দেশকে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়তে চাই: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশকে গড়তে চাই। উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনো অন্যায় থাকবে না, অবিচার থাকবে না, মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে; সেটাই আমি চাই।

গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস-২০২১-এর উদ্বোধনী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’— প্রতিপাদ্য নিয়ে গতকাল প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে দেশব্যাপী যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি উদযাপিত হয়েছে।

দিবসটি উদ্বোধন করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সামনে কেমন হবে তার জন্য পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের আগামী দিনের চলার পথে যেন আর কোনো হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি জাতির কাছে আহ্বানই জানাব যে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের নিরাপত্তা দেয়া, তাদের ভালোবাসা দেয়া, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনটা সার্থক, অর্থবহ করা এটাই যেন সবার আকাঙ্ক্ষা হয়। এটাই যেন কর্তব্য পালনকালে সবার আদর্শ হয়, সেটাই আমি চাই।

তিনি বলেন, একটি শিশুকে হত্যা মানেই লাখো-কোটি শিশুর জীবনে একটা আশঙ্কা তৈরি করা। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখেছি যে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী দেশে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাও কিন্তু শিশুদের রেহাই দেয়নি। ছোট্ট নবজাতক শিশুকেও তারা হত্যা করেছে। এমনকি মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করেছে। আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর। বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায়, ঠিক যেন পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল ওইভাবে, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর বারবার এসেছে ধরনের অত্যাচার। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবারো সেই একই ঘটনা। এরপর অগ্নি-সন্ত্রাস থেকে শুরু করে কতভাবে মানুষকে হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়েছে। শিশুরা পুড়ে মারা গিয়েছে। ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। কিন্তু আমরা তো রকম চাই না। আমরা চাই বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রতিটি শিশুর জীবন অর্থবহ হবে, সুন্দর হবে। এভাবে অকালে ঝরে যাবে সেটা আমরা চাই না। একটি ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগে অকালে ঝরে যাক এটা কারো আকাঙ্ক্ষা নয়। এটা কেউ চায় না। 

তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম বক্তব্য দেন। এছাড়া শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব এবং শিশু বক্তা আফসার জাফর সৃজিতা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে শাহাদতবরণকারী শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন এবং শেখ রাসেল দিবস-২০২১ উদযাপন উপলক্ষে শেখ রাসেল স্বর্ণপদকসহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই অনুষ্ঠান থেকে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুএই পাঁচ ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ভরি করে ১০টি শেখ রাসেল স্বর্ণপদক, ১০টি ল্যাপটপ সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। এছাড়া শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ এবং লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মাঝে চার হাজার ল্যাপটপ দেয়া হয়।

অনুষ্ঠানে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে সারা দেশে আয়োজিত ক্রীড়া সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ করা হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং স্টেডিয়াম প্রান্তে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রোলার স্কেটিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে শেখ রাসেলকে নিয়ে সংকলিত শেখ রাসেল: শৈশবে ঝরে যাওয়া ফুল শেখ রাসেল: দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন