ব্যাংক কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাংক কর্মীদের সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেল কর্মকর্তাদের সর্বনিম্ন বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা। তবে শিক্ষানবিশকাল শেষে কর্মকর্তাদের ন্যূনতম ৩৯ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দিতে হবে। পাশাপাশি নিরাপত্তা কর্মী, বার্তাবাহক, পরিচ্ছন্নতা কর্মীসহ অন্যদের সর্বনিম্ন বেতন নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কর্মচারীদের প্রারম্ভিক বেতন-ভাতা হবে সর্বনিম্ন ২৪ হাজার টাকা।

একই সঙ্গে ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুতি পদোন্নতির বিষয়েও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি নীতি বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের মার্চ থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। দেশের ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা, সুশাসন যথাযথ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতের জন্য নির্দেশনাটি দেয়া হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ব্যাংকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের একনিষ্ঠতা, নৈতিকতা, মনোবল কর্মস্পৃহা অটুট রাখার জন্য তাদের যথাযথ বেতন-ভাতা প্রদান আবশ্যক। কিন্তু সম্প্রতি লক্ষ করা যাচ্ছে, কিছু ব্যাংকে এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা যথাযথভাবে নির্ধারণ না করে ইচ্ছামাফিক নির্ধারণ করা হচ্ছে। এটি একই ব্যাংকের অন্যান্য উচ্চ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তাদের বিদ্যমান বেতন-ভাতাদির তুলনায় খুবই কম। উচ্চ নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার মধ্যে এত অস্বাভাবিক ব্যবধান কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

কোনো কোনো ব্যাংকে একই পদে নিয়োজিত

কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভিন্ন বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে বলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে বিভিন্ন ব্যাংকে বেতন-ভাতার ভিন্নতার কারণে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে নিজ প্রতিষ্ঠান মনে করে একনিষ্ঠ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে ব্যাংকের কাজে মনোযোগী হওয়ার মনোভাব গড়ে ওঠে না। ফলে অদক্ষতা, অসম প্রতিযোগিতা নৈতিক অবক্ষয়সহ বিভিন্ন ধরনের জটিলতার উদ্ভব হচ্ছে। এটি সুষ্ঠু মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা সুশাসনের ক্ষেত্রে অন্তরায় ব্যাংক-কোম্পানির জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বনিম্ন বেতন-ভাতা নির্ধারণ করে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার, ট্রেইনি অ্যাসিস্ট্যান্ট ক্যাশ অফিসার অথবা সমপর্যায়ের কর্মকর্তা, যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, ব্যাংকের এন্ট্রি লেভেলে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের শিক্ষানবিশকালে ন্যূনতম বেতন-ভাতা হবে ২৮ হাজার টাকা।

শিক্ষানবিশকাল শেষে এন্ট্রি লেভেলের কর্মকর্তাদের প্রারম্ভিক মূল বেতনসহ ন্যূনতম ৩৯ হাজার টাকা বেতন-ভাতা দিতে হবে। নতুন নির্ধারিত বেতন-ভাতা কার্যকর করার পর একই পদে আগে থেকে কর্মরত কর্মকর্তাদের বেতনভাতা আনুপাতিক হারে বাড়াতে হবে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অব্যবহিত নিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তার বেতন-ভাতার সঙ্গে ব্যাংকের সর্বনিম্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন-ভাতার পার্থক্য যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ করার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের জন্য আনুপাতিক হারে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে হবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা কোনো অবস্থাতেই বর্তমান বেতন-ভাতার চেয়ে কম হবে না। ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্রয়োজনীয়সংখ্যক ইনক্রিমেন্ট দিয়ে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া ব্যাংকের সার্ভিস রুলস অনুযায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অন্যান্য ভাতা সুযোগ-সুবিধা যথানিয়মে প্রাপ্য হবেন বলে প্রজ্ঞাপনে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ব্যাংক কর্তৃক নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ীকরণ বা বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির জন্য আমানত সংগ্রহের লক্ষ্য অর্জনের শর্ত আরোপ করা যাবে না। শুধু নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন করতে না পারা বা অদক্ষতার অজুহাতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের প্রাপ্য পদোন্নতি হতে বঞ্চিত করা যাবে না। একই অজুহাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুতও করা যাবে না বলে প্রজ্ঞাপনে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সুনির্দিষ্ট প্রমাণিত কোনো অভিযোগ না থাকলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরিচ্যুত করা বা পদত্যাগে বাধ্য করা যাবে না।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, মেসেঞ্জার, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, নিরাপত্তা কর্মী, অফিস সহায়ক অথবা সমজাতীয় পদে কিংবা সর্বনিম্ন যেকোনো পদে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের ন্যূনতম প্রারম্ভিক বেতন-ভাতা হবে ২৪ হাজার টাকা। ধরনের কর্মচারীদের কাজ যদি চুক্তিভিত্তিক, দৈনিক ভিত্তিতে, আউটসোর্সিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মচারীদের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়, সেক্ষেত্রে ব্যাংকের নিয়োগকৃত কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ধরনের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে হবে। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের পরবর্তী সভায় প্রজ্ঞাপনের নির্দেশনাগুলো উপস্থাপন করে ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তবে ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ব্যাংকিং সেবা প্রদানে নিয়োজিত বিভিন্ন আউটলেটে নিযুক্ত ব্যাংকের এজেন্ট বা এজেন্টের মাধ্যমে নিযুক্ত ব্যক্তিদের বেতন-ভাতা চুক্তি বা নিজ নিজ এজেন্ট কর্তৃক নির্ধারিত হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের বেতন কাঠামো সরকার কর্তৃক জারীকৃত জাতীয় বেতন স্কেলের আওতাভুক্ত বা অনুসরণে নির্ধারিত বিধায় ওই ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা প্রযোজ্য হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন