জিআরই: উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন সোপান

জিআরই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর ইংরেজি ভাষার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাষাগত ও গাণিতিক বিশ্লেষণ দক্ষতা, লেখালেখির যোগ্যতা যাচাই করা হয় ছবি: ম্যাট রাইট

জিআরই বা গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সাম সাধারণ ভাষাগত যোগ্যতা যাচাই পরীক্ষা যেমন আইইএলটিএস, টোফেল এগুলো থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। জিআরই কোনো ভাষা যাচাইয়ের পদ্ধতি নয়। জিআরই পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর, বিশেষ করে স্নাতক পাস শিক্ষার্থীর, ইংরেজি ভাষার পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাষাগত বিশ্লেষণ দক্ষতা, লেখালেখির যোগ্যতা ও গাণিতিক বিশ্লেষণের দক্ষতা যাচাই করা হয়। এডুকেশনাল টেস্টিং সার্ভিস (ইটিএস) নামক বিশ্ববিখ্যাত অলাভজনক শিক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান জিআরই পরীক্ষা নিয়ে থাকে এবং জিআরই পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ কম্পিউটার-ভিত্তিক।  

জিআরই কেন দেব: বর্তমান বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার পেছনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হচ্ছে তাদের মেধা ও গবেষণাভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা। গবেষণার মাধ্যমে নিত্যনতুন আবিষ্কারের মাধ্যমে তারা পৃথিবীর সব দেশের মানুষকে তাদের আবিষ্কারের দিকে তথা তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে নির্ভরশীল করেছে। তাদের এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে হার্ভার্ড, এমআইটি, বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়সহ শত শত বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার ছাত্র-শিক্ষকের ক্লান্তিহীন গবেষণা। মজার বিষয় হচ্ছে, এ ছাত্র-শিক্ষকদের অনেকেই বিশ্বের ভিন্ন দেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির অন্যতম একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে জিআরই পরীক্ষায় ভালো একটি ফলাফল। যদিও করোনা মহামারীর কারণে কিছু বিশ্ববিদ্যালয় জিআরই ইচ্ছাধীন করলেও এখন আবার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই সেই সুযোগ অপসারণ করেছে। যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে জিআরই ইচ্ছাধীন ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়ও মাস্টার্সে বৃত্তিসহ পড়ালেখার জন্য জিআরইর ফলাফল অন্যতম একটি নিয়ামক। অন্যদিকে পিএইচডিতে সম্পূর্ণ বৃত্তিসহ ভর্তি হতে চাইলে শতকরা প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে জিআরইর ফলাফল বাধ্যতামূলক। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষায় যেতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য জিআরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়া কানাডায়ও জিআরইর ফলাফলকে খুবই গুরুত্ব দেয়া হয়। এ সবকিছু ছাড়াও কারো সিভি/জীবনবৃত্তান্তে ভালো একটি জিআরইর ফলাফল উল্লেখ থাকা মানেই নিশ্চিতভাবেই বাড়তি সুবিধা পাওয়া। 

পরীক্ষা পদ্ধতি: জিআরই পরীক্ষায় ইংরেজি ভাষাগত বিশ্লেষণ (Verbal Reasoning), লৈখিক যোগ্যতা (Analytical Writing) ও গাণিতিক দক্ষতা (Quantitative Reasoning) এই তিন বিষয়ে পরীক্ষা হয়ে থাকে। আগে যেখানে পরীক্ষার সময় ছিল প্রায় ৪ ঘণ্টা, সেই জায়গায় এখন পরীক্ষা হয় সর্বমোট ১ ঘণ্টা ৫৮ মিনিটের কিন্তু পূর্ণমান আগের মতোই ৩৪০ রয়েছে। 

ভাষাগত বিশ্লেষণ (Verbal Reasoning): ভাষাগত বিশ্লেষণ দুই ভাগে সর্বমোট ২৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। প্রথম ভাগে ১২টি প্রশ্ন আসবে যার জন্য বরাদ্দ থাকবে ১৮ মিনিট। কম্পিউটারে একটি টাইমারের মাধ্যমে সময় দেখা যাবে এবং সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই উত্তর দেয়ার সুযোগ শেষ হয়ে যাবে এবং আপনি আর কোনো কিছু যাচাই করার সুযোগ পাবেন না, কিন্তু আপনি চাইলে আপনার সময়ের মধ্যে উত্তর যাচাই করতে পারবেন। দ্বিতীয় ভাগে ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, যার জন্য বরাদ্দ সময় ২৩ মিনিট এবং সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্য ভাগে নিয়ে যাবে অথবা পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। Reading Passages, MCQ, Double MCQ এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়ে থাকে। 

গাণিতিক দক্ষতা (Quantitative Reasoning): গাণিতিক দক্ষতায়ও দুই ভাগে সর্বমোট ২৭টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। এ ভাগেও ভাষাগত বিশ্লেষণের মতোই প্রথম ভাগে ১২টি প্রশ্ন আসবে, যার জন্য বরাদ্দ থাকবে ২১ মিনিট এবং দ্বিতীয় ভাগে ১৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, যার জন্য বরাদ্দ সময় ২৬ মিনিট এবং সময়ের মধ্যেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। 

গাণিতিক দক্ষতা ভাগে সাধারণত MCQ, Double MCQ, Numeric Entry এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়ে থাকে। গাণিতিক দক্ষতায় সাধারণত পাটিগণিত, বীজগণিত, জ্যামিতি ও পরিসংখ্যানের বিভিন্ন বিষয় থেকে প্রশ্ন করা হয়। ইংরেজি ভাষাগত বিশ্লেষণ ও গাণিতিক দক্ষতার চারটি ভাগের মধ্যে এলোমেলোভাবে যেকোনো ভাগের প্রশ্ন আগে আসতে পারে। নির্দিষ্ট কোনো ক্রমানুসারে আসবে না। 

লৈখিক যোগ্যতা (Analytical Writing): পরীক্ষার শুরুতেই আপনাকে ইংরেজিতে একটি রচনা লিখতে হবে, যার জন্য সময় পাবেন ৩০ মিনিট। এই ভাগে প্রদত্ত বিষয়ের ওপর আপনাকে ৩০ মিনিটের মধ্যে একটি বিস্তারিত রচনা লিখতে হবে। 

স্কোর বা মার্কিংয়ের পদ্ধতি: Analytical Writing-এ মার্কিং করা হয় ৬ স্কোরে। Verbal Reasoning I Quantitative Reasoning-এর উভয় ভাগের জন্য ১৭০ করে মোট ৩৪০ মার্কের পরীক্ষা হয়ে থাকে। মূল মার্কিং করা হয় মূলত ৮০ মার্কসের মধ্যে অর্থাৎ কেউ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যদি কোনো প্রশ্নেরই সঠিক উত্তর দিতে না পারেন তাহলেও তিনি ২৬০ মার্কস পাবেন, তবে এই ২৬০ মার্কস মানে শূন্য। Verbal Reasoning I Quantitative Reasoning-এর প্রতিটি ভাগে ১৫৫ করে একত্রে ৩১০-এর বেশি মার্কসের ফলাফলকে আদর্শ একটি ফলাফল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয় ৩০০ মার্কসকেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য উপযুক্ত মনে করে। সেজন্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।

জহিরুল আলম: সাবেক শিক্ষার্থী

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন