্যক্রম শুরু হবে।

ইনস্টিটিউটের কাজ সম্পর্কে যদি বলতেন...

এটি একটি বিশেষায়িত ইনস্টিটিউট এবং গবেষণার জন্য প্রতিষ্ঠিত। আমরা অনুমোদন নেয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে অবহিত করেছিলাম, প্রতিষ্ঠানকে যদি আমরা জনবল দিয়ে সক্ষম করে তুলতে পারি সেই শর্তে আমরা এখানে বিশেষায়িত ডিগ্রি প্রোগ্রাম চালু করব। গবেষণার ভিত্তিতে মাস্টার্স, এমফিল প্রোগ্রাম এবং যদি অনুমতি দেয় তাহলে পিএইচডি প্রোগ্রামও আমরা চালু করতে পারি। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বিশেষ গবেষণা করতে পারি। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য বিদেশে আমাদের বাজার সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ করা যায়। এছাড়া নতুন নতুন টেকনোলজি আবিষ্কার হচ্ছে, এগুলোকে বাংলাদেশে প্রচলনের জন্য কারিগরি জ্ঞানভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?

দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের প্রাইমারি স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজগুলোয় পড়াশোনার মানের ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। শিক্ষকতার মান অনেক দুর্বল। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় জিপিএ ফাইভ ঠিকই পাচ্ছে কিন্তু তাদের মান অনেক খারাপ। দেশের স্কুল-কলেজ পর্যায়ে যদি শিক্ষার মানের পরিবর্তন ঘটাতে পারি। ফলে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের উচ্চতর পর্যায়ে পড়ার উপযোগী মৌলিক ভিত্তি শক্ত হয় তাহলে তারা যে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ুক, তাদের মান এমনিতেই অনেক উন্নত হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একটা পদক্ষেপ নিয়েছি। যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের জন্য অতিরিক্ত ফি ছাড়াই স্পেশাল কোর্স পড়ানো হয়। যাকে ফাউন্ডেশন কোর্স বলা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবিক, ব্যবসা শিক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিক পাস অনেক শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। তাদের বিজ্ঞানের বিষয়গুলো এবং পরিসংখ্যান, ইংরেজি, সমাজ পরিবেশ বিষয়ে বেসিক ধারণা দেয়ার জন্য কোর্স অনেক কাজে আসবে। ফাউন্ডেশন কোর্স নেয়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্পেশাল সেমিস্টারের ব্যবস্থা করেছি। টিউটোরিয়াল ক্লাসেরও ব্যবস্থা রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন