বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

ভিসি ট্রেজারারের বিদেশ যেতে ইউজিসির অনুমোদন লাগবে

সাইফ সুজন

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারদের বিদেশ যাওয়ার আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন নিতে হবে। একইভাবে বিদেশ থেকে ফেরার পর কাজে যোগ দিয়ে কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে। সম্প্রতি কমিশনের জারি করা এক কার্যালয় স্মারকে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্মারকটি এরই মধ্যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজিস্ট্রারকে পাঠানো হয়েছে।

ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুখ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট সবার অবগতি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে, সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ট্রেজারারের বিদেশ গমনের জন্য ইউজিসির পূর্বানুমোদন নিতে হবে এবং বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তনের পর কর্মে যোগদানের বিষয়টি কমিশনকে লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

দেশের পাবলিক বেসরকারিসব বিশ্ববিদ্যালয়েরই উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারার নিয়োগ দেন আচার্য বা রাষ্ট্রপতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে আচার্যের সাচিবিক দায়িত্ব পালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে কারণে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারার নিয়োগের আদেশ মন্ত্রণালয়টির মাধ্যমিক উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে জারি করা হয়। বিদেশ যাওয়ার আগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারাররা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি অফিস আদেশ (জিও) নেন। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে জিও নেয়ার বাধ্যবাধকতা নেই। তাদের নিয়োগের আদেশেও ধরনের কোনো নির্দেশনা নেই।

এমন পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসির নতুন নির্দেশনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিদের মধ্যে। প্রসঙ্গে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ট্রেজারারের সঙ্গে কথা হয় বণিক বার্তার। তাদের কেউই নাম উদ্ধৃত করে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা বলছেন, যেহেতু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারের নিয়োগ আচার্য কর্তৃক দেয়া হয়, তাই তাদের বিদেশ গমনে অনুমোদন লাগবে কিনা সে নির্দেশনাও সেখান থেকে আসা প্রয়োজন। একজন উপাচার্যের ভাষ্য ছিল এমন—‘ইউজিসি কোন আইনবলে নির্দেশনা দিল, সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। কমিশন যদি ধরনের কোনো নির্দেশনার প্রয়োজনবোধ করত, তাহলে সেটি আচার্যের কার্যালয়ে সুপারিশ পাঠাতে পারত। আমরা কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়সব প্রতিষ্ঠানকেই সম্মান করি। তাদের আইনসম্মত নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ করি। তবে আচার্য কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারদের বিদেশ গমনের অনুমতি ফেরার পর অবহিতকরণ বিষয়ে ইউজিসি প্রদত্ত নির্দেশনা আমাদের জন্য অসম্মানজনক।

তবে কমিশন সূত্রে জানা যায়, বিদেশে অবস্থানরত সেখানে পূর্ণকালীন চাকরি করছেন এমন অনেক ব্যক্তিকে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নামেমাত্র নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যারা মাঝেমধ্যে দেশে এসে মন্ত্রণালয় কমিশনে দেখাসাক্ষাৎ করে কিংবা সমাবর্তনে যোগ দিয়ে পুনরায় বিদেশে চলে যান। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা প্রশাসনিক কার্যক্রমে কোনো ধরনের অবদান রাখছেন না তারা। ধরনের বিভিন্ন ঘটনা সামনে আসায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারদের বিদেশ গমন বিষয়ে এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে আইনে দেয়া ক্ষমতাবলেই এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক . বিশ্বজিৎ চন্দ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে কমিশন সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় বিদেশে অবস্থানরত সেখানে পূর্ণকালীন চাকরিরত ব্যক্তিকে এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। যাদের কারো কারো সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্বও রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধরনের অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছে। তাই কমিশন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদস্থ এসব ব্যক্তির বিদেশ গমনের বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে এমন নির্দেশনা দিয়েছে। আইন অনুযায়ী উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে এমন নির্দেশনার এখতিয়ার কমিশনের রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন