বাংলাভাষী নির্মাতাদের জন্য সত্যজিৎ রায় আদর্শ

দেশের গুণী অভিনেতাদের একজন আহমেদ রেজা রুবেল। তিনি বিনোদন দুনিয়ায় আহমেদ রুবেল নামেই পরিচিত। ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে অভিনয়জীবন শুরু হয় তার। এরপর নাটক, সিনেমা ও ডিজিটালমাধ্যমে সমান তালে কাজ করেছেন। কর্মময় জীবন আর ভাবনা নিয়ে বণিক বার্তার সঙ্গে কথা বলেছেন রুবেল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাবিহা জামান শশী

ছোটবেলায় রাজনীতি করার ইচ্ছে থাকলেও সেটায় নিয়মিত হননি। ‘‌চিরঞ্জীব মুজিব’ সিনেমায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ অভিজ্ঞতা কেমন ছিল? 

ছাত্র অবস্থায় আমি ৯০ সাল পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলাম। অভিনয়ের জন্য রাজনীতি ছাড়লেও রাজনীতি সচেতনতা এখনো আছে। আমি যখন ‘‌চিরঞ্জীব মুজিব’ সিনেমায় অভিনয় করেছি, তখন সে অভিজ্ঞতা আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। অনেক বিষয় আমি আগে থেকেই জানতাম বিধায় পর্দায় তা তুলে ধরাটা সহজ ছিল। 

প্রিয় সত্যজিৎ সিনেমাটিতে একজন চলচ্চিত্র নির্মাতার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এটা নিয়ে জানতে চাই। 

সিনেমাটা একটু ভিন্নভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত একটি ট্রিবিউট ফিল্ম। বাংলাভাষী যারা সিনেমা নির্মাণ করেন, তাদের জন্য তিনি আদর্শ হিসেবে কাজ করেন। এটা কেবল এখন নয়, এখন থেকে ৫০ বছর আগেও যারা সিনেমা নির্মাণ করেছেন, তাদের জন্যও তিনিই আদর্শ। তার সিনেমার চরিত্রগুলো বা গল্প বলার কৌশল সব আদর্শ হিসেবে কাজ করে। তিনি কোথা থেকে এ আইডিওলজি পেয়েছেন, তার স্কুলিং কী, তার ভাবনা কী, তিনি যে গল্পগুলো বেছে নিতেন এসব নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ভাবনা থাকে। সত্যজিৎ রায় তার সিনেমা নির্মাণের যে আদর্শ দেখিয়েছেন, সেটাই পরবর্তী সময়ে অনেক চলচ্চিত্র নির্মাতা তাদের সিনেমায় তুলে ধরেছেন এবং তাকে অনুসরণ করেছেন। এভাবে অনেকে সফলও হয়েছেন। মূলত এ ভাবনা নিয়েই সিনেমাটি। একজন প্রবীণ চলচ্চিত্র নির্মাতা তার যৌবনে সত্যজিৎ রায়কে অনুসরণ করে যে সিনেমা নির্মাণ করতেন এবং পরের প্রজন্মের একজন নির্মাতা, তিনিও সত্যজিৎ রায়কে অনুসরণ করছেন। এসব নিয়েই এ সিনেমা। এখানে বাংলাদেশ, বাংলাভাষী মানুষ এমনকি রবীন্দ্রনাথের কথাও রয়েছে। আমার ভালো লেগেছে এ সিনেমায় কাজ করে। দেখা যাক দর্শকরা কতখানি উপভোগ করে। 

ঢাকা থিয়েটারে অভিনয় করার সময় হুমায়ূন ফরীদির সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে আপনার, এটা নিয়ে শুনতে চাই। 

আমাদের ঢাকা থিয়েটারে পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়, আফজাল হোসেন, সুবর্ণা মোস্তফা, জহির উদ্দিন পিয়ার, হুমায়ূন ফরীদি এদের সঙ্গে কাজ করেছি। এছাড়া সেলিম আল দীন আর নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু তো ছিলেনই। তাদের সঙ্গে আমার লম্বা সময় কেটেছে, এটা আমার জন্য বিরাট প্রাপ্তি। আমি কাছ থেকে তাদের দেখতে পেরেছি এবং তাদের সঙ্গে নাটক করেছি, এটা আলাদা পাওয়া। বিভিন্ন প্রডাকশন করার সময় তাদের একেক জনের সংস্পর্শ পেয়েছি। ঢাকা থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার পরই আমি ফরীদি ভাইকে পেয়েছি। থিয়েটারের যে কাজগুলো হয়, তা অনেকটা ক্লাসের মতো। এখানে নিয়মিত উপস্থিত থাকার বিষয় রয়েছে। এ সময় ওনারা থাকতেন, তাদের সাহচর্যে থাকার কারণেই আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এটা একটা বিরাট অভিজ্ঞতা। অনেক কিছু শিখেছি তাদের কাছ থেকে। ফরীদি ভাইয়ের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল প্রডাকশনের কারণে। তিনি আমাদের অভিনয়ের বিভিন্ন টিপস দিতেন, যেগুলো অনেক কাজে আসত। অভিনয় করতে গেলে বিভিন্ন বিষয় জানতে হয়। তার এ গাইডলাইনগুলো আমাদের সাহায্য করত। ফরীদি ভাই একজন ভালো মানুষ ছিলেন, আমি তার সঙ্গে অনেক সময় কাটিয়েছি, একসঙ্গে আড্ডা দিয়েছি। তার সঙ্গে যেহেতু আমার সখ্য ছিল, সেটা একটা বিরাট বিষয় আমার কাছে। 

আপনি নিজে একজন বড় তারকা এবং অনেক বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। এখন কি বর্তমান সময়ের তারকাদের ভেতর ওই আন্তরিকতা পান? 

আমি বড় মাপের তারকা কিনা জানি না। তবে অনেক বড় মাপের তারকাদের সঙ্গে কাজ করেছি, আমি তাদের গুরু মনে করি। আর নতুনদের সঙ্গে কাজ করা নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে একটা পরিবর্তন তো এসেছে। অনেকেই খুব ভালো করছে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে শিল্পীদের মধ্যে যে শেয়ারিংয়ের সম্পর্ক, সেটা আগের মতো নেই। একটা চরিত্রের ভেতর ঢুকতে কেবল অনুশীলন বা অভিনয় করলেই হয় না, একজনের সঙ্গে অন্যজনের জানাশোনা খবর রাখাটা দরকার। নতুনদের ভেতর অনেকেই ভালো করছে। তবে কাজ করতে গেলে নিজেদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা থাকাও জরুরি। তাহলে নবীন প্রবীণ দুপক্ষের জন্যই ভালো হয়।

সামনে আপনার কোনো কাজ আসতে যাচ্ছে? 

চিরঞ্জীব মুজিব সিনেমাটি তো ঢাকা আর বিভাগীয় শহরে ওইভাবে মুক্তি পায়নি, তাই সেটা তো আসবেই। এছাড়া নুরুল আলম আতিকের ‘‌ পেয়ারার সুবাতাস’ সিনেমাটি আসবে। অনুদানের একটি সিনেমা আছে ‘‌ সোনার পাহাড়’, সেটিও। এছাড়া কিছু ওয়েব সিরিজে অভিনয় করছি। 

আমাদের দেশের বিনোদন দুনিয়ায় ওটিটির ভূমিকা কেমন? 

আসলে খারাপ-ভালো কাজের ওপর নির্ভর করে। নাটক তো ভালোই ছিল, পরে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। নাটকের সীমাবদ্ধতা নিয়ে বিভিন্ন বিষয় বলা হতো। এর মধ্যে ছিল নাটকের বাজেট কম, অনেক বিষয় দেখানো যায় না, মূল বিষয় তুলে ধরতে পারছে না ইত্যাদি। ওটিটিতে উন্মুক্ত কিছু বিষয় রয়েছে। একটা সুযোগ এসেছে। এটায় বাজেট আছে ভালো গল্প তুলে ধরার মতো। বিশ্বব্যাপী মানুষ এটা দেখতে পারছে। এসব যদি কেউ ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে, তাহলে ওটিটি অবশ্যই একটি ভালো সুযোগ। আর যদি কেউ সেটা না করে এলোমেলো করে ফেলে, তাহলে নিঃসন্দেহে এটাও খারাপ হবে। আমি ওটিটিকে নিয়ে যেটা ভাবি, এখন ভালো কিছু করার সুযোগ এসেছে। যে সুযোগটা নাটকের মধ্যে ছিল, সেটা এখন ভেঙে গিয়েছে। আমি ওটিটি নিয়ে সম্ভাবনা দেখি। 

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন