অর্থ পাচার প্রতিরোধ

শক্ত অবস্থানের আভাস আরব আমিরাতের, আস্থায় নিতে পারছে না অন্যরা

বণিক বার্তা ডেস্ক

উচ্চবিত্তদের অন্যতম গন্তব্য হয়ে উঠেছে দুবাই ছবি: দুবাই মেরিনা

এমিরেটস পরিচালিত একটি বীমা কোম্পানিকে এ বছরের শুরুর দিকে ১২ লাখ দিরহামের আর্থিক জরিমানা করেছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতের সেন্ট্রাল ব্যাংক (সিবিইউএই)। ২০১৮ সালের ফেডারেল আইন অনুযায়ী মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসবাদ ও অবৈধ সংস্থায় অর্থায়ন বন্ধের লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত বছরের আগস্টেও দেশটির একটি মানি এক্সচেঞ্জ হাউজকে ৪৮ লাখ দিরহাম জরিমানা করেছিল সিবিইউএই।

আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ ২০২২ ও ২০২৩ সালে মানি লন্ডারিংয়ের (টিবিএমএল) কয়েকশ প্রতিবেদন পেয়েছে, যেখানে অবৈধ তহবিলে অর্থের প্রবাহ গোপন করার জন্য জাল বাণিজ্য নথি ও নিষিদ্ধ চালান ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়েছিল। দেশটির আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট এ মাসের শুরুর দিকে ২০২৩ সালে টিবিএমএলের ৬১০টি বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিশ্বজুড়ে অর্থ ও অবৈধ পণ্য স্থানান্তরে জড়িত প্রতারকদের ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর ওপর একটি কৌশলগত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচার প্রতিরোধে এসব পদক্ষেপ আরব আমিরাত সরকারের শক্ত অবস্থানের আভাস দিয়েছে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে অপরাধ বিশ্লেষণভিত্তিক সংস্থা দ্য ফাইন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্সের (এফএটিএফ) ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে এ বছরই বের হয়েছে আরব আমিরাত। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকেও বের হওয়ার দ্বারপ্রান্তে গিয়ে শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আপত্তিতে আরব আমিরাত সফল হতে পারেনি। কারণ অর্থ পাচার প্রতিরোধে দেশটির নানা পদক্ষেপে এখনো আস্থা রাখতে পারছে না অনেক দেশ।

মানি লন্ডারিংসহ দুর্নীতিবাজ ধনকুবেরদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত আরব আমিরাতকে ২০২২ সালেই ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল এফএটিএফ ও ইইউ। প্যান্ডোরা পেপার্স থেকে শুরু করে গোল্ড মাফিয়ার তদন্তে অনেকবারই প্রকাশিত হয়েছে দুর্নীতিবাজ ও অর্থ পাচারকারীদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য প্রায়ই শিরোনামে এসেছে আরব আমিরাত। গত এপ্রিলের শুরুর দিকে ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) তদন্তে আবারো দুবাইকে আফ্রিকা থেকে চোরাচালান করা স্বর্ণ ও অবৈধ তহবিলের মূল গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০২২ সালের মার্চে এফএটিএফ আরব আমিরাতকে অর্থ পাচারবিরোধী কাঠামোয় বড় ধরনের দুর্বলতার কারণে তাদের গ্রে লিস্ট বা ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রেখেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় একই ধরনের পদক্ষেপ নেয় ইইউ। গত ফেব্রুয়ারিতে অর্থ পাচারের সমস্যা মোকাবেলায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির জন্য আরব আমিরাতকে প্রশংসিত করে গ্রে লিস্ট থেকে বাদ দেয় এফএটিএফ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ইউরোপিয়ান কমিশনও দেশটিকে ইইউর তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গত ২২ এপ্রিল ইইউর প্রস্তাবটি নাকচ করে জানিয়েছে, অর্থ পাচার প্রতিরোধে আরব আমিরাতকে এখনো অনেক পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি দেশটিতে বিদেশী পুঁজি স্থানান্তরের প্রক্রিয়া অন্যান্য দেশের আইনি কাঠামোর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ও স্বচ্ছ করতে হবে। 

ইইউ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের অবৈধ আর্থিক প্রবাহবিষয়ক জ্যেষ্ঠ পলিসি কর্মকর্তা রোল্যান্ড প্যাপ বলেছেন, ‘‌ইউরোপীয় পার্লামেন্ট মনে করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তৃতীয় দেশ হিসেবে তালিকা থেকে বাদ দেয়ার পদক্ষেপ এখনই নেয়া উচিৎ হবে না। কমিশনের উচিত দেশগুলোকে তাদের নিয়ম কঠোর করার জন্য চাপ দেয়া, আর্থিক অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আত্মতুষ্টিকে উৎসাহিত না করা।’

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন