অনুস্বরের নতুন প্রযোজনা ‘মূল্য-অমূল্য’

দর্শকরা মঞ্চে নাটক দেখলে নাট্যকর্মীদের পরিশ্রম সার্থক

রাইসা জান্নাত

নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুুর্ভাব ঠেকাতে প্রায় সাত মাস বন্ধ ছিল বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। অবশেষে ২৩ অক্টোবর খুলে দেয়া হয়েছে শিল্পকলা একাডেমির সব মিলনায়তন। এর মধ্য দিয়ে আবারো সরব হয়ে উঠছে ঢাকার সাংস্কৃতিক অঙ্গন। দীর্ঘদিন পর নাট্যকর্মী দর্শনার্থীদের পদচারণায় যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে একাডেমির মঞ্চগুলো। শিল্পকলার দ্বার খুলে যাওয়ায় নাট্যসংগঠনগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে করোনার বিরতি শেষে নাটক প্রদর্শনীর। তালিকায় রয়েছে নাট্যদল অনুস্বর দলটি আগামী মাসে নিয়ে আসছে তাদের নতুন প্রযোজনা মূল্য-অমূল্য নাটক। আর্থার মিলারের দ্য প্রাইস অবলম্বনে নাটকটি লেখা হয়েছে। ভাবানুবাদ করেছেন অসীত মুখোপাধ্যায়। রূপান্তর নির্দেশনায় রয়েছেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা নির্দেশক . মোহাম্মদ বারী।

আর্থার মিলারের দ্য প্রাইস অবলম্বনে মূল্য-অমূল্য নাটকটিকে বাংলাদেশের সমাজ প্রেক্ষাপটে ব্যাখ্যা করেছেন মোহাম্মদ বারী। তার মতে, বর্তমানে উঠতি পুঁজিবাদের বিকাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পঞ্চাশের দশকে ইউরোপে যখন পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটে সে সময়ের গল্প এটি। নাটকের গল্পটি মূলত সম্পর্ক ভাঙার গল্প। সম্পর্ক একটি চিরকালীন ব্যাপার। পুঁজির বিকাশের ফলে অর্থের পেছনে ছোটাছুটি করতে গিয়ে মানুষ সম্পর্কগুলো নষ্ট করে ফেলছে। সম্পর্ক নষ্টের পেছনের কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সামাজিক কার্যকরণগুলোর যথেষ্ট প্রভাব বিদ্যমান। উঠতি পুঁজিবাদী সমাজে বিষয়গুলো বেশি ঘটতে দেখা যায়। আমাদের সমাজেও এগুলো প্রতিনিয়ত ঘটছে। আমরা ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। যৌথ পরিবারের ধারণা ভেঙে যাচ্ছে। পুরনো মূল্যবোধগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নতুন চিন্তাধারা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। পুরনো মূল্যবোধ নাকি আমাদের নতুন চিন্তাধারাকার মূল্য বেশি? এর যে সংকট সেটা নাটকে তুলে ধরা হয়েছে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়ে।


বর্তমানে নাটকটির মহড়া চলছে। অনেক আগেই এটি মঞ্চায়নের কথা ছিল। কিন্তু কভিডের প্রভাবে তা সম্ভব হয়নি। তখন অনুস্বরের নাট্যকর্মীরা অনলাইনে নাটকটির বিশ্লেষণ পাঠ, চরিত্র বিশ্লেষণ, চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাএগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করেন। নির্দেশকের মতে, থিয়েটার এমন একটি মাধ্যম, যেখানে নাট্যকর্মীদের জীবন্ত ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নাটক তৈরি হয়। এটা সরাসরি ফ্লোর মহড়া ছাড়া সম্ভব হয় না। তাই ১৫-২০ দিন আগে নাট্যকর্মীদের শারীরিক উপস্থিতিতে নাটকটির মহড়া শুরু হয়। পাশাপাশি অনলাইন মহড়াও চলমান। দলটির প্রত্যাশা আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তারা নাটকটি দর্শকদের সামনে নিয়ে আসতে পারবে।

মূল্য-অমূল্য নাটকে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করবেন প্রবীণ অভিনেতা আবুল হায়াত। খোদাবক্স নামে একজন নিলামদারের ভূমিকায় দেখা যাবে তাকে। এর পাশাপাশি নির্দেশক . মোহাম্মদ বারীও অভিনয় করবেন। এতে আরো যাদের দেখা যাবেপ্রশান্ত হালদার, মাহফুজ সুমন, ফরিদা লিমাকে। এদের বিপরীতে থাকবেন সাথী রঞ্জন দে, এসআর সম্পদ, মেরিনা মিতু, বানী।

একটা দীর্ঘ বিরতি শেষে মঞ্চে ফিরতে চলেছেন অনুস্বরের নাট্যকর্মীরা। নিশ্চয়ই ভালো লাগা কাজ করছে তাদের মধ্যে। বিষয়ে নির্দেশক মোহাম্মদ বারী বলেন, আমরা একটা বৈশ্বিক মহামারী সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। শারীরিক ক্ষতিগ্রস্ততার পাশাপাশি মানুষ মনস্তাত্ত্বিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। আমি মনে করি, মহামারীর সংকটের পর সমাজকে আবারো উজ্জীবিত করতে সাংস্কতিক কর্মকাণ্ড প্রয়োজন। আমরা খুব হাঁসফাঁস করছিলাম। আমরা থিয়েটারের মানুষ। আমরা থাকব মঞ্চে, মাঠে। এতদিন দম বন্ধ অবস্থায় ছিলাম। এখন সেখান থেকে মুক্তি মিলছে।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে দলের সদস্যরা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে শিল্পকলা একাডেমি বেশকিছু বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে হল খুলে দিয়েছে। সেগুলো মেনেই মঞ্চে যাওয়ার কথা জানানো হয় দলটির পক্ষ থেকে। করোনার মধ্যেই নতুন নাটক নিয়ে আসছে দলটি। তাই তাদের প্রত্যাশা দর্শকরা যেন প্রদর্শনীতে এসে নাটকটি উপভোগ করেন। দর্শকরা নাটকটি দেখলে তাদের পরিশ্রম সার্থক হবে বলে মনে করছেন তারা।

মূল্য-অমূল্য নাটকটির শিল্প পরিকল্পনায় শাহীনুর রহমান, মঞ্চ পরিকল্পনায় শাকিল সিদ্ধার্থ, আলোক পরিকল্পনায় অম্লান বিশ্বাস সংগীতে রয়েছেন রামিজ রাজু।

এই বিভাগের আরও খবর

আরও পড়ুন