গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন

তিন কোটি মানুষকে চরম দারিদ্র্যে ঠেলে দিয়েছে কভিড

বণিক বার্তা ডেস্ক

চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ছবি: এপি

কভিডের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে জারি করা হয় বিধিনিষেধ। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে স্থবির থাকে অর্থনীতি। সংকুচিত হয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়ের পথ। ব্যয় কমাতে কর্মী ছাঁটাইকে বেছে নেয় সংস্থাগুলো। চাকরি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে অনেক মানুষ। একসময়ের সচ্ছল পরিবারও ডুবে যায় চরম দারিদ্র্যে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চলমান কভিড-১৯ মহামারী কোটি ১০ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যে ঠেলে দিয়েছে। খবর সিএনবিসি।

সম্প্রতি প্রকাশিত গেটস ফাউন্ডেশনের পঞ্চম বার্ষিক গোলকিপার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মহামারীটি দারিদ্র্য বিমোচনের বৈশ্বিক অগ্রগতিকে চার বছর পেছনে ফেলে দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে টিকার প্রাপ্যতা, দারিদ্র্য হ্রাস অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বৈশ্বিক অগ্রগতিকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। মহামারীটি নিয়মিত শৈশব টিকাদানের হারকে আশঙ্কাজনকভাবে পিছিয়ে দিয়েছে এবং ধনী দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে শিক্ষার ব্যবধান স্বাস্থ্যগত বৈষম্য বাড়িয়ে দিয়েছে।

৬৩ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে গেটস ফাউন্ডেশন বলেছে, টিকা তৈরি, উৎপাদন জনস্বাস্থ্যের অবকাঠামো বাড়ানোর জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের দেশগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ দেশগুলোর অনেক মানুষ মহামারীটির খারাপ প্রভাব এড়াতে সক্ষম হয়নি।

গেটস ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী মার্ক সুজম্যান বলেন, কভিড বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য প্রচেষ্টাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বিপরীত দিকে পরিচালিত করেছে। সময়ে লাখ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার লক্ষ্য নেয়া হয়েছিল। পরিবর্তে মহামারীটি আরো কোটি ১০ লাখ মানুষকে চরম দারিদ্র্যে ঠেলে দিয়েছে। এছাড়া অন্যান্য সূচক যেমন শিশুদের বিকাশ পুষ্টি থেকে শুরু করে শিক্ষা খাতে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য কর্মকর্তা চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, মহামারীর অর্থনৈতিক প্রভাব আরো খারাপ হতে পারে। বিশ্বের অনেক অংশ কভিড-১৯ টিকাদান কার্যক্রমে পিছিয়ে থাকায় এবং নতুন ধরনগুলোর উদ্ভব আবারো প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে দিচ্ছে। এজন্য দেশগুলোর জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই গেছে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশগুলোয়।

গেটস ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন বলছে, গত দুই দশকে চরম দারিদ্রের মধ্যে বসবাসকারী বৈশ্বিক জনসংখ্যার শতকরা হার ৩৭ থেকে - নেমে এসেছে। প্রতিদিন ডলার ৯০ সেন্ট অর্থে জীবনযাপন করা লোকদের চরম দরিদ্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। দারিদ্র্য হ্রাসের প্রবণতা থমকে গেছে এবং কভিডের প্রভাব অব্যাহত থাকায় সামনের বছরগুলোতে হার উন্নত হবে না।

সুজম্যান বলেন, চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করা অধিকাংশ মানুষই নিম্ন আয়ের দেশগুলোর। কারণ দেশগুলো এখনো কভিডের টিকাদানের হার শতাংশের কাছাকাছি। আবার ব্যাপকভাবে টিকাদান করা বেশির ভাগ ধনী দেশগুলোর মাথাপিছু আয় বছর প্রাক-কভিড স্তরে ফিরবে। অন্যদিকে আগামী বছরও উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মাথাপিছু আয় ২০১৯ সালের স্তরের নিচে থাকবে।

মহামারীটি নারী-পুরুষের বৈষম্যকেও বিস্তৃত করেছে বলে জানান সুজম্যান। তিনি বলেন, মহামারীতে চাকরি হারানোদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা কোটি ৩০ লাখ বেশি। ধনী দরিদ্র প্রতিটি দেশেই পরিবারের সদস্যদের যত্নের ভার গিয়ে পড়েছে নারীদের ওপর।

অর্থনৈতিক প্রভাব ছাড়াও মহামারীটি আরো বেশি শিশুকে অসুস্থতা মৃত্যুর ঝুঁকিতে ফেলেছে। গত বছর ম্যালেরিয়ার মতো শৈশবে নিয়মিত টিকাদানের বৈশ্বিক হার শতাংশ কমেছে।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন