তিন স্থলবন্দর দিয়ে দেশে এল ৪৬৮ টন পেঁয়াজ

বণিক বার্তা ডেস্ক

টানা ৮১ দিন বন্ধ থাকার পর আবারো ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ৩৩০ টন, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে তিন ট্রাকে করে ৭৫ ও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে আরো ৬৩ টন পেঁয়াজ। এদিকে আমদানির খবরে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যটির দাম কমেছে কেজিতে ১২-২০ টাকা পর্যন্ত। একদিন আগেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮০-৯০ টাকায়। 

জানা গেছে, ঢাকার আমদানিকারক জারিফ ইন্টারন্যাশনাল বেনাপোল বন্দর দিয়ে গতকাল ৭৫ টন পেঁয়াজ আমদানি করেছে। বেনাপোল বন্দর থেকে সেগুলো ছাড়পত্রের কাজ করেছে রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামে একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট। জানতে চাইলে রয়েলের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের আমদানিকারকের ৭৫ টন পেঁয়াজ গতকাল বিকালে তিনটি ট্রাকে করে পৌঁছেছে। ওই পেঁয়াজের জন্য উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে সার্টিফিকেট নিতে আবেদন করা হয়েছে। কাস্টমস ও বন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ছাড় করে রাতেই ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে আর কোনো আমদানিকারকের পেঁয়াজ ওপারের বন্দরে (পেট্রাপোল) নেই। দু-একদিন গেলে কিছু এ বেনাপোল দিয়ে প্রবেশ করবে। অনেকে আবার কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামারবাড়িতে ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) জন্য আবেদন করেছেন। অনুমতি পেলে ব্যাংকে এলসি খুলবেন। তারপর পেঁয়াজ আসবে।’ 

চাষীদের উৎপাদিত পেঁয়াজের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করতে চলতি বছরের ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি নিষিদ্ধ করে সরকার। সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন চাষীসহ ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একশ্রেণীর ব্যবসায়ী অধিক মুনাফার লোভে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করতে থাকেন। হঠাৎ করে দাম বৃদ্ধির কারণে বিপাকে পড়ে নিম্ন আয়ের মানুষ। ৩০ টাকার পেঁয়াজ ভোক্তাকে কিনতে হয়েছে ৯০-১০০ টাকা কেজিতে। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারতে বিক্রি হচ্ছে ১০-১২ টাকায়। তাই আমদানি না করা পর্যন্ত দেশের বাজারে দাম কমার সম্ভাবনা নেই বলে সাধারণ ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা দাবি জানালে ব্যবস্থা নিতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ সোমবার থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি মেলে। 

বেনাপোল বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার সরকার বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির নির্দেশনা এসেছে। আইপি দেখালে আমরা এখান থেকে উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ সার্টিফিকেট ইস্যু করব। এরই মধ্যে রয়েল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তাদের আমদানিকারকের পক্ষে ৭৫ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রে আবেদন করেছে।’

বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, ‘তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে বেনাপোল দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। কৃষি মন্ত্রণালয় সোমবার থেকে নতুন করে অনুমতি দিয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল একটি চালান বন্দরে প্রবেশ করে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমরা ছাড় করেছি।’ 

নতুন করে আমদানির অনুমতি পাওয়ায় গতকাল সন্ধ্যায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক প্রবেশ করতে শুরু করে। এ পর্যন্ত হিলি দিয়ে তিনটি ট্রাকে করে ৬৩ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘ দুই মাস ২০ দিন বন্ধের পর আবারো হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আহরণের পাশাপাশি বন্দর কর্তৃপক্ষের দৈনন্দিন আয়ও বাড়ছে। সেই সঙ্গে বন্দরে কর্মরত শ্রমিকদের মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে।’ পেঁয়াজ যেহেতু কাঁচামাল তাই দ্রুত খালাস করা হয় সেজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা রেখেছে বলে জানান তিনি।   

হিলি স্থলবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী জানান, নয় আমদানিকারক ২০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। আইপি পেয়ে তারা এলসি খোলার মধ্য দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করেছেন।

ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকছুদ খান জানান, ভারতের বসিরহাটা মহকুমার ঘোজাডাঙ্গা স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বিকাল ৫টার পর পেঁয়াজভর্তি কয়েকটি ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দরে ঢুকেছে। এছাড়া ভারতের ওপাশে শতাধিক পেঁয়াজভর্তি ট্রাক অপেক্ষায় আছে। তারা কাগজপত্র প্রস্তুত করতে না পারায় গতকাল আমদানি করা সম্ভব হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন