২০২৪ সালের প্রথমার্ধ

সিঙ্গাপুরে দেউলিয়াত্বের আবেদন ও ঘোষণা বেড়েছে

বণিক বার্তা ডেস্ক

সিঙ্গাপুরে দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকেন ছবি: রয়টার্স

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম বাণিজ্য কেন্দ্র সিঙ্গাপুরে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থনৈতিক অস্বস্তি বাড়ছে। চলতি ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুনদেশটির আদালতে দেউলিয়াত্বের আবেদন নিষ্পত্তি দুটোই গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এর মধ্যে দেউলিয়াত্বের আবেদন বেড়েছে ২৫ শতাংশ। একই সঙ্গে তা নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ১১ শতাংশ। খবর দ্য স্ট্রেইটস টাইমস।

সিঙ্গাপুরের আইন মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্যানুসারে, জুনে শেষ হওয়া ছয় মাসে দেশটিতে হাজার ৩৩৪ জন দেউলিয়াত্বের আবেদন করেছেন, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি। সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ৫৯৪ জনকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

এছাড়া ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে হাজার ৯০৩টি আবেদনের আইনি প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ ছিল, যা ৩১ জানুয়ারির হাজার ৬৬৯টি আবেদনের চেয়ে দশমিক শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ব্যক্তি খাতে দেউলিয়াত্ব এড়াতে সরকার ঘোষিত ডেট রিপেমেন্ট স্কিমও (ডিআরএস) ঋণগ্রহীতাদের ততটা সাহায্য করতে পারছে না।

দেউলিয়াত্ব ব্যক্তির অর্থনৈতিক সামাজিক জীবনকে সীমিত করে দেয়। এসব ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে পেশাজীবনে ব্যর্থ বা অমিতব্যয়ী হিসেবে দেখা হয়। তারা চাকরি হারাতে পারেন বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজে নিয়োগ দিতে অপারগতা দেখা যায়। কারণেই দেউলিয়াত্ব অর্থনৈতিকভাবে শেষ অবলম্বন বিবেচিত হয়, যা সামগ্রিকভাবে দেনাদারের মানসিক স্বাস্থ্য বা পরিবারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

সিঙ্গাপুরে ঋণগ্রহীতা নিজে বা পাওনাদার উচ্চ আদালতে যেতে পারেন। অন্তত ১৫ হাজার ডলার অপরিশোধিত ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা আইন মন্ত্রণালয়ে ডিআরএস সহযোগিতা পেতে পারেন। তবে সাহায্য পাবেন কিনা তা নির্ধারণ করে আদালত। ডিআরএসের লক্ষ্য হলো ঋণগ্রহীতাকে দেউলিয়া হওয়া এড়াতে সাহায্য করা। অবশ্য ঋণগ্রহীতা সরাসরি স্কিমে যোগ দেয়ার আবেদন করতে পারেন না, যদি না পাওনাদার তার বিরুদ্ধে দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করেন।

সবসময় চাইলে যে ডিআরএসের অধীনে সাহায্য পাওয়া যাবে, এর নিশ্চয়তা নেই। সুবিধা পেতে কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। এর একটি হলো মোট ঋণের আকার দেড় লাখ ডলারের বেশি হতে পারবে না। আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ওই ব্যক্তিকে কোনো কাজে নিযুক্ত থাকতে হবে।

বিষয়ে ক্রেডিট কাউন্সেলিং সিঙ্গাপুরের (সিসিএস) জেনারেল ম্যানেজার ট্যান হুয়ে মিন জানান, ডিআরএসে মাসিক কিস্তিতে ঋণ পরিশোধ করতে হয়, তবে তা পাঁচ বছরের বেশি নয়। এর মাধ্যমে ঋণগ্রহীতারা যে পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেন তা সাধারণত প্রকৃত ঋণের চেয়ে কম। একবার কোনো ব্যক্তি ডিআরএসের অধীনে বাধ্যবাধকতা পূরণ করলে নতুনভাবে আর্থিক জীবন শুরু করতে পারেন।

ঋণগ্রহীতাকে পুরো টাকা পরিশোধ করতে না হলেও তারা যে বড় ধরনের ছাড় পাবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুরের আইন মন্ত্রণালয়। তবে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেয়ার নিয়ম রয়েছে। সুবিধা নিয়েও কোনো দেনাদার যদি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তবেই পাওনাদাররা দেউলিয়া ঘোষণার আবেদনসহ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে শুরুতেই ঋণগ্রহীতা ডিআরএসের অনুপযুক্ত বিবেচিত হন।

আইনি সেবাদাতা সংস্থা ইউয়েন সহযোগী পরিচালক ট্রিস জেভিয়ার জানান, একসময় দেউলিয়াত্ব থেকে মুক্তির কোনো স্পষ্ট সময়সীমা ছিল না সিঙ্গাপুরে। কখনো কখনো ২০-৩০ বছরও লেগে যেত। তবে ২০১৬ সালে আইনি সংস্কারের ব্যক্তির অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর বিবেচনা করে সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। এখন প্রথমবারের দেউলিয়াত্বের ক্ষেত্রে সময়সীমা তিন-সাত বছর, পরের বারে পাঁচ-নয় বছর। প্রথমবার কেউ লক্ষ্য পূরণ করলে পাঁচ বছর পর -সংক্রান্ত পাবলিক রেকর্ড থেকে নাম মুছে ফেলা হয়। কিন্তু যারা ব্যর্থ হন তাদের নাম স্থায়ীভাবে পাবলিক রেকর্ডে থেকে যায়।

ট্রিস জেভিয়ার বলেন, ‘দেউলিয়া হওয়াকে ঋণের ওপর ছাড় পাওয়ার উপায় হিসেবে বিবেচনা করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে আর্থিক পুনর্বাসনের কৌশল হিসেবে দেখা উচিত।

সিঙ্গাপুরে দেউলিয়া ব্যক্তিরা সম্পদ গোপন করতে পারেন না বা প্রতি মাসে অল্প অর্থ পরিশোধ করে পার পেয়ে যাবেন এমন নয়। তার যদি গাড়ি বা সম্পত্তি থাকে, তাহলে সেগুলো বিক্রি করে হলেও ঋণ পরিশোধ করতে হবে। দেউলিয়া আইন বিদেশে থাকা সম্পদও প্রযোজ্য, অর্থাৎ বিদেশের অ্যাকাউন্টে অর্থ লুকানো যাবে না। এমনকি পাওনাদারদের এড়াতে পরিবারের সদস্যদের কাছে সম্পদ হস্তান্তর বেআইনি। দেউলিয়া ব্যক্তিরা আরো বিধিনিষেধের শিকার হন। যেমন অনুমতি না নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করতে পারেন না তারা। ব্যবসা পরিচালনা করতে বা কোনো কোম্পানির পরিচালক হতে পারেন না।

ডিআরএস ছাড়া ক্রেডিট কাউন্সেলিং সিঙ্গাপুর পরিচালিত ঋণ ব্যবস্থাপনা প্রকল্প থেকে ঋণগ্রহীতারা সাহায্য পেতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ কম সুদের মতো সাশ্রয়ী শর্ত রয়েছে বলে জানান ট্যান হুয়ে মিন।

সিসিএসের প্রকল্প আইন মন্ত্রণালয়ে ডিআরএসের পার্থক্য হলো সিসিএসে ঋণগ্রহীতাকে পুরোপুরি ঋণ পরিশোধ করতে হয়। অন্যদিকে পরিশোধিত অর্থের পরিমাণ পাওনার চেয়ে কম। তবে সিসিএসের সহযোগিতার জন্য একজন দেনাদারকে দেউলিয়াত্বের আবেদন পর্যন্ত যেতে হয় না। আর ঋণ সম্পূর্ণরূপে পরিশোধ হয়ে গেলে ক্রেডিট ব্যুরো রেকর্ড থেকে ব্যক্তির ঋণের তথ্য মুছে ফেলা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন