ঋণের বোঝা বেড়ে খাদের কিনারে শ্রীলংকা

বণিক বার্তা ডেস্ক

কভিড-১৯ মহামারী কঠোরভাবে আঘাত করেছে শ্রীলংকার টালমাটাল অর্থনীতিকে। কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হচ্ছে দেশটিকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে আদৌ দেশটি ঋণ পরিশোধ করতে পারবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি সপ্তাহেই দ্বীপরাষ্ট্রটির আন্তর্জাতিক সভরেন বন্ডের (আইএসবি) ৫০ কোটি ডলার পরিশোধ করার কথা। খবর নিক্কেই এশিয়া।

আইএসবি থেকে শ্রীলংকা ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নিয়েছিল। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঋণ পরিশোধে অপারগ হওয়া ঠেকাতে গেলে দেশটিকে পুরো ঋণই বছর পরিশোধ করতে হবে। তবে কেন শ্রীলংকা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছে তা জানতে গেলে একটু পেছনে ফিরে তাকাতে হবে।

২০০৭ সাল থেকে দেশটি ঋণের চক্রে জড়িয়ে পড়ে। আইএসবির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত হাজার ১৮০ কোটি ডলারের ঋণ জমা হয়েছে, যার সবচেয়ে বড় অংশ অর্থাৎ ৩৬ দশমিক শতাংশ হলো বাহ্যিক ঋণ। ১৪ দশমিক শতাংশ নিয়ে ঋণদানের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) সংস্থাটি ঋণ দিয়েছে ৪৬০ কোটি ডলার। এর পরেই রয়েছে জাপান চীন। দেশ দুটি ৩৫০ কোটি ডলার করে ঋণ দিয়েছে শ্রীলংকাকে। মোট ঋণে দেশ দুটির অংশ ১০ দশমিক ১০ দশমিক শতাংশ। বাকি ঋণগুলো এসেছে ভারত, বিশ্বব্যাংক, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ সংস্থার পক্ষ থেকে।

চীন শ্রীলংকার সবচেয়ে বড় দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা। বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অধীনে গত এক দশকে মহাসড়ক, বন্দর, বিমানবন্দর একটি কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিপুল পরিমাণ অর্থ শ্রীলংকাকে ঋণ হিসেবে দিয়েছে চীন। তবে সমালোচকরা বলছেন, এসব ঋণের বেশির ভাগ অর্থই স্বল্প রিটার্নসহ অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে চীন। এখন দেশের আর্থিক সংকট মোকাবেলায় ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থা পুনর্গঠন করতে চীনকে অনুরোধ করেছে শ্রীলংকা।

কেবল ঋণ পরিস্থিতি নিয়েই নয়। আরো নানা কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে শ্রীলংকা সরকার। মুহূর্তে তারা খুচরা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে লড়াই করছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। আবার জিডিপির রাজস্ব ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা পূরণেও লড়তে হচ্ছে শ্রীলংকাকে।

নভেম্বর থেকে মুডি, ফিচ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরসের মতো রেটিং এজেন্সিগুলো শ্রীলংকার বিষয়ে ঋণ খেলাপের উদ্বেগের সংকেত দিয়ে আসছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অজিত নিভার্দ কাবরাল বলেছিলেন, ২০২২ সালেই তার দেশ সব ঋণ পরিশোধে সমর্থ হবে। তবে সে বক্তব্যের কোনো প্রমাণ এখনো দেখা যায়নি।

পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, শ্রীলংকার এখন ঋণ পুনর্গঠন করা উচিত এবং তিন বছর মেয়াদি একটি ঋণ পরিশোধ কাঠামো তৈরি করা উচিত। এভাবে গোটা বিষয়টাকে কাঠামোবদ্ধ করা গেলে মূল্যবান ডলারের যেমন সাশ্রয় হবে, তেমনি দেশটির নাগরিকদের ওপর থেকে ঋণের বোঝা কমবে; যারা এরই মধ্যে গুঁড়ো দুধ, গ্যাস জ্বালানির মতো আমদানি পণ্যের ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।

রেটিং এজেন্সি ফিচ বলছে, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যংককে আরো ২৪০ কোটি ডলারের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি জ্বালানি, খাবার মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির জন্য দেশটির আরো হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন; যা মেটাতে নতুন পরিকল্পনা কৌশল হাতে নিতে হবে দেশটিকে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন