ছাত্র আন্দোলনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

যেমন বাংলাদেশ চায় তরুণরা

ফিচার প্রতিবেদক

ছবি : বণিক বার্তা

কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শিক্ষার্থীদের গণ-অভ্যুত্থান যেন এক রূপকথা আর রূপান্তরের বাংলাদেশ। আন্দোলনে অংশ নেয়া থেকে শুরু করে আন্দোলন-পরবর্তী ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, দেয়ালে দেয়ালে রঙিন গ্রাফিতিসহ নিজ উদ্যোগে অনেক দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন তরুণ-তরুণীরা। এসব কাজে অংশ নেয়া কয়েকজন তরুণ-তরুণী নতুন বাংলাদেশ নিয়ে বলেছেন তাদের স্বপ্নের কথা।

মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তন আগে দরকার

দেশের স্বৈরাচারী সরকার দমনের জন্য আমরা যেমন যে যার জায়গা থেকে নিজেদের সাধ্যমতো কাজ করে গিয়েছি, ঠিক তেমনি সুন্দর একটি দেশের দৃষ্টান্ত তৈরি করার জন্য ছোট ছোট জায়গায়ও কাজ করে যেতে হবে। এ দেশ পরিবর্তন করতে হলে মানুষের চিন্তাধারার পরিবর্তনটা আগে দরকার। এখন যেমন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা মিলে দল বেঁধে রাস্তা পরিষ্কার করছি, ট্রাফিক আইন মানতে জোর দিচ্ছি, জিনিসপত্রের দামে খেয়াল রাখা, দুর্নীতি ধরার জন্য আওয়াজ তোলা এসব যাতে শুধু এ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য না হয়। সামনেও যাতে এগুলো আমরা আরো বেশি করে মানি আর এ দেশের মানুষকেও মানতে বাধ্য করি। তাহলে যেমন বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই তার কিছুটা হলেও সম্ভব হবে।

সামিহা ফেরদৌস, শিক্ষার্থী, বিবিএ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি


শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এটি প্রমাণ করার সময় এসে গেছে

কোনো হিংস্রতা নেই, দুর্নীতি নেই, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলা নেই এমন একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা রক্ত দিয়ে এ দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেছি। এখনো আমরা সবাই শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য চেষ্টা করছি, যেন জাতি বুঝতে পারে যে ছাত্ররা দেশকে পাল্টাতে পারবে। সবাই নিজের মতো অবদান রাখার চেষ্টা করছে—কেউ গার্ড ডিউটি, কেউ ট্রাফিক, কেউ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, কেউ মন্দির রক্ষার মতো কাজ করছে। এসব দেখে আমি বিশ্বাস করি একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব। আমরা ছাত্ররা প্রস্তুত, এ দেশের জন্য যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করার এবং দেশটাকে আবার সুন্দর করে তোলার জন্য। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড—এটি প্রমাণ করার সময় এসে গেছে।

আহনাফ তাজওয়ার, শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি


দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলদাসত্বমুক্ত একটি দেশ চাই

 আমরা দেখেছি গণতন্ত্রের মোড়কে কীভাবে স্বৈরতন্ত্র টিকে থাকে। দেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর। একেকজন রাজনীতিবিদ, আমলা, ব্যবসায়ী আঙুল ফুলে কলা গাছ হয়েছেন, বিদেশে অর্থ পাচার করেছেন। তাদের হাতেই যেন গোটা দেশটা জিম্মি। ঘটনার আর কোনো পুনরাবৃত্তি চাই না। পশ্চিম পাকিস্তানে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে যে দেশটির জন্ম, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও সে বৈষম্য দূর হয়নি। দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলদাসত্বমুক্ত একটি দেশ চাই। যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় নয় বরং যোগ্যতা থাকলে যেন বিরোধী মত, আদর্শের লোকও তার প্রাপ্য বুঝে পায়। এসব সংস্কার করতে পারলে উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন বেশি দূরে নয়।

তাসনীম হাসান, শিক্ষার্থী, বিবিএ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি


মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ

কেমন বাংলাদেশ চাই প্রশ্নের উত্তরটা দিতে চাই আমি কবির সুমনেরআমি চাই মানুষের হাতে রাজনীতি হবে ভীষণ জব্দ গানের লাইনটির মাধ্যমে। আমরা অরাজকতার রাজনীতি দেখেছি এতদিন, যা আমাদের সমাজ ব্যবস্থাকে একেবারে নষ্ট করে দিয়েছে। চাই না আমার দেশে রাজনীতির হাতে জনগণ পুনরায় জব্দ হোক। সত্যিকারের গণতন্ত্র থাকবে এমন একটি বাংলাদেশ চাই। আমরা তরুণরা জীবনের প্রথম ভোটটি দিয়ে আমাদের নেতা নির্বাচন করতে চাই। দেশে জন্ম নেয়া প্রতিটি মানুষের পরিচয় হবে একবাংলাদেশী। ঠিক রকম মানসিকতার বাংলাদেশ চাই, যেখানে একজন সাধারণ মানুষের কাছেও জনপ্রতিনিধিরা জবাবদিহিতার আওতায় আসতে বাধ্য হবে।

এম এম তরিকুল ইসলাম সিয়াম, শিক্ষার্থী, সিএসই বিভাগ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি


শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় তরুণদের সুযোগ দিতে হবে

স্বৈরাচার থেকে দেশ স্বাধীন করেছি, এবার স্বাধীন হওয়ার সময়। আর রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ অনেক লম্বা। কেউ কেউ বলছেন, সংস্কার করবে কারা? আপনি করবেন, আমরা, আপনারা, সবাই মিলে করব। পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবে নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন অভিজ্ঞ সিনিয়র সিটিজেন। বিশ্বসেরা ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা শেষ করে যারা বিদেশেই রয়েছেন তাদের দেশে এনে দেশ সংস্কারের কাজে লাগানো যেতে পারে। দেশের সব স্তরের দুর্নীতি দূর করতে পারলেই কেবল দেশ প্রকৃত অর্থে উন্নতির দিকে অগ্রসর হবে। শুধু প্রধান দায়িত্বে তরুণরা থাকলে হবে না, দেশ সংস্কারের জন্য সব পরিকল্পনা এক্সিকিউট করার জন্য শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় তরুণ প্রজন্মকে সুযোগ দিতে হবে।

মরিয়ম জান্নাত আঁখি, শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন