দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধাণ করে গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে ১০টি আসনের সীমানা। বাকি ২৯০ আসনের সীমানায় কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। পরিবর্তন আনা বেশ কয়েকটি আসনে উপজেলা স্থানান্তর করা হয়েছে। কোথাও আবার একটি ইউনিয়ন যুক্ত করা হয়েছে অন্য সংসদীয় আসনে। এক আসনের ওয়ার্ড অন্য আসনে যুক্ত করার মতো সামান্য পরিবর্তনও আনা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট এবং সীমানার খসড়া পর্যালোচনা করে এ তথ্য জানা যায়।
সবশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেএম নুরুল হুদা কমিশন ২৫টি আসনের সীমানায় পরিবর্তন এনে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করেছিল। ১৯৮৪ ও ১৯৯১ সালের পর নবম সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ব্যাপক উদ্যোগ নিয়ে শতাধিক সংসদীয় আসনের সীমানায় পরিবর্তন আনে। পরে কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ কমিশন দশম সংসদ নির্বাচনে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন আনে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশন আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ফেব্রুয়ারিতে ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ খসড়া আকারে প্রকাশ করে। সেই খসড়ার ওপর স্থানীয় জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি–আপত্তি জানানোর সময় দেয়া হয়েছিল। পরে ৩৮টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে ১৮৬টি আবেদন জমা পড়ে। এর মধ্যে সীমানার আপত্তি নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৮৩টি আবেদন জমা পড়ে কুমিল্লা অঞ্চল থেকে। রাজশাহী থেকে ৪৪টি, বরিশাল থেকে ২৯টি, ঢাকা অঞ্চল থেকে ১৮টি আবেদন জমা পড়ে। এছাড়া খুলনা ও ফরিদপুর অঞ্চল থেকে পাঁচটি করে আবেদন পড়ে। এসব দাবি–আপত্তি নিয়ে কয়েক ধাপে শুনানি শেষ করে ইসি। ১ জুন প্রজ্ঞাপনে সই করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। সেটি গতকাল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
সীমানায় পরিবর্তন আনা আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজীপুর-২ ও গাজীপুর-৫; কুমিল্লা-১ ও কুমিল্লা-২; নোয়াখালী-১ ও নোয়াখালী-২; ফরিদপুর-২ ও ফরিদপুর-৪ এবং পিরোজপুর-১ ও পিরোজপুর-২। এর মধ্যে পিরোজপুর-১ ও ২, কুমিল্লা-১ ও ২ এবং ফরিদপুর-২ ও ৪ আসনে বড় পরিবর্তন এসেছে। অন্য চারটিতে আনা হয়েছে সামান্য পরিবর্তন। বাকি ২৯০টি আসনের সীমানা অপরিবর্তিত রয়েছে।
পিরোজপুর সদর, নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল পিরোজপুর-১ আসন। এ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে নেছারাবাদ উপজেলা বাদ দিয়ে ইন্দুরকানী উপজেলা যুক্ত করা হয়েছে। ইন্দুরকানী উপজেলা আগে পিরোজপুর-২ আসনের অংশ ছিল। আর নেছারাবাদ উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পিরোজপুর-২ সংসদীয় আসনে।
দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়া গঠিত কুমিল্লা-১ সংসদীয় আসন থেকে মেঘনা উপজেলা বাদ দেয়া হয়েছে। অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তিতাস উপজেলাকে। অর্থাৎ তিতাস ও দাউদকান্দি নিয়ে গঠন করা হয়েছে কুমিল্লা-১ আসন। হোমনা ও তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত কুমিল্লা-২ আসন থেকে তিতাস উপজেলা বাদ দিয়ে যুক্ত করা হয়েছে মেঘনা উপজেলাকে। এর ফলে হোমনা ও মেঘনা নিয়ে গঠিত হয়েছে কুমিল্লা-২।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড আগে গাজীপুর-৫ সংসদীয় আসনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। ওয়ার্ডটি এখন গাজীপুর-২ সংসদীয় আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ফরিদপুর-২ আসন থেকে সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া কৃষ্ণপুর যুক্ত হয়েছে ফরিদপুর-৪ আসনের সঙ্গে। সেনবাগ উপজেলা ও সোনাইমুড়ী উপজেলার বারগাঁও, নাটেশ্বর ও আম্বরনগর নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-২ সংসদীয় আসন। এ তিন ইউনিয়ন ছাড়াও এবার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা ইউনিয়নকে এ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বজরা ইউনিয়নটি আগে নোয়াখালী-১ আসনের সঙ্গে যুক্ত ছিল।
এদিকে সাতটি আসনের সীমানা পরিবর্তন না হলেও প্রশাসনিক কারণে পুনর্বিন্যাস হয়েছে। এসব আসন হচ্ছে ময়মনসিংহ-৪, মাদারীপুর-৩, সুনামগঞ্জ-১, সুনামগঞ্জ-৩, সিলেট-১, সিলেট-৩ ও কক্সবাজার-৩ আসন।
