অর্থমন্ত্রণালয়ের পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য

নির্দেশনা সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে বেসরকারি ব্যাংকের শাখা মাত্র ৩৭%

মেসবাহুল হক

শহর গ্রামাঞ্চলে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। তা সত্ত্বেও গ্রামাঞ্চলে শাখা স্থাপনে পিছিয়ে রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো। যেখানে সরকারি ব্যাংকগুলোর মোট শাখার ৬১ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে, সেখানে বেসরকারি ব্যাংকের শাখা মাত্র ৩৭ শতাংশ। এদিকে গ্রামাঞ্চলে একটি শাখাও নেই বিদেশী ব্যাংকগুলোর। তবে বেসরকারি খাতের ব্যাংকাররা বলছেন, শাখা স্থাপন ব্যয় বেশি হওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে এজেন্ট ব্যাংকিং উপশাখার মাধ্যমে সেবা দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে -সংক্রান্ত একটি বিবরণী অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, দেশে ২০০৬ সালে শহরাঞ্চলে চারটি শাখার বিপরীতে গ্রামাঞ্চলে একটি করে শাখা খোলার নির্দেশনা ছিল। পরবর্তী সময়ে শহরে দুটির বিপরীতে গ্রামে একটি শাখা খুলতে বলা হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দেশনা দেয়, শহরে একটি শাখা খোলা হলে গ্রামেও একটি খুলতে হবে। পাশাপাশি বিভাগীয়, জেলা শহরসহ সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত শাখাকেও শহর শাখা হিসেবে গণ্য করা শুরু হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই বিবরণীতে দেখা গেছে, চলতি বছরের মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মোট শাখা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৯৪২টি। এর মধ্যে শহরে রয়েছে হাজার ৬২৬ এবং গ্রামে হাজার ৩১৬টি শাখা। অর্থাৎ শহরের তুলনায় গ্রামে ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ৩১০টি কম। গত বছরের নভেম্বর নাগাদ সব ব্যাংকের মোট শাখা ছিল ১০ হাজার ৮০৩টি। তার মধ্যে গ্রামাঞ্চলে শাখার সংখ্যা হাজার ২৪২ এবং শহরাঞ্চলে হাজার ৫৬১টি। সে হিসেবে চার মাসে ব্যাংক শাখা বেড়েছে ১৩৯টি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিবরণীতে দেখা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মোট শাখা হাজার ৮১২টি। এর মধ্যে গ্রামে হাজার ৪৬ এবং শহরে হাজার ৭৬৬টি। চলতি বছরের মার্চের শেষ সময়ে সর্বোচ্চ হাজার ২২৭ শাখা দাঁড়ায় সোনালী ব্যাংকের। এর মধ্যে শহরে ৫১৪ গ্রামে ৭১৩টি। এর পরই সবচেয়ে বেশি শাখা রয়েছে বিশেষায়িত খাতের বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ব্যাংকটির শাখার সংখ্যা হাজার ৩৮টি। এর মধ্যে শহরে ১৭৬ এবং গ্রামে ৮৬২টি। জনতা ব্যাংকের ৯১৫টি শাখার মধ্যে শহরে ৪১৯ এবং গ্রামে ৪৯৬টি। অগ্রণী ব্যাংকের ৯৬২টি শাখার মধ্যে শহরে ৪৫৪ এবং গ্রামে ৫০৮টি। রূপালী ব্যাংকের ৫৮৬টি শাখার মধ্যে শহরে ২৮৮ এবং গ্রামে ২৯৮টি। বেসিক ব্যাংকের ৭২টি শাখার মধ্যে শহরে ৫৮ এবং গ্রামে ১৪টি এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল) ৫০টি শাখার মধ্যে শহরে ৩৩ এবং গ্রামে ১৭টি।

এদিকে সরকারের বিশেষায়িত খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩৮৩টি শাখার মধ্যে শহরে ৫০ এবং গ্রামে ৩৩৩টি। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ৯১টি শাখার মধ্যে শহরে ৬৭ এবং গ্রামে রয়েছে ২৪টি শাখা। সরকারের বাণিজ্যিক বিশেষায়িত নয় ব্যাংকের মোট হাজার ৩২৪টি শাখার মধ্যে গ্রামে রয়েছে হাজার ২৬৫ এবং শহরে রয়েছে হাজার ৫৯টি। সে হিসেবে গ্রামে শাখার হার শতকরা ৬১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী মার্চ শেষে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মোট শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে হাজার ৫৫৩টি। এর মধ্যে শহরে হাজার ৫০২ এবং গ্রামে হাজার ৫১টি। সে হিসেবে গ্রামে শাখার হার ৩৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এছাড়া বিদেশী মালিকানাধীন নয় ব্যাংকের মোট শাখা ৬৫টি। শাখাগুলো সবই শহরকেন্দ্রিক।

বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শাখা পূবালী ব্যাংকের। সারা দেশে ব্যাংকটির ৪৯০টি শাখার মধ্যে শহরে ২৮৮ এবং গ্রামে ২০২টি। এর পরই ইসলামী ব্যাংকের ৩৮৪টি শাখার মধ্যে শহরে ২৩৭ এবং গ্রামে ১৪৭টি। এছাড়া অন্যান্য বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে উত্তরা ব্যাংকের শহরে ১৭৩ এবং গ্রামে ৭০টি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ১৫০টি শহরে এবং গ্রামে ৭০টি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ১১৪টি শহরে এবং ৮৭টি গ্রামে, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১১৯টি শহরে এবং ৭৭টি গ্রামে, ইউসিবি ব্যাংকের শহরে ১৫৬ এবং গ্রামে ৫৯টি, ন্যাশনাল ব্যাংকের শহরে ১৫৭ এবং গ্রামে ৬২টি, দ্য সিটি ব্যাংকের শহরে ১০৬ এবং গ্রামে ২৬টি, ব্র্যাক ব্যাংকের ১৩৩টি শহরে এবং ৩৪টি গ্রামে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী শহরে একটি শাখা খোলা হলে গ্রামেও একটি শাখা খুলতে হবে। ব্যাংকগুলোকে নীতিমালা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। যদি কোনো ব্যাংক শহরে শাখা খোলার পরও গ্রামে শাখা না খোলে, তাহলে সেই ব্যাংককে পরবর্তী সময়ে শহরে আর শাখা খুলতে দেয়া হবে না।

প্রসঙ্গে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সেলিম আর এফ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের একটি শাখায় যে পরিমাণ ব্যয় হয়, তাতে করে গ্রামে শাখা খোলা হলে সেগুলো লস করে। এজন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলো গ্রামে শাখা খুলতে আগ্রহী হয় না। তবে এজেন্ট ব্যাংকিং উপশাখার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা দেয়া হচ্ছে। শাখার সব ধরনের সেবা এজেন্ট ব্যাংকিং উপশাখার মাধ্যমে দেয়া সম্ভব বলেও জানান তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন